রামকিঙ্কর বেইজ ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি ভাস্কর। তিনি আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর্যকলার অন্যতম অগ্রপথিক ছিলেন। রামকিঙ্কর ছিলেন প্রথম ভারতীয় শিল্পী যিনি আধুনিক পাশ্চাত্য শিল্প অধ্যয়ন করে সেই শৈলী নিজের ভাস্কর্যে প্রয়োগ করেন।
Advertisement
রামকিঙ্কর পোস্টার, থিয়েটারের সিন ,এমনকি পুতুল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের নজরে পড়েন তিনি। তাকে নিয়ে আসা হয় শান্তিনিকেতনের কলাভবনে। ১৯ বছরের রামকিঙ্করের কাজ দেখে মুগ্ধ হন নন্দলাল বসু। ১৯২৫ সালে নন্দলালের ছাত্র হয়ে রামকিঙ্কর ঢুকলেন শান্তি নিকেতনের কলাভনে থাকলেন একটানা ৪৬ বছর। অবসর নেন ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান হয়ে।
রামকিঙ্কর ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির বাঁকুড়া শহরের যুগীপাড়ায় (অধুনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে) ১৯০৬ সালের ২৫ মে এক পরমানিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের প্রাকৃতিক উৎসকে সাড়া দিয়েছিল। মানব ব্যক্তিত্ব, দেহের ভাষা এবং সাধারণ মানব নাটকে খুব আগ্রহী ছিলেন। আধুনিক পশ্চিমা শিল্প এবং প্রাক ও উত্তর-শাস্ত্রীয় ভারতীয় শিল্প তার উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল।
তার চিত্রগুলোও তার ভাস্কর্যগুলোর মতো প্রকাশবাদী মাত্রা গ্রহণ করে, যা শক্তি এবং প্রাণশক্তি দিয়ে পূর্ণ। রামকিঙ্করের ভাস্কর্য গুলি আকৃতিতে বেশ বড়। তিনি চোখের সামনে যা দেখতেন তাই হতো মডেল। তার উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য-চিন্তায় মগ্ন রবীন্দ্রনাথ, সাঁওতাল রমণী, সাঁওতাল পরিবার ,গান্ধীজি, সুজাতা, বুদ্ধদেব, কালের পথে, গৌতম বুদ্ধ, কলের বাঁশি, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গড়া ভাস্কর্য ‘দ্য পোয়েট’ ইত্যাদি।
Advertisement
উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্ম- উৎসবী চোখ, শিলং সিরিজ, শরৎকাল, কৃষ্ণের জন্ম, নতুন শস্য, বিনোদিনী, মহিলা ও কুকুর, গ্রীষ্মের দুপুর, ফ্যান্টাসি ইত্যাদি। তার কয়েকটি ভাস্কর্য কলাভবন, শান্তিনিকেতন, প্রয়াত রানী চন্দ সংগ্রহ ও চারুকলা একাডেমী, কলকাতা, এইচ.কে. সহ বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত এবং প্রদর্শিত রয়েছে কেজরিওয়াল কালেকশন এবং কর্ণাটকের চিত্রকলার পরশহাট, বেঙ্গালুরু, ললিত কালা আকাদেমি, নয়াদিল্লি, ন্যাশনাল গ্যালারী অফ মডার্ন আর্ট, নয়াদিল্লি, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, নয়াদিল্লি, জেন এবং কিতো ডি বোয়ার, দুবাই এবং নয়াদিল্লির দিল্লী আর্ট গ্যালারি।
তিনি পদ্মভূষণ এবং দেশিকোত্তম উপাধিতে ভূষিত হন। ভারতীয় শিল্পে তাকে আধুনিকতার জনক ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী মনে করা হয়। তার জীবনকথা নিয়ে সাহিত্যিক সমরেশ বসু ‘দেখি নাই ফিরে’ নামে বৃহদায়তন উপন্যাস রচনা করেন। যার চিত্রাংকন করেছিলেন শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য। ১৯৮০ সালের ২ আগস্ট ভারতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
কেএসকে/এএসএম
Advertisement