ক্রমেই খারাপ অবস্থায় যাচ্ছে ঢাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি। রাজধানীর কিছু এলাকায় ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বেশি খারাপ অবস্থা জুরাইন-মুগদা এলাকার। এসব এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একাধিক ব্যক্তি মারা গেছেন। এছাড়া বাসাবো, সবুজবাগ এলাকায়ও ঘরে ঘরে ডেঙ্গুরোগী।
Advertisement
এসব এলাকায় বসবাসরতদের অভিযোগ, এডিস মশার লার্ভা বা মশা বাড়লেও সিটি করপোরেশন থেকে তেমন কোনো তৎপরতা নেই। দেওয়া হচ্ছে না মশার ওষুধ, এলাকায় ফগার মেশিনের দেখাই মিলছে না। এ পরিস্থিতিতে তাদের দাবি, দ্রুততম সময়ে মশা নিধন এবং সরকারিভাবে অস্থায়ী হাসপাতাল খুলে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
আরও পড়ুন>> ধারণক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশ শয্যায় ডেঙ্গু রোগী
কথা হয় মুগদা এলাকার বাসিন্দা আলমের সঙ্গে। তিনি থাকেন ঝিলপাড় এলাকায়। আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এখানে বসবাস করছি মশার সঙ্গে। এখানে কয়েল বা মশারি টাঙিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। মশারির চারপাশে মশা বসে থাকে। সুযোগ পেলেই কামড়াচ্ছে। এতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মুগদা হাসপাতালে। আমার ছেলে এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।’
Advertisement
সালাম নামে এ এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘মশা বাড়লেও এর প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সিটি করপোরেশন। স্থানীয় কাউন্সিলরের অফিসে সবাই জানাই, তবে কেন যেন কাজ হয় না। সবশেষ কোরবানির আগে মশা মারার জন্য ফগার মেশিন দেখা যায়, এরপর আর আসেনি।’
গলিপথে পানি জমে যাতে মশার লার্ভা জন্ম নিতে না পারে এজন্য স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে গলিপথ মেরামত করছেন। তবে পাশেই ময়লা-আবর্জনা ভর্তি ঝিল থাকায় এসব উদ্যোগও কোনো কাজে আসছে না। একটু বৃষ্টি হলেই ঝিলের মধ্যে পানি জমে, নতুন করে জন্ম নেয় মশা। ঝিল পরিষ্কার ও মশার ওষুধ স্প্রে করলে মশার কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে ধারণা তাদের।
আরও পড়ুন>> ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই
এ নিয়ে কথা হয় খান এ কামালের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের গলিপথে খানা-খন্দ থাকায় পানি জমে মশার জন্ম হয়। এজন্য আমরা কয়েকজন মিলে পথ পরিষ্কার (সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই) করে দিচ্ছি। কয়েকদিন আগে একজন মারা গেছেন। গত দুই-তিন দিনে ১১ জন ডেঙ্গু পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। যারা সবাই মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকেই নাপা ওষুধ খেয়েই ঘরোয়া চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
Advertisement
বাসাবো এলাকার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাসায় তিনজন জ্বরের রোগী। কেউই হাসপাতালে যেতে চাচ্ছে না, বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে ছোট ছেলের অবস্থা ক্রিটিক্যাল হওয়ায় মেডিকেলে ভর্তি করেছি।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা এত ট্যাক্স দেই তাহলে সেবা কোথায়। মশার যন্ত্রণায় রাত-দিন আতঙ্কে থাকি। মশা মারার ব্যবস্থা নেই। মশা মারার জন্য বাজেট করা হয় কিন্তু মশা মরে না। এর বিপরীতে নগরের অধিবাসীরা মারা যাচ্ছেন। এর প্রতিকার কী?’
শাহজাহানপুর বেনজীর বাগান এলাকার বাসিন্দা শিপন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। এখনো কোরবানির হাটের বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়নি এলাকায়। সেখান থেকে বৃষ্টির পানিতে মশা জন্মায়। আমরা কার কাছে বিচার দেবো, সবাই দেখেও দেখে না। মশা মারার জন্য কালে-ভদ্রে লোক আসে, তাও কয়েকটি বাসায় ফগার ভেড়ানো হয়, বাকিটা হয় না। আমাদের এলাকা পরিষ্কার করা হলে মশা কমে যাবে। সিটি করপোরেশনের কাছে এটাই আমাদের দাবি।’
আরও পড়ুন>> ঢাকার যে ১১ এলাকা থেকে ডেঙ্গুরোগী বেশি আসছেন
যাত্রাবাড়ী ও মুগদা এলাকাটি ডিএসসিসির অঞ্চল-৫ এর আওতাধীন। এ অঞ্চল থেকেই এসব এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানোসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, মশা নিধনে প্রতিদিন সকালে লার্ভিসাইড ছিটানো হচ্ছে, বিকেলে ফগিং করা হচ্ছে। এছাড়া মশা নিধনে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নিজ আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদের সচেতন এবং জরিমানা করা হচ্ছে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৫ হাজার ২৭০ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ হাজার ১৮৭ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১৪ হাজার ৮৩ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৫ জনে।
একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৭ হাজার ৬২২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৬ হাজার ৬৪৪ এবং ঢাকার বাইরের ১০ হাজার ৯৭৮ জন।
এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
ইএআর/এএসএ/জেআইএম