আন্তর্জাতিক

বেতনের খাতায় স্ত্রীর নাম ঢুকিয়ে অফিসের ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ

এ যেন রক্ষকই ভক্ষক। অফিসের কর্মীদের বেতন পাঠানো হতো যার হাত দিয়ে, তিনিই সেই সুযোগের চূড়ান্ত অপব্যবহার করলেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পর ব্যাংকে নথিপত্র পাঠানোর আগে হিসাব বদলে দিতেন তিনি। নিজের বেকার স্ত্রীকে কর্মী দেখিয়ে মোটা অংকের বেতন তুলতেন। বাড়িয়ে নিতেন নিজের বেতনও। এভাবে এক মাস, দু’মাস নয়। পাক্কা ১০ বছর চালিয়ে গেছেন অপকর্ম। আর তাতে অফিসের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।

Advertisement

সম্প্রতি এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন ভারতের একটি বেসরকারি রিক্রুটমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপক (অর্থ)। ম্যানপাওয়ার গ্রুপ সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড নামে দিল্লিভিত্তিক কোম্পানিটি গত বছর আর্থিক হিসাবে অনিয়মের বিষয়ে প্রথমবারের মতো সন্দেহ করে। তারপর অভ্যন্তরীণ তদন্তে রীতিমতো কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে সাপ। গত সপ্তাহে এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

আরও পড়ুন>> এক বছর পর সাবেক কর্মীর দ্বারস্থ হতে হলো বসকে, সাধলেন টাকা

জানা যায়, ২০০৮ সালে ম্যানপাওয়ারগ্রুপে সহকারী ব্যবস্থাপক (অর্থ) পদে যোগ দেন রাধাবল্লভ নাথ। পরে ম্যানেজার (অর্থ) পদে পদোন্নতি পান তিনি। অভিযোগ করা হয়েছে, রাধাবল্লভ তার বেকার স্ত্রীর জন্য নিয়মিত আয়ের উৎস বানিয়ে নিয়েছিলেন নিজের অফিসকেই।

Advertisement

কোম্পানিটির কর্মীদের মাসিক বেতন ও প্রতিদান সম্পর্কিত তথ্যগুলোর অ্যাক্সেস ছিল মাত্র তিনজন কর্মকর্তার কাছে। তারা হলেন পরিচালক (মানব সম্পদ), প্রধান মানব সম্পদ কর্মকর্তা (সিএইচআরও) এবং রাধাবল্লভ।

পে-রোল ভেন্ডর এবং কোম্পানির অন্যান্য বিভাগ, যেমন- এইচআর-ফিন্যান্সের মধ্যে সমন্বয়কের দায়িত্ব ছিল রাধাবল্লভের। নতুন যোগ দেওয়া, চাকরি ছেড়ে যাওয়া বা কর্মরত কর্মচারীদের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন তথ্য মাসিক বেতনের রেজিস্টার প্রস্তুত করতে পে-রোল ভেন্ডরের কাছে পাঠাতেন তিনি।

আরও পড়ুন>> ‘অসহিষ্ণু’ বস: তিন দিনেই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হলেন তরুণী

রেজিস্টার প্রস্তুতের পরে ভেন্ডর সেটি রাধাবল্লভের কাছে ফেরত পাঠাতেন। তিনি এটি নিয়ে যেতেন পরিচালকের (এইচআর)। সেখান থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যেতো সিএইচআরওর কাছে। সিএইচআরও অনুমোদন দিলে এটি পরিচালকের (এইচআর) কাছে ফেরত পাঠানো হতো। এরপর তিনি চূড়ান্ত বেতনের রেজিস্টার হিসেবে এটিকে রাধাবল্লভ নাথের কাছে পাঠাতেন। বেতন ছাড়ের জন্য চূড়ান্ত রেজিস্টারটি ব্যাংকে পাঠানোর দায়িত্ব ছিল তারই।

Advertisement

কিন্তু এই জায়গাটিতে এসেই দুর্নীতির খেলা খেলতেন রাধাবল্লভ। ব্যাংকে পাঠানোর আগে তিনি রেজিস্টারটিতে কারসাজি করে স্ত্রীর নাম ঢুকিয়ে দিতেন। শুধু তা-ই নয়। নিজের বেতনও বাড়িয়ে নিতেন এই কর্মকর্তা।

কোম্পানির অভ্যন্তরীণ তদন্তে দেখা গেছে, রাধাবল্লভ নাথ অন্য একজন কর্মচারীর কম্পিউটার ব্যবহার করে ব্যাংকের পোর্টালে পরিবর্তিত পে-রোল ফাইল আপলোড করতেন। এরপর পুরো সিস্টেম থেকেই মুছে ফেলতেন ফাইলটি।

আরও পড়ুন>> বাড়িভাড়া বাঁচাতে প্লেনে চড়ে অফিসে যাতায়াত!

২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর চাকরিচ্যুত করা হয় রাধাবল্লভকে। পরে তদন্তের মুখে এই কর্মকর্তা স্বীকার করেন, তিনি ২০১২ সাল থেকে অফিসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে অবৈধভাবে ৩ কোটি ৬০ লাখ রুপি সরিয়েছেন। এছাড়া গত কয়েক বছরে নিজের অ্যাকাউন্টেও অতিরিক্ত ৬০ লাখ রুপি সরিয়েছেন।

সব মিলিয়ে অফিস থেকে ৪ কোটি ২০ লাখ রুপি (৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা প্রায়) আত্মসাৎ করেছেন রাধাবল্লভ নাথ। এই টাকা দিয়ে তিনি দিল্লি, জয়পুর, উড়িষ্যায় সম্পত্তি কিনেছেন। এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ড ও অন্যান্য আর্থিক স্কিমে বিনিয়োগ করার কথাও স্বীকার করেছেন এই কর্মকর্তা।

সূত্র: পিটিআই, এনডিটিভিকেএএ/