আন্তর্জাতিক

অবশেষে পদত্যাগ করছেন এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী

পদত্যাগ করতে চলেছেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। দীর্ঘ ৩৮ বছর ক্ষমতায় থাকা এ নেতা নিজেকে এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী বলে দাবি করে থাকেন। প্রায় চার দশক পর অবশেষে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রিত্ব হুন সেন পরিবারের বাইরে কারও কাছে যাচ্ছে না। নিজে পদত্যাগ করে ছেলের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন কম্বোডিয়ান নেতা।

Advertisement

বুধবার (২৬ জুলাই) বিবিসি জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন হুন সেন এবং ছেলের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন।

প্রতিযোগিতাবিহীন এক নির্বাচনে হুন সেনের দল সব আসনে বিজয়ী হওয়ার মাত্র তিন দিন পরেই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের এই ঘোষণা সামনে এলো। বিতর্কিত ওই নির্বাচনের পর কম্বোডিয়ার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং অন্যান্য সহায়তায় বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুন>> যেভাবে ক্ষমতায় এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী

Advertisement

৭০ বছর বয়সী হুন সেন ১৯৮৫ সাল থেকে কম্বোডিয়া শাসন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই দীর্ঘ সময় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করেই কম্বোডিয়ার ক্ষমতা ধরে রেখেছেন তিনি। রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাগারে পাঠিয়ে, নির্বাসিত করে বা তাদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে ক্ষমতার শীর্ষে নিজের অবস্থান অক্ষুণ্ন রাখেন এ নেতা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমানে কম্বোডিয়া একটি একতান্ত্রিক, একদলীয় দেশে পরিণত হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী হুন সেন কোনো স্বৈরশাসকের চেয়ে কম নন।

২০২১ সালে প্রথমবার ক্ষমতা হস্তান্তরের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন হুন সেন। কিন্তু বুধবারের আগ পর্যন্ত কেউ জানতেন না সেটি কবে ঘটবে।

বড় ছেলে হুন ম্যানেটই হুন সেনের উত্তরসূরী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তাকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করা হচ্ছিল। কিছু দিন আগে পর্যন্ত রয়্যাল কম্বোডিয়ান সেনাবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন হুন ম্যানেট।

Advertisement

আরও পড়ুন>> কম্বোডিয়ায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র, বন্ধ বৈদেশিক সহায়তা

বুধবার হুন সেন ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করবেন তার ছেলে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক বিশেষ ঘোষণায় তিনি বলেন, আমি জনগণকে বলতে চাই, আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর থাকবো না।

হুন সেন বলেন, তিনি পদত্যাগ করার কারণ দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টির নেতার পদটি ধরে রাখছেন তিনি।

৪৫ বছর বয়সী হুন ম্যানেট সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রচারণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। সমাবেশগুলোতে তাকে প্রায়ই তার বাবার পাশে দেখা যেতো।

আরও পড়ুন>> ভোটে হেরে রাজনীতি ছাড়ছেন থাই প্রধানমন্ত্রী

গত ২৩ জুলাইয়ের নির্বাচনে যে সিপিপি ফের জিতবে, তা আগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। কারণ, তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো ক্ষমতাধর একমাত্র বিরোধী দলকে নির্বাচনের আগেই অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল।

নির্বাচনে আরও ১৭টি দল থাকলেও তারা ছিল হয় খুবই ছোট, নাহয় সিপিপির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ফলে অনেকটা একতরফা নির্বাচনে সব আসনে জয়ী হয় হুন সেনের দলটি।

এর পরপরই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার অভিযোগে কম্বোডিয়ার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে বেশ কিছু সহায়তা কর্মসূচিও স্থগিত ঘোষণা করে হোয়াইট হাউজ।

কেএএ/