বর্ষার বৃষ্টিহীন তপ্ত দুপুর, ভ্যাপসা গরম। গায়ে খোলা কালো গাউন, মাথায় চারকোনা টুপি। দলে দলে বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রী হলরুমে ঢুকছেন তারা। সবার চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস। কেউ শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন সবে, আবার কেউ কেউ পুরোদস্তুর কর্মজীবনে। তারা সবাই এসেছেন উচ্চশিক্ষার স্বীকৃতি নিতে। বহুদিন পর বন্ধু-বান্ধবী, শিক্ষকদের পেয়ে মেতে ওঠেন উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনায়।
Advertisement
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে এমন উচ্ছ্বাসের দেখা মেলে রোববার (৩০ জুলাই)। বর্ণিল আয়োজনের এ সমাবর্তনে দুই হাজারেরও বেশি গ্র্যাজুয়েট বুঝে নিয়েছেন তাদের উচ্চশিক্ষার স্বীকৃতি ‘মূল সনদ’।
স্বামী ও ছোট্ট শিশুসন্তান নিয়ে সমাবর্তনে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের গ্র্যাজুয়েট জারিয়া তাসনিম। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে শুনছিলাম সমাবর্তন হবে। কিন্তু হবে হবে করেও হচ্ছিল না। অবশেষে সমাবর্তনের দিনক্ষণ এলো। সপরিবারে উৎসবে যোগ দিতে চলে এসেছি। অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। আবার অনেক বন্ধু-বান্ধবী নানান কারণে আসতে পারেনি। তাদের জন্য কিছুটা মন খারাপ। তবে যারা এসেছে, তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়ে খুব ভালো লাগছে।’
আরও পড়ুন: মাধ্যমিকে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা সেরা, উচ্চশিক্ষায়ও এগোতে চাই: শিক্ষামন্ত্রী
Advertisement
ফার্মেসি বিভাগের গ্র্যাজুয়েট নাদেল আশরাফ বলেন, ‘প্রচণ্ড গরম। গাউন পরে গরমে অতিষ্ঠ। তবুও কখন যে সময় চলে যাচ্ছে টেরই পাচ্ছি না। আসলে অনেক দিন পর সবার সঙ্গে দেখা হওয়ায় আড্ডা-গল্পে সময় কেটে যাচ্ছে।’
সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগামী হবে। সততা, মানবিকতা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, শরীর মনে সুস্থ এবং কর্মে উদ্যমী মানুষ হয়ে দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করবে।’
তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতের মাধ্যমে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করে আসছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, বাজার চাহিদার সঙ্গে শিক্ষার যোগসূত্রতা, সচেতনতা ও নৈতিক মূল্যবোধসহ নানা বিষয়ে অগ্রগামী ভূমিকা রাখছে।’
আরও পড়ুন: বিশ্বের মধ্যে মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় হবে মানারাত ইউনিভার্সিটি
Advertisement
গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে দীপু মনি আরও বলেন, একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে হবে। আমি আশা করি, তোমরা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ভবিষ্যৎ জীবনে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে।’
সমাবর্তন বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমিরেটাস ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, গবেষণাভিত্তিক জ্ঞান সৃষ্টিতেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে মনোনিবেশ করতে হয়। আমি মনে করি, তোমরা যারা গ্র্যাজুয়েট হয়ে বের হচ্ছো, তোমাদের মধ্যে সেই প্রেরণা কাজ করছে। বিশ্বের যে প্রান্তেই তোমরা কাজ করো না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে মানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করবে, সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।’
আরও পড়ুন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সরকার বদ্ধপরিকর
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙালির সংস্কৃতি হাজার বছরের পুরোনো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আমাদের ঐতিহ্য আমাদের সম্পদ। যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে যে সংবিধান আমরা পেলাম, যে মানচিত্র আমরা পেলাম জীবনের সবটুকু দিয়ে তা সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে যাবো। নিজেকে একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, আদর্শবান, অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট থাকবো।’
স্বর্ণপদক পেলেন ২০ গ্র্যাজুয়েট
সমাবর্তনে গ্রাজুয়েটদের মাছে ‘চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ বিতরণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এবারের সমাবর্তনে চারটি বিভাগে ২০ জন গ্র্যাজুয়েটকে পদক দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে পাঁচজন পান চ্যান্সেলরস গোল্ড মেডেল, তিনজন চেয়ারম্যানস গোল্ড মেডেল, তিনজন ভাইস-চ্যান্সেলরস গোল্ড মেডেল এবং বিভিন্ন বিভাগ থেকে ৯ জন পান ডিনস গোল্ড মেডেল।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সাবেক সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদ প্রমুখ।
এএএইচ/জেডএইচ/