আষাঢ়ের প্রথম দিনটি ছিল বর্ষণমুখর। আশায় বুক বেঁধেছিলেন চাষিরা প্রকৃতির বৈরিতা কাটলো বলে। আষাঢ় তার আগমনী বার্তা জানান দেওয়ার ঠিক দু-একদিন পরেই আবার রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। এরপর আবার মাসের মাঝামাঝি সময়ে টানা কয়েকদিন অবিরাম ঝরতে থাকে বৃষ্টি। এতে নদী, নালা, খাল, বিলে কিছুটা পানি জমে। আর তাতেই পাট কাটার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার পাটচাষিরা।
Advertisement
কেউ কেউ পাট কেটেও ফেলেন। কিন্তু তার পরেই বাধ সাধে প্রকৃতি। টানা একমাস বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শুকিয়ে যায় খাল, বিল ও নালার পানি। এ অবস্থায় জাগ দেওয়া পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। পানির অভাবে পাটের আঁশের মান নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: ভরা বর্ষায়ও নেই পানি, পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে কৃষক
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে জেলার সাত উপজেলায় ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর বিপরীতে চাষ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৩১৩ হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১৩ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ১৪ হাজার জন ও পাট অধিদপ্তর থেকে ২১ হাজার জন পাটচাষি প্রণোদনা পেয়েছেন।
Advertisement
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, ফুলছড়ি ও পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন নালা ও সড়কের পাশে অপেক্ষাকৃত নিচু খালে পাট জাগ দিয়েছেন চাষিরা। তবে বেশকিছু দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং খরতাপের প্রভাব পড়েছে খালবিল ও বিভিন্ন জলাশয়ে। শুকিয়ে গেছে পানি। এতে জাগ দেওয়া পাট নিয়ে বিপদে পড়েছেন চাষিরা। পানির অভাবে পাটের আঁশ কালো রং ধারণ করেছে। শ্যালো মেশিন দিয়ে জাগ দেওয়া পাটে পানি সেচ দিতে দেখা যায় কৃষকদের। আশা পাটের রং যেন সোনালি হয়।
আরও পড়ুন: পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষক
পাটচাষি জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় পাটচাষে খরচও বেড়ে গেছে। এবার পানি না থাকায় পাটের রঙ খারাপ হচ্ছে। এতে পাট ধুয়ে শুকানোর পর বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত যে টাকা খরচ হবে, সেই সেই টাকাও উঠবে না।
আবুল কালাম আজাদ নামের আরেক চাষি জাগো নিউজকে বলেন, পাট কেটে পানির অভাবে বাড়তি টাকা খরচ করে দূরে নিয়ে জাগ দিতে হচ্ছে। এ কারণে খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া একই স্থানে অনেক পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রঙ খারাপ হচ্ছে।
Advertisement
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুরের এক কৃষক জাগো নিউজকে বলেন, পাট কেটে রেখে বৃষ্টির আশায় আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম ৯ দিন। কিন্তু তা না হওয়ায় বাধ্য হয়ে নালাতে জাগ দিচ্ছি। বন্যা হলে ভেসে যায়। তবুও দিলাম, আল্লাহ ভরসা।
আরও পড়ুন: খাল-বিলে পানি নেই, পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পাটের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তবে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পাটের আঁশের মান কমে যেতে পারে। সেজন্য রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট গাছ থেকে ছাল ছড়িয়ে নিয়ে গর্ত করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে এ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে। তাতে আঁশের রং সোনালি হবে এবং চাষিরা ভালো দামও পাবেন।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, এবার অতিরিক্ত খরা কাটিয়ে জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফলনও হবে। তবে বৃষ্টি না থাকা ও মুক্ত জলাশয় কমে যাওয়ায় পাট পচানো নিয়ে চাষিরা দুশ্চিন্তায় আছেন। পাট চাষ বৃদ্ধির জন্য প্রণোদনা বাড়ানো ও মুক্ত জলাশয় খনন করা প্রয়োজন।
শামীম সরকার শাহীন/এমআরআর/এএসএম