খেলাধুলা

অ্যাশেজ শেষেই ক্যারিয়ার শেষের ঘোষণা ব্রডের

মাস খানেক আগেই ৩৭তম জন্মদিনের কেক কেটেছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। সতীর্থ জেমস অ্যান্ডারসনের বয়স ৪১ পার হয়ে গেছে। এখনও দিব্যি টেস্ট ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন। স্টুয়ার্ট ব্রডেরও তো এমন কিছু হয়নি যে, হুট করেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিতে হবে।

Advertisement

হয়তো শুক্রবারের আগে এমন কোনো চিন্তা ছিলই না। শুক্রবার রাত ৮টার পরই হঠাৎ সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললেন। সঙ্গে সঙ্গে নিজের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন দীর্ঘদিনের সতীর্থ জেমস অ্যান্ডারসন এবং জো রুটকে। শনিবার সকালে খেলা শুরুর আগ মুহূর্তেই ওভালের গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে ঘোষণাটা দিয়ে দিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড।

প্রায় ১৩০০ উইকেটের জোড়া (ব্রড ৬০২ + অ্যান্ডারসন ৬৮৯, মোট ১২৯১টি উইকেট) ভেঙে গেলো। টেস্ট ক্রিকেটে পঞ্চম সর্বোচ্চ এবং পেসার হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চে উইকেট শিকারী স্টুয়ার্ট ব্রড। অ্যান্ডারসনের পরই রয়েছে তার নামটা। এবারই তিনি পার হয়েছেন ৬০০ উইকেটের গণ্ডি। কিন্তু ব্রড সিদ্ধান্ত নিলেন ক্যারিয়ারকে আর খুব বেশি লম্বা করবেন না।

শনিবার তৃতীয় দিনের খেলা শুরুর আগেই ব্রড জানিয়ে দিলেন অ্যাশেজের এই শেষ ম্যাচটিই তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। ব্রডের অবসরের কথা জানিয়ে টুইট করেছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডও।

Advertisement

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে স্কাই স্পোর্টসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ব্রড বলেন, ‘এটা ছিল (পুরো ক্যারিয়ার) অসাধারণ একটি ভ্রমণ। নটিংহ্যাম্পশায়ার এবং ইংল্যান্ড জাতীয় দলের জার্সি পরতে পারাটা ছিল অনেক বড় গৌরবের। সবচেয়ে বড় কথা যে কোনো কিছুর চেয়ে বেশি আমি ক্রিকেটটাকে ভালোবাসি। এর মধ্যে এবারের এই অ্যাশেজ সিরিজটা ছিল অসাধারণ। আমি সব সময়ই শীর্ষে থেকে শেষ করতে চেয়েছিলাম। এই সিরিজটা তেমনই একটি মুহূর্ত এনে দিয়েছে আমার জন্য।

ক্যারিয়ারে এ নিয়ে ১৬৭তম টেস্ট খেলছেন স্টুয়ার্ট ব্রড। এখনও পর্যন্ত নিয়েছেন ৬০২ উইকেট। সংখ্যাটা আরেকটু বাড়তে পারে, অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ব্যাট করতে নামবেন, তখন। ১৬৭ টেস্টে তিনি রানও করেছেন ৩৬৫৬টি। আজ হয়তো এই সংখ্যাটা একটু বাড়তেও পারে।

অ্যাশেজ আর ব্রড প্রায় সমার্থক হয়ে গিয়েছিলো। ২০০৯ সালে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর থেকে প্রতিটি হোম সিরিজ খেলেছেন তিনি। ঘরের মাঠে অ্যাশেজের ২৫টি টেস্ট খেলে নিয়েছেন ২৬.৫৬ গড়ে ১০৪ উইকেট।

ম্যাচ চলাকালীন কেন নিজের অবসরের কথা ঘোষণা করলেন ব্রড? তার কারণও জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের ডান হাতি পেসার। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাতেই স্টোকসকে জানিয়েছিলোম। শনিবার সকালে সাজঘরে বাকিদের বলি। আমি খুব আলোড়ন চাইনি। তাই খেলার মাঝেই বলেছি। ওদের বলেছি, শেষ কামড়টা দিতে চাই। এই টেস্ট জিতে শেষ করতে চাই আমি।’

Advertisement

ইংল্যান্ডের হয়ে বেশ ভাল ভাল স্মৃতি নিয়ে বিদায় জানাতে চান ব্রড। সে কথা নিজেই জানিয়েছেন এই ইংলিশ পেসার। তিনি বলেন, ‘আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম এবার যাওয়ার সময় হয়েছে। কবে যাব সেটাই ঠিক করতে পারছিলাম না। শুক্রবার রাতে সেটা ঠিক করেছি। এই সাজঘরে খুব ভাল ভাল সময় কাটিয়েছি। অনেক আনন্দের মুহূর্ত আছে। সেগুলো নিয়েই শেষ করতে চাই।’

টেস্ট খেলার জন্য সাদা বলের ক্রিকেট আগেই ছেড়েছেন ব্রড। খেলার ধকল বা শারীরিক কারণে তিনি অবসর নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্টে ৬০০-র বেশি উইকেট নেওয়া পেসার। তিনি বলেন, ‘আমার শরীর এক দম ঠিক আছে। আরও কিছু দিন খেলতে পারতাম। কিন্তু মনে হল এটাই অবসরের সেরা সময়।’

ইংল্যান্ড ক্রিকেটে তার অবদানের জন্য ব্রডকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়েছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। খেলা ছাড়লেও মাঠ একেবারে ছাড়ছেন না তিনি। জানা গেছে, ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে তাকে।

ইংল্যান্ডের হয়ে ১৭ বছর খেলেছেন ব্রড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মোট ৩৪৪টি (১৬৭টি টেস্ট, ১২১টি এক দিনের ম্যাচ ও ৫৬টি টি-টোয়েন্টি) ম্যাচে মোট ৮৪৫টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। তার মধ্যে টেস্টে ৬০২, এক দিনের ম্যাচে ১৭৮ ও টি-টোয়েন্টিতে ৬৫টি উইকেট রয়েছে এই ডান হাতি পেসারের। শুধু বল হাতে নয়, ব্যাট হাতেও রান করেছেন ব্রড। টেস্টে ৩৬৫৪, এক দিনের ম্যাচে ৫২৯ ও টি-টোয়েন্টিতে ১১৮ রান রয়েছে তাঁর। ইংল্যান্ডের হয়ে চারটি অ্যাশেজ ও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন এই ডান হাতি পেসার।

আইএইচএস/