তিস্তা, ধরলা আর ব্রহ্মপুত্রের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা রংপুর যেন সেজেছে নবরূপে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন ঘিরে উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বিভাগজুড়ে।
Advertisement
সড়ক ও মহাসড়কে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রঙিন ব্যানার আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পাড়া-মহল্লা থেকে অলিগলি। বর্ণিল আলোকসজ্জা ও রংতুলির আঁচড়ে নতুন সাজে সেজেছে রংপুর।
সবশেষ ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলায় দুটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন। আগামী বুধবার (২ আগস্ট) রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় উপস্থিত থেকে ভাষণ দেবেন তিনি।
আরও পড়ুন: আশায় বুক বাঁধছে তিস্তাপাড়ের মানুষ
Advertisement
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ সফরে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা আরও উজ্জীবিত হবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে এরইমধ্যে একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছেন কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তাদের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর এই সমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে।
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুর সফর ঘিরে অনেকটাই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরীতে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। সড়কপথের পাশের দেওয়ালগুলোতে চলছে রঙের কাজ। ফুটপাতে রং করা, ভাঙা সড়ক সংস্কার, পথের ধুলাবালি সরানোর কাজও চলছে জোরেসোরে। সৌন্দর্যবর্ধন করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল, সার্কিট হাউস ও আশপাশের এলাকায়।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাসহ কয়েকজন মন্ত্রী রংপুরে উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, তদারকি করছেন। সার্বিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে প্রশাসনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে রূপগঞ্জে জনস্রোত
Advertisement
সুদূর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থেকে রংপুরে এসেছেন শেখ মোহাম্মদ ইলিয়াস। জাতীয় পতাকার আদলে তৈরি পোশাক আর মাথায় নৌকা প্রতীক নিয়ে শহরে ঘুরছেন তিনি। হ্যান্ড মাইকে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তুলে ধরে চালাচ্ছেন প্রচারণা।
ইলিয়াস বলেন, বিগত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে যেসব উন্নয়ন হয়েছে তা সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরতে বিভিন্ন জনসভায় আমরা যোগ দিই। এবারও রংপুরে এসেছি।
রংপুর মহানগর অটো শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীও প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে উজ্জীবিত। জাতীয় পতাকার আদলে তৈরি পোশাক আর মাথায় নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তাকে বরণ করতে প্রস্তুত রংপুরের সাধারণ মানুষ। এই জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে ব্যস্ত আ.লীগ
বাবুল বলেন, ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর সফরে এসে এই অঞ্চলের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন। রংপুরের পুত্রবধূ হিসেবে তিনি কথা রেখেছেন। তার কাছে আমাদের নতুন করে চাওয়ার কিছু নেই। এক সময় রংপুর মঙ্গাপীড়িত এলাকা ছিল। এখন মঙ্গা নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় সেটা এই জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেবেন।
এদিকে, রংপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। মিছিল থেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দসহ দ্রুত কাজ শুরুর দাবি জানানো হয়।
সোমবার (৩১ জুলাই) দুপুরে রংপুর মহানগরীর সিটি বাজার এলাকা থেকে আনন্দ মিছিলটি বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে সিলেটে উৎসবের আমেজ
মিছিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার প্রদর্শন করা হয়। একই সঙ্গে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি তুলে স্লোগান দেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। মিছিলে তিস্তা নদীবেষ্টিত রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, কাউনিয়া উপজেলা ছাড়াও নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা থেকে লোকজন অংশ নেন। মিছিল শেষে টাউন হল চত্বরের উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন নদী ভাঙনের শিকার হওয়া তিস্তাপাড়ের মানুষসহ পরিষদের নেতাকর্মীরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, বিগত সময়ে প্রধানমন্ত্রী নিজ দায়িত্বে এই এলাকার উন্নয়ন করেছেন। তবে দেশের অন্য অঞ্চলের থেকে এখনো রংপুর কিছুকিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা, মডার্ন মোড় থেকে পাগলাপীর পর্যন্ত বাইপাস মহাসড়ক নির্মাণ, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, তথ্য ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষিভিত্তিক রপ্তানি নির্ভর কলকারখানা নির্মাণ, রংপুর-কক্সবাজার আন্তঃনগর ট্রেন চালু, অর্থনৈতিক জোন তৈরি- এসব এখন সময়ের দাবি।
এমআরআর/এএসএম