সরকারের পদত্যাগ এবং সংসদ বিপুপ্তির এক দফা সামনে রেখে ঢাকায় ২৭ জুলাই বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো যে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে, তাতে বিশৃঙ্খলার ‘গোয়েন্দা তথ্য’ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ। মহাসমাবেশের নামে যে কোনো নৈরাজ্য রুখতে একই দিন আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনও (ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ) ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে পাহারায় থাকবে। বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি এ কর্মসূচি ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও করণীয় নির্ধারণে দফায় দফায় জরুরি বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
Advertisement
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) পুঙ্খানুপুঙ্খ তল্লাশি নিশ্চিত করতে রাজধানীর চেক পোস্টগুলোতে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হবে। নিরাপত্তা জোরদারে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি থাকবেন সাদা পোশাকে কর্মকর্তারাও। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসানোর পাশাপাশি ঢাকার প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে মেটাল ডিটেক্টরসহ অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসাবে।
আরও পড়ুন: সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত বিএনপি
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো মহাসমাবেশের নামে ঢাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে নগরীকে অচল করে দিতে পারে- এমন আশঙ্কায় ২৭ জুলাই সকাল থেকে ঢাকা মহানগরজুড়ে পাহারা বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল রাজধানীতে নিজেদের শক্ত অবস্থান বজায় রাখবে। অন্যদিকে বিএনপিও মহাসমাবেশ ঘিরে কয়েক লাখ মানুষের জমায়েত করতে মরিয়া। দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকার একাধিক পয়েন্টে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Advertisement
পুলিশ বলছে, প্রায় দুই কোটির বেশি ঢাকার জনগণের নিরাপত্তায় প্রস্তত রয়েছে ডিএমপি। যে কোনো নাশকতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠেকাতে গোয়েন্দারা মাঠে সর্বদা কাজ করছেন। রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, সে অনুযায়ী মাঠে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। ঢাকার প্রবেশমুখ ও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হবে। এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হবে, যানজট পরিস্থিতি মোকাবিলা, নাশকতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মোকাবিলার কৌশলে পুলিশ আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। সাইবার স্পেসেও মনিটরিং করবে পুলিশ।
আরও পড়ুন: রাতে সংবাদ সম্মেলন করবে বিএনপি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কেউ কেউ অস্ত্র ও বিস্ফোরক সঙ্গে আনতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারে গোয়েন্দাদের নেতৃত্বে অভিযান চালানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সমাবেশের ফুটেজ ধারণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হবে ও সমাবেশস্থলের চারপাশে নজরদারি বাড়ানোর জন্য ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হবে। পুঙ্খানুপুঙ্খ তল্লাশি নিশ্চিত করতে চেক পোস্টগুলোতে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন রাখা হতে পারে।
Advertisement
একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ঢাকায় একযোগে প্রায় ৪২টি রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করবে। কর্মদিবসে এ ধরনের ব্যাপক কর্মসূচি ঢাকায় অচলাবস্থার সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকায় চূড়ান্ত আন্দোলন ঘিরে পরিকল্পনা বিএনপির-‘চলো চলো, ঢাকা চলো’ স্লোগান তুলে বিএনপির ৮২ সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীরা আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দেবেন। এরই মধ্যে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অথবা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। তবে ডিএমপির পক্ষ থেকে গোলাপবাগ মাঠে মহাসমাবেশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগামীকালের মহাসমাবেশ ঘিরে এক দফা দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: নয়াপল্টন-সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নয়, গোলাপবাগের পরামর্শ পুলিশের
রাজপথের দখল ছাড়বে না আওয়ামী লীগ-বিএনপির ঢাকায় মহাসমাবেশের দিনও রাজপথের দখল ছাড়বে না আওয়ামী লীগ। দলটির নেতাকর্মীরা মনে করছে, সরকারের পতন ও জাতীয় নির্বাচন পণ্ড করার লক্ষ্যে ২৭ জুলাই বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে। ২০১৩ সালের মে মাসে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে সরকারের পতন ঘটানোর যে চেষ্টা চালিয়েছিল, সেটি মাথায় আছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক জমায়েতের লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বাড়ছে উত্তেজনা, রাজপথে সহিংসতার আশঙ্কা-আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছেই। দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থানে সংকট সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ। রাজপথ দখলে ব্যস্ত দুদল। কয়েক মাস ধরে একইদিনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আসছে দুই দল। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়ছে উত্তেজনা। ২৭ জুলাই রাজধানীতে বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলো। এতে রাজপথে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
আগামীকাল একাধিক রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে এক ধরনের শঙ্কার পরিবেশ বিরাজ করছে। একদিকে ওয়ার্কিং ডে অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের সমাবেশ। বিএনপি, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও করণীয় নির্ধারণে দফায় দফায় জরুরি বৈঠক করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
আরও পড়ুন: মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ
বুধবার (২৬ জুলাই) দুপুর থেকে রাজধানীতে ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন সংস্থাটির গোয়েন্দা বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ, ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্সসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে রাজনৈতিক দলের সমাবেশের স্থান, কোন কোন দলকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে আর কোন দলকে অনুমতি দেওয়া হবে তা জানা যাবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি কর্মকর্তারা।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ভোগান্তি হলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে-বুধবার (২৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর লালবাগ হোসেনি দালান ইমামবাড়ায় পবিত্র আশুরা উদযাপন ও তাজিয়া মিছিল উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেন জনগণের ভোগান্তি না হয়, হলে বাধ্য হয়ে এসব কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ওয়ার্কিং ডে’তে বিশাল বিশাল জনসভা করে লাখ লাখ লোককে রাস্তায় আটকে রাখার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। তারা (রাজনৈতিক দল) যেন ভবিষ্যতে ওয়ার্কিং ডে’তে না দিয়ে বন্ধের দিনগুলোতে কর্মসূচি গ্রহণ করেন। যারা সমাবেশে আসবেন তারা যেন লাঠিসোঁটা বা ব্যাগ না নিয়ে আসেন। যেন বিস্ফোরক বা সাপোর্টাইজ না থাকতে পারে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২৭ জুলাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে রাজধানী ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। কেউ যেন অবৈধ অস্ত্র বা নাশকতা সৃষ্টির মত কোনো সামগ্রী নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য চেকপোস্ট বসিয়ে প্রবেশদ্বারগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, সংঘাত চায় না: কাদের
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচি ঘিরে আমরা সাইবার পেট্রোলিং করবো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো ধরনের অপপ্রচারের মাধ্যমে কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের নজরদারি থাকবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে কেউ যেন ফায়দা লুটতে না পারে সেদিকে নজরদারি রাখা হয়েছে। সাদা পুলিশের পাশাপাশি ইউনিফর্মেও পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কেউ যেন অস্ত্র বা বিস্ফোরকদ্রব্য বহন করতে না পারে সেদিকে পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। ঢাকা শহরের মধ্যে নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, সব ধরনের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও এখন পর্যন্ত নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বা প্রচেষ্টার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। জনগণের জানমাল রক্ষায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
আরও পড়ুন: আইনি লড়াইয়ে কোন পথে জামায়াত?
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমাবেশ করা দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার। একই ভাবে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা ঢাকা মহানগর পুলিশের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
বৃহস্পতিবার ঢাকার যেসব সড়ক এড়িয়ে চলবেন-# শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন রোড। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পারে বিএনপি।
# মৎস্য ভবন থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে পল্টন রোড। শিল্পকলা একাডেমির সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করতে পারে গণঅধিকার পরিষদ ও বাম গণতান্ত্রিক জোট।
# কাকরাইল হয়ে বিজয়নগর-পানির ট্যাংকি-পল্টন মোড়। বিজয়নগর মোড়ে ১২ দলীয় জোট, পানির ট্যাংকির সামনে ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং লেবার পার্টি সমাবেশ করতে পারে।
# কাকরাইল মোড় হয়ে নয়াপল্টন-ভিআইপি রোড। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে পারে বিএনপি।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ভোগান্তি হলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে
# রাজারবাগ মোড় থেকে ফকিরাপুল হয়ে বায়তুল মোকাররম রোড। আরামবাগে সমাবেশ করতে পারে গণফোরাম (মন্টু নেতৃত্বাধীন)।
# গুলিস্তান থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হয়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করতে পারে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ।
টিটি/এমকেআর/জেআইএম