২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। আগামীকাল শনিবার (২৯ জুলাই) শিয়া সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র আশুরা।
Advertisement
এর একদিন আগেই আজ শুক্রবার এসএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা ও রাজধানীতে রয়েছে ভিভিআইপি মুভমেন্ট। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের তিনি অঙ্গ সংগঠনের শান্তি সমাবেশ ও বিএনপির মহাসমাবেশ। শুক্রবার ছুটির দিন হলেও দেশবাসীর চোখ আজ সারাদিন সমাবেশকেন্দ্রিক।
জল্পনা-কল্পনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুই রাজনৈতিক দলের সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ। নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ সংগঠনের শান্তি সমাবেশ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে। তবে অনুমতির ক্ষেত্রে দলগুলোকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ২৩ শর্ত। এর যে কোনো একটি শর্ত ভঙ্গ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, প্রায় দুই কোটির বেশি ঢাকার জনগণের নিরাপত্তায় প্রস্তত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যে কোনো নাশকতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠেকাতে গোয়েন্দারা মাঠে সর্বদা কাজ করছেন। জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ, লাঠিসোটা ব্যবহার করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মাঠে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। ঢাকার প্রবেশমুখ ও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
Advertisement
এছাড়া দুই বড় দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে ঢাকার জননিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হবে, যানজট পরিস্থিতি মোকাবিলা, নাশকতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মোকাবিলার কৌশলে পুলিশ আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। যে কোনো অরপ্রীতিকর পরিস্থিতি কিংবা বিশৃঙ্খল অবস্থা মোকাবিলায় থাকবে পুলিশের ‘স্পেশাল ফোর্স’। সাইবার স্পেসেও চলছে সার্বক্ষণিক মনিটরিং।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, কোনো কারণে মহাসমাবেশ ঘিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে পুলিশ অভিযান চালাবে। আবাসিক হোটেল, নেতাকর্মীদের বাসাসহ সম্ভাব্য সব স্থানে পুলিশের উপস্থিতি থাকবে। রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে পোশাকে ও সাদা পোশাকে থাকবেন পুলিশ সদস্যরা। ঢাকায় প্রবেশমুখের পয়েন্টগুলোতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
দুই দলের সমাবেশকে ঘিরে কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি র্যাব, আনসার, এপিবিএনের আরও কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। মূলত রাজধানীর নয়াপল্টন, কাকরাইল, ফকিরাপুল, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম ও গুলিস্তানসহ সমাবেশের নিকটস্থ এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক।
গত বুধবার (২৬ জুলাই) সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে র্যাব, বিজিবি, আনসার, এপিবিএন ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে।
Advertisement
বৈঠকে অংশ নেওয়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে সমাবেশ ঘিরে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। র্যাব কোন দিকে থাকবে, পলিটিক্যাল বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় প্রস্তুত করা পুলিশের স্পেশাল ফোর্স, আনসার ও এপিবিএন কোন দিকে থাকবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিএমপির চৌকস সদস্যদের নিয়ে গঠিত স্পেশাল ফোর্স সবসময় প্রস্তুত থাকবে। বড় ধরনের ঝামেলা হলে তারা সরাসরি মাঠে কাজ করবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেখানে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
বৈঠক শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, যদি ভাঙচুর করেন, জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান, শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করেন; তখন আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর যে কাজ, তাদের ওপর যে অর্পিত দায়িত্ব সে দায়িত্ব তারা পালন করবেন। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এখন অনেক সুদক্ষ। তাই অনুরোধ জানাবো তারা (রাজনৈতিক দল) যেন রাস্তায় চলাচল বন্ধ না করেন, ভাঙচুরে লিপ্ত না হন। আমাদের দিক থেকে কোনো জায়গায় কোনো বাধা নেই।
ডিএমপির দুটি ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সার্ভিলেন্স বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা। বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে ডিএমপির জলকামান, সাঁজোয়া যান, রেকার গাড়ি ও ব্যারিকেড। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
নির্বাচনের ঠিক কয়েক মাস আগে রাজধানীতে বড় দলের সমাবেশ কর্মসূচিকে ঘিরে নাশকতার চেষ্টা বা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টাকারীদের খুঁজে খুঁজে কঠোরভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি রয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আমাদের কাছে এই মুহূর্তে তেমন বড় কোনো থ্রেট নেই৷ তবে যেহেতু বড় দুটি দলের বড় সমাবেশ যে কোনো কুচক্রী মহল বা যে কেউ সমাবেশের সুযোগ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটাতে পারে। এজন্য পর্যাপ্ত পুলিশ, আনসার, র্যাব, এপিবিএন ও বিজিবি স্ট্যান্ডবাই থাকবে। আমরা সবসময় সতর্ক থাকবো, যেন কোনো দুষ্টুচক্র কোনো প্রকার দুর্ঘটনা ঘটাতে না পারে।
দুই দলের প্রতি অনুরোধ রেখে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ২৩টি শর্ত দেওয়া হয়েছে, শর্ত কেউ ভঙ্গ করবেন না। আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার মতো কোনো ধরনের কাজ করবেন না।
প্রস্তুত র্যাবের গোয়েন্দা ও স্পেশাল ইউনিট-র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জাগো নিউজকে বলেন, বড় রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে রাজধানী ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত পেট্রোলিং ও চেকপোস্ট স্থাপনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে। রাজধানীতে রোবাস্ট পেট্রোলসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট মোতায়েন করে গাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মাঠে গোয়েন্দারা কাজ করছেন, জনগণের জান-মালের নিরাপত্তায় ও যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে র্যাবের স্পেশাল ইউনিট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ডিএমপি সদরদপ্তর থেকে যে ২৩ শর্ত দেওয়া হয়েছে শর্ত অনুযায়ী সমাবেশ করলে পুলিশের কোনো বাধা থাকবে না। তবে কেউ যদি সমাবেশকে কেন্দ্র করে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় বিশেষ টিম প্রস্তুত। আশা করি- শান্তিপূর্ণভাবে শুক্রবার দিনটি পার হবে।
টিটি/এমকেআর/জিকেএস