ক্যাম্পাস

৮ বছর পর সচল বিচারকাজ, মামলা ঢাকায় স্থানান্তর

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যুবিপ্রবি) ছাত্র কাজী নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যা মামলার বিচারকাজ আট বছর পর সচল হয়েছে। বাদীপক্ষের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মামলাটি যশোর আদালত থেকে ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে (প্রথম) স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নুরুদ্দীনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলের শুনানি শেষে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকেলে এ আদেশ দেন।

মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাঈমুল ইসলাম রিয়াদকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। পরদিন নাঈমুলের মামা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুলসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত দুই-তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুলের নাম বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ওই অভিযোগপত্রে নারাজি আবেদন দাখিল করতে মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম যশোর আদালতে গেলে আসামি পক্ষের লোকজন তাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

Advertisement

পুলিশের হস্তক্ষেপে ঢাকায় নিজের বাড়িতে ফিরে যান রফিকুল ইসলাম। এরপর ভয়ে তিনি আর যশোর আদালতে যেতে পারেননি।

মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম বলেন, চার্জশিটের নারাজি দাখিল করতে গেলে আসামি পক্ষের ৩০-৪০ জন আদালতের এজলাসে আমার হাত ধরে টানাটানি করেন। পুলিশের সহায়তায় প্রাণে রক্ষা পাই। এরপর থেকে আমি নিরাপত্তাহীনতার কারণে আর যশোরে গিয়ে মামলার খোঁজখবর নিতে পারিনি। নিরাপত্তার কারণে মামলাটি যশোর থেকে ঢাকায় স্থানান্তরের আবেদন করা হলে বিচারক আদেশ দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, মামলাটি এতদিন যশোরে থাকাতে আইনগত কোনো সুযোগ-সুবিধা আমরা নিতে পারিনি। এখন আদালতের কাছে মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদন জানাবো। আমরা খুনিদের ফাঁসি দেখতে চাই।

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি স্থানান্তর পিটিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আল ফয়সাল সিদ্দিকী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, মামলার আসামিরা যশোরে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। ঢাকা থেকে যশোরে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করা বাদীর পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। এরই মধ্যে তিনি যশোর আদালতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। যে কারণে মামলাটি ঢাকায় বদলির আবেদন জানালে শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নুরুদ্দীনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মামলাটি স্থানান্তরের আদেশ দেন।

Advertisement

জানা যায়, নিহত নাইমুল ইসলাম রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং শহীদ মশিউর রহমান হলের ৪১৭ কক্ষে থাকতেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে যান। রিয়াদ সেই গ্রুপিং রাজনীতির শিকার হয়ে ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন। তিনি খুলনার লবণচরা এলাকার কাজী মনিরুল ইসলামের ছেলে। তারা ঢাকাতে বসবাস করতেন। মেধাবী ছেলেকে হারানোর শোক বুকে নিয়ে মনিরুল ইসলাম চলতি বছরে মারা যান। বাবা-ছেলে দুই জনকেই খুলনার লবণচরায় পাশাপাশি দাফন করা হয়।

মিলন রহমান/এসজে/জেআইএম