রংপুরে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বিভাগের আট জেলার সরকারি হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল) রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭৯ জন। এর আগের দিন ভর্তি হয়েছেন ৫৫ জন। মৃত্যুর হার কম হলেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমছে না।
Advertisement
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। তাতে একদিকে ডেঙ্গু যেমন ভয়ংকর হয়ে উঠছে, তেমনি শহর ছাড়িয়ে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত দুইদিনে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৮ জন। এর আগের দুদিনে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ জন। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৬ জন।
এছাড়া রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩২ জন, নীলফামারীতে ৩১, লালমনিরহাটে ১৭, কুড়িগ্রামে ১০, গাইবান্ধায় ১৬, ঠাকুরগাঁওয়ে ১০ এবং পঞ্চগড়ে দুইজনসহ বিভাগের আট জেলায় চিকিৎসাধীন আছেন ১৬৩ জন।
Advertisement
গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৫৮০ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৪১৬ জন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। মারা গেছেন একজন। পরিসংখ্যান বলছে, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নীলফামারী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের কামরুল ইসলাম (৩৯) বলেন, আমি গত ছয় মাস নিজ এলাকার বাইরে কোথাও যাইনি। দুইদিন ধরে জ্বর কমছে না। এরপর হাসপাতালে এসে পরীক্ষার পর জানতে পারলাম ডেঙ্গু হয়েছে। এতদিন শুনতাম ডেঙ্গু জ্বর কেবল শহর এলাকাতেই হয়। এখন দেখি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. এ বি এম আবু হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, ধীর গতিতে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। যাদের অধিকাংশই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ডেঙ্গু রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মশারি না টানিয়ে ঘুমানোর প্রবণতা এবং মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা এর অন্যতম কারণ। ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন আবু হানিফ।
Advertisement
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, দেশে ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। বর্তমান সময়ে বর্ষাকাল বা বৃষ্টি এসবের সঙ্গে ডেঙ্গুর ততোটা সম্পর্ক নেই। কারণ ডেঙ্গু বিস্তারকারী এডিস মশার লার্ভা এখন জমে থাকছে নির্মাণাধীন ভবন, পরিত্যক্ত টায়ারসহ বিভিন্ন জায়গায়। আর এসব কারণে ডেঙ্গু হয়ে উঠেছে সারা বছরের রোগ। এটা কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, পুরো দেশের ঝুঁকির কারণ। এজন্য সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে না। মেডিসিন ওয়ার্ডে আলাদা করে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বাড়লে নতুন ওয়ার্ড চালু করে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হবে।
গত ৪ জুলাই সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান বুলেট লাল নামে এক যুবক (৩৮)। তিনি ঢাকার একটি সরকারি দপ্তরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। ঈদের ছুটিতে নগরীর পুরাতন সদর হাসপাতাল কলোনির বাড়িতে এসেই জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন মারা যান বুলেট।
জিতু কবীর/এমআরআর/জিকেএস