আন্তর্জাতিক

যুদ্ধ এবার রাশিয়ার দিকে: জেলেনস্কি

ইউক্রেন এবং রাশিয়ার সংঘাত যেন থামছেই না। ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার এখনো কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন পরিস্থিতি যেন খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে আকস্মিক হামলা চালায় রাশিয়া। তারপর থেকে দুপক্ষের মধ্যে সংঘাত চলছেই। 

Advertisement

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধ এবার রাশিয়ার দিকে যাচ্ছে। মস্কোতে এক ড্রোন হামলার পর জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুদ্ধ এখন তাদের দিকেই ফেরত যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: সীমান্তের কাছাকাছি ওয়াগনার বাহিনী, উদ্বিগ্ন পোল্যান্ড

দুই দেশের চলমান এই যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়ার সীমানার ভেতরে আক্রমণ হওয়াকে স্বাভাবিক, অবশ্যম্ভাবী এবং সম্পূর্ণ ন্যায্য বলে উল্লেখ করেছেন জেলেনস্কি। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার তিনটি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ড্রোন অনাবাসিক ভবনের ভেতরে পড়েছে।

Advertisement

এ ঘটনার জের ধরে শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ড্রোন হামলার পর রোববার (৩০ জুলাই) পশ্চিম ইউক্রেনের ইভানো-ফ্রাংকিভস্ক শহর থেকে এক বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন শক্তিশালী হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাশিয়ার তথাকথিত বিশেষ সেনা অভিযানের আজ ৫২২তম দিন। রুশ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ভেবেছিলেন যে, এই অভিযান হয়তো সপ্তাহ দুয়েকের বেশি চলবে না। কিন্তু ধীরে ধীরে যুদ্ধ রাশিয়ার মাটিতেই ফিরে যাচ্ছে। আর এটাই স্বাভাবিক, অবশ্যম্ভাবী এবং সম্পূর্ণ ন্যায্য।

এর আগে রাশিয়ায় হামলা হলে কিয়েভকে সেগুলোর দায় নিতে দেখা যায়নি। তবে এবারই অনেকটা স্বভাববিরুদ্ধ ভাবেই এই হামলার কৃতিত্ব নিতে দেখা যাচ্ছে ইউক্রেনকে। এ ধরণের ড্রোন হামলাকে রুশ জনসাধারণের কাছে বার্তা পাঠানোর একটি সুযোগ হিসেবেও দেখতে পারেন জেলেনস্কি। রাশিয়ার জনগণের একটা বড় অংশ মনে করে যে ইউক্রেনে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।

তবে রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে মস্কো। শহরের মেয়র সেরগেই সোবইয়ানিন জানান, দুটি অনাবাসিক ভবনের সামনের দিক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Advertisement

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবি থেকে দেখা যায় যে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু জানালা ভেঙ্গে গেছে। ভবনের দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙ্গে পড়ে থাকতেও দেখা যায়।

এক প্রত্যক্ষদর্শী বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে হামলার সময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা একটা বিস্ফোরণের শব্দ শুনি, সেটি ছিল অনেকটা ঢেউয়ের মতো। আমরা সবাই একসাথে লাফ দিয়ে উঠি।

তিনি বলেন, সেখানে প্রচুর ধোঁয়া দেখতে পাই। প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। ওপর থেকে শুধু আগুন দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল। ঘটনার পরপরই মস্কোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। ওই বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল এমন বিমানগুলোকে অন্য বিমানবন্দরের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ৫০০ কিলোমিটারের (৩১০ মাইল) মধ্যে অবস্থান মস্কো শহরের। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়া সেনা অভিযান শুরু করার পর থেকে মস্কোতে হামলা হওয়ার মতো ঘটনা খুব কমই ঘটেছে।

তবে গত কয়েকমাসে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে তারা মস্কোতে একাধিক ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল মে মাসে ক্রেমলিনে ড্রোন হামলার অভিযোগ। মস্কো শহরের কেন্দ্রে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে লক্ষ্য করে দুটি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলে রুশ কর্তৃপক্ষ।

ইউক্রেন অবশ্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাবি করেন যে, ক্রিমিয়াতেও ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ/ ৩০ দেশ নিয়ে শান্তি আলোচনায় বসবে সৌদি আরব

সংবাদ সংস্থা তাস নিউজ এজেন্সি রুশ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে যে, ক্রিমিয়ায় হামলা চালানো ১৬টি ড্রোন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে এবং ৯টি ড্রোন অকেজো করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ইউক্রেন বলছে, দেশটির উত্তর-পূর্বের সুমি শহরে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় একজন মারা গেছে ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। এছাড়া শনিবার দক্ষিণের ঝাপোরিশা শহরে হামলায় আরও দুইজন মারা গেছে বলে দাবি করছে ইউক্রেন।

টিটিএন