ফিচার

সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ রফির প্রয়াণ দিবস

মোহাম্মদ রফি ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ভারতীয় সংগীতশিল্পী। একসময় তিনি সমগ্র উপমহাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি সংগীত ভুবনে সুদীর্ঘ চার দশক সময়কাল অতিবাহিত করেন।প্রায় চল্লিশ বছর সময়কাল ধরে সংগীত জগতে থাকাকালীন ২৮ হাজারেরও অধিক চলচ্চিত্রের গানে নেপথ্য গায়ক বা প্লেব্যাক সিংগার হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন মোহাম্মদ রফি।

Advertisement

তিনি শাস্ত্রীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক গান, বিরহ-বিচ্ছেদ, উচ্চ মার্গের প্রেম-ভালবাসা, কাওয়ালী, ভজন, গজল-সহ বিভিন্ন গোত্রের গানে দক্ষতা ও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন সমানভাবে। বিশেষ করে হিন্দি এবং উর্দু ভাষায় সমান দক্ষতা থাকায় তার গানগুলোতে বৈচিত্র্য এসেছে সমধিক। এছাড়াও কোনকানি, ভোজপুরী, উড়িয়া, পাঞ্জাবী, বাংলা, মারাঠী, সিন্ধী, কানাড়া, গুজরাতি, তেলুগু, মাঘী, মৈথিলী, অহমীয়া, ইংরেজি, ফার্সী, স্প্যানিশ এবং ডাচ ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি।

মোহাম্মদ রফির জন্ম ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব এলাকার অমৃতসর গ্রামে। তার ডাক নাম ছিল ফিকু। নিজ গ্রামে এক ফকিরের ভজন গানকে অনুকরণ করে গান গাওয়া শুরু করেন তিনি। ১৩ বছর বয়সে রফি লাহোরের প্রথিতযশা শিল্পী কে. এল. সাইগলের সঙ্গে জীবনের প্রথম দর্শক-শ্রোতাদের মুখোমুখি হয়ে কনসার্টে গান পরিবেশন করেন। ১৯৪১ সালে শ্যাম সুন্দরের নির্দেশনায় লাহোরে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নিজেকে অভিষেক ঘটান। পাঞ্জাবী ভাষায় নির্মিত গুল বালুচ (১৯৪৪ সালে মুক্তি পায়) চলচ্চিত্রে জিনাত বেগমের সঙ্গে দ্বৈত সঙ্গীত "সোনিয়ে নি, হেরিয়ে নি" গানটি গান। একই বছরে মোহাম্মদ রফি অল ইন্ডিয়া রেডিও'র লাহোর সম্প্রচার কেন্দ্রে গান পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ পান।

১৯৪৪ সালে মোহাম্মদ রফি বোম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) চলে আসেন। এরপর একের পর এক চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিতে থাকে। তার সুদীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে অনেক নামকরা সঙ্গীত পরিচালকের দিক-নির্দেশনায় বিভিন্ন ধরনের গান গেয়েছেন। তন্মধ্যে অমর সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নওশাদের পরিচালনায়ই গান গেয়েছেন বেশি। এছাড়াও, ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে মোহাম্মদ রফি ও.পি. নায়ার, শঙ্কর জয়কিষাণ এবং এস.ডি.বর্মনের সুরেও অনেক গান গেয়েছেন।

Advertisement

তার উল্লেখযোগ্য গান, হিন্দি: তেরে মেরে স্বপ্নে আব এক রং হে, দিন ধাল জায়ে, হ্যায় রাত না জায়ে, চৌদভীন কা চান্দ হো, তেরি পিয়ারী পিয়ারী সুরত কোতেরি পিয়ারী পিয়ারী সুরত কো, হাসনাওয়ালে তেরা জবাব নাহি, চাহুঙ্গা মে তুঝে, বাহারো ফুল বরসাও, দিল কে ঝারোকে মে, ক্যায়া হুয়া তেরা ওয়াদা, মন রে, তু কাহে না ধীর ধরে, তেরী গালিও ম্যা না রাখেঙ্গে কদম আজ কে বাদ, বাহারও ফুল বরসাও, ‘ইয়ে দুনিয়া ইয়ে মেহফিল, গুলাবি আঁখে ইত্যাদি।

বাংলা গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-তোমার নীল দোপাটি চোখ, পাখিটার বুকে যেন, এখনই বিদায় বল না, কথা ছিল দেখা হলে, ওই দূর দিগন্ত পারে, গুলমোহরে সাজানো বাগান, নাই বা পরিলে আজ মালা চন্দন, এ জীবনে যদি আর কোনো দিন, নওল কিশোর, কালো কলেবর কানহাই, ওরে মনকে এমন দাগা দিয়ে, নজরুল সংগীত ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন’ ইত্যাদি।

সংগীতে অসামান্য অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় পদক এবং ৬-বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন মোহাম্মদ রফি। এছাড়াও পদ্মশ্রী, ৩বার বিএফজিএ পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সুর শৃঙ্গার পুরস্কার, ফিল্ম ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন পুরস্কার পান। ১৯৪৮ সালে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে জওহরলাল নেহরুর কাছ থেকে রৌপ্য পদক পান। এছাড়া ২০০১ সালে হিরো হোণ্ডা-স্টারডাস্ট ম্যাগাজিনের যৌথ উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী পাঠকদের ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি শতাব্দীর সেরা গায়ক হিসেবে পুরস্কৃত হন। ১৯৮০ সালের ৩১ জুলাই ভারতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

কেএসকে/জিকেএস

Advertisement