স্বাস্থ্য

‘পেঁপে পাতার রস খেলে প্লাটিলেট বাড়ে এটা প্রমাণিত না’

‘পেঁপে পাতার রসের বিষয়টি মালয়েশিয়ান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্র্যাকটিস করে। এছাড়া শ্রীলঙ্কার দিকে এ বিষয়টি প্রয়োগ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত পেঁপে পাতার রস খেলে যে প্লাটিলেট বাড়ে তা প্রমাণিত নয়। এটি যে গবেষণা হয়েছে তা মূলত ইঁদুরের ওপর গবেষণা। কিন্তু ডেঙ্গুরোগীর ওপর প্রয়োগে এর ফলাফল এখনো প্রমাণিত নয়।’

Advertisement

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক জাগো নিউজকে একথা বলেন।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ডেঙ্গু হওয়া রোগী যদি এই পেঁপে পাতার রসের ওপর বিশ্বাস করে চিকিৎসা থেকে দূরে থাকে, তাহলে এটি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন এর ওপর বিশ্বাস করে প্লাটিলেটের পরিমাণ চেক না করে থাকলে নিজের অজান্তে শরীরের কী ক্ষতি হচ্ছে তা আমরা খেয়াল করছি না।

আরও পড়ুন>> ‘ডেঙ্গুর শহর’ ঢাকা, জ্বর হলেই ছুট হাসপাতালে

Advertisement

তিনি জানান, নতুন করে পেঁপে পাতার রস দিয়ে তৈরি ওষুধও বাংলাদেশে পাওয়া যায়। বড় কোম্পানি এ ওষুধ বাজারে ছাড়ছে। তবে মূল বিষয় হলো, এখনো বিষয়টি মানুষের ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর এবং ডেঙ্গুর সময় এটি কত দ্রুত প্লাটিলেট বাড়ায় তা জানা যায়নি।

অন্যদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগীর অন্য মানুষ থেকে প্লাটিলেট নেওয়ার প্রয়োজন না থাকলেও দেওয়া হচ্ছে প্লাটিলেট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে মানুষের শরীরের প্লাটিলেট উৎপাদনের সক্ষমতা ব্যাহত হয়। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের প্লাটিলেট দিতে থাকলে দেশে রক্তদাতার সংখ্যা কমে যাবে। আর অতি প্রয়োজনীয় রোগীদের জন্য পাওয়া যাবে না রক্ত। তাই প্লাটিলেটের অযাচিত ব্যবহার রোধে চিকিৎসকদের নীতিমালা অনুসরণ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সঠিকভাবে তদারকির আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।

প্লাটিলেট কখন নেওয়া উচিত?শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় প্লাটিলেট দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গুরোগীর স্বজনরা প্লাটিলেট দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের চাপ দিচ্ছেন। চিকিৎসকরাও ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। চিকিৎসক চিন্তা করেন প্লাটিলেট ৪০ হাজার বা ৩০ হাজারে নেমে গেলে রোগীর স্বজনরা ভুল বুঝতে পারেন বা জটিলতা তৈরি হতে পারে। সেজন্য অনেক চিকিৎসক দেন। চিকিৎসক সিদ্ধান্তহীনতা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।

আরও পড়ুন>> ঢাকার যে ১১ এলাকা থেকে ডেঙ্গুরোগী বেশি আসছেন 

Advertisement

‘আবার এখানে প্লাটিলেট দেওয়া নিয়ে যে দুষ্কৃতকারী নেই তাও বলা যায় না। দেখা যায় অনেকে প্লাটিলেট ব্যবসায় জড়িত। প্লাটিলেট যত বেশি দেওয়া হবে হাসপাতালের তত লাভ। এতে দেখা যায় যিনি প্লাটিলেট নিতে বলছেন তিনিও কিছুটা বেনিফিটেড হন। এ প্রেক্ষাপটেই প্লাটিলেটের সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত চলে আসছে।’

তিনি বলেন, অকারণে প্লাটিলেট দেওয়ার ফলে রোগীর শরীর প্লাটিলেট উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এতে যে রোগীর চার-পাঁচ দিনে হাসপাতাল ছাড়ার কথা তিনি সাত-আট দিনে হাসপাতাল ছাড়ছেন। এই পুরো ব্যাপারটাই বেসরকারি হাসপাতালের লাভ, যা সব হাসপাতালে না হলেও অনেক হাসপাতালই এদিকে ঝুঁকেছে, যা বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে।

ডেঙ্গুর প্লাটিলেট প্রয়োগের জন্য যে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে তা মেনে চলাই নিরাপদ জানিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমলেও আবার সেটি তৈরি হয়। প্লাটিলেট যখন রোগীর শরীরে প্রয়োজন তখন তা কাজে লাগবে। অপ্রয়োজনীয়ভাবে যদি প্লাটিলেট দেওয়া হয় তখন শরীরের স্বাভাবিক প্লাটিলেট উৎপাদন ব্যাহত হয়। নতুন করে প্লাটিলেট উৎপাদনে সময় নেয় শরীর। রোগী সুস্থ হতে সময় লেগে যায়। ‘রোগীর অবস্থার ওপর প্লাটিলেট দেওয়া নির্ভর করে। অনেক সময় রোগীর প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও রক্তক্ষরণ হয় না। রক্তপাত না থাকলে প্লাটিলেট দিতে হবে না। আর রক্তপাত যে শুধু প্লাটিলেটের অভাবে হয় তাও নয়। ডেঙ্গুতে নানা কারণে রক্তপাত হতে পারে। এজন্য গাইডলাইনে বলা হয়েছে ডেঙ্গুরোগীর প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলে প্লাটিলেট দেওয়ার চিন্তা করার জন্য। আর ২০ হাজারের নিচে নামার পরে যখন রক্তপাত হয় তখন তার জন্য প্লাটিলেট দেওয়া যেতে পারে।’

এএএম/এএসএ/জিকেএস