বান্দরবানে পাহাড়ি ঝিরির পানি প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করেছেন উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মহসীন। উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে আলোকিত করেছেন পাহাড়ে বসবাসকারী ৪২টি পরিবার। তবে আর্থিক সমস্যার কারণে পুরো পাড়াবাসী বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারছেন না। তাই সরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
Advertisement
বান্দরবানের থানছি সদর উপজেলা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে দুর্গম পাহাড়ি পল্লী নকতোহা পাড়া। পাড়ার পার্শ্ববর্তী ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে ঝর্নার প্রবাহ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প খরচে উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ পেয়ে খুশি পাহাড়ে বসবাসকারী ত্রিপুরা পরিবারগুলো।
স্থানীয়রা জানান, নকতোহা পাড়াটি থানচি সদর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে হলেও দেশ স্বাধীনের ৫২ বছর পরও এখানে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। সম্প্রতি জলবিদ্যুতের আলো পেয়ে নতুন স্বপ্ন বুনছেন এ পাড়ায় বসবাসরত ৪২টি পরিবারে প্রায় ৩০০ দরিদ্র মানুষ। তবে ঝিরিতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় অনেক বাসিন্দাই তা কিনতে অক্ষম।
আরও পড়ুন: জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলো মাতারবাড়ির ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ
Advertisement
পাড়ার বাসিন্দা রমেন ত্রিপুরা জানান, পাহাড়ি ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারায় অত্যন্ত খুশি পাড়ার বাসিন্দারা। তবে পাড়ায় বসবাকারীরা অত্যন্ত গরিব জুমচাষি। ফলে সবাই বিদ্যুতের এ সেবা নিতে পারছেন না। তারা সরকারি সহায়তা চাইছেন।
আরেক বাসিন্দা জসারু ত্রিপুরা জানান, মহসীন নিজ উদ্যোগে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ থেকে পাড়ার ৪২ পরিবারকে বিদ্যুৎ সেবা দিচ্ছেন। পাড়ায় আরও বাসিন্দা থাকলেও সবাইকে তার একার পক্ষে এ সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সরকারি সহায়তা চাই।
আরও পড়ুন: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দ্রুত শেষ করার সুপারিশ
উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মহসীন জানান, শৈশবে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। কাজ শিখে দক্ষ টেকনিশিয়ান হয়ে নিজেই গড়ে তোলেন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির ওয়ার্কশপের যন্ত্রাংশ মেরামতের কাজ করতে করতে মনের বাসনা জাগে জলবিদ্যুৎ উদ্ভাবনের। সেই বাসনায় ছয় মাস আগে থানচির বাসিন্দা বন্ধু মাংসার ম্রোর সহযোগিতায় নিজস্ব অর্থায়নে সদর ইউনিয়ন থেকে দুই কিলোমিটার দূরে নকতোহা পাড়ার ক্যছুং ঝিরিতে পরীক্ষামূলকভাবে জলবিদ্যুৎ উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেন। পাহাড়ের শত বাঁধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ঝিরিতে স্বল্প উচ্চতায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ঝর্নার প্রবাহকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে এই বিদ্যুৎ উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
Advertisement
তিনি আরও জানান, পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১২ লাখ টাকা ব্যয় হয় তার। বর্তমানে এ প্রকল্প থেকে ৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। যা দিয়ে ৪২টি পরিবারকে আলোর আওতায় আনা সম্ভব। তবে ফ্যান, টিভি ও ফ্রিজসহ অন্য চাহিদা পূরণ করতে হলে প্রকল্পে আরও ২৫-৩০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে।
নকতোহা পাড়ার কারবারি (পাড়া প্রধান) রাম বাহাদুর ত্রিপুরা জানান, নকতোহা পাড়াটি থানচি সদর ইউনিয়নের খুব কাছে হলেও তারা বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত। মহসীন যখন এ প্রকল্পটি শুরু করেছিল তখন পাড়াবাসী বিশ্বাস করতে পারেনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ডেভিড ত্রিপুরা জানান, পাহাড়ি ঝিরি ও ঝর্নায় বাঁধ দিয়ে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন দেখে অবাক হওয়ার পাশাপাশি পাড়াবাসী খুব খুশিও। এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হলেও আর্থিক সমস্যার কারণে পুরো পাড়াবাসী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিতে পারছেন না। স্বল্প খরচে দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্পে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দুর্গম এলাকার বিদ্যুৎ বঞ্চিত বাসিন্দাররা উপকৃত হবে।
আরও পড়ুন: ৫৯ জনকে চাকরি দেবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, আবেদন ফি ১১২ টাকা
এ বিষয়ে থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অং প্রু ম্রো জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫২ বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখনো বান্দরবানের থানচি উপজেলার বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় অসংখ্য পাহাড়ি পরিবার বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এরূপ প্রকল্পের মাধ্যমে ওইসব এলাকার লোকজনদের বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব।
বান্দরবান বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আমির হোসেন জানান, এ ধরনের উদ্যোগ নিসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে এ ধরনের প্রকল্প তার দপ্তরাধীন না হওয়ায় সার্বিক সহযোগিতা করতে না পারলেও তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিদর্শন করে পরামর্শ দেবেন।
এফএ/জিকেএস