জাগো জবস

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি: বাংলাদেশ বিষয়াবলি

শিগগির শুরু হতে যাচ্ছে ৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি। এ নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে ভালো করার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ৪০তম বিসিএসের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউল হাসান সৌরভ—

Advertisement

বাংলাদেশ বিষয়াবলিপ্রথমেই মাথায় রাখুন, বাংলাদেশ বিষয়াবলির লিখিত সিলেবাসটি আদতে যতটা বড় মনে হয়, আসলে কিন্তু তা নয়। কারণ এই সিলেবাসের একটি অংশ আপনি ইতোমধ্যেই প্রিলিমিনারিতে পড়ে ফেলেছেন। এছাড়া অনেকগুলো অংশ আপনি বাংলা ও ইংরেজি রচনার সাথে সামঞ্জস্য খুঁজে পাবেন। মোটকথা, আমি চেষ্টা করবো যেন সাবজেক্টটি আমার কাছে যতটা কঠিন লেগেছিল, লেখাটি পড়ে আপনার জন্য অনেকাংশেই সহজ হয়ে যায়। আপনি যেন পুরো বিষয়টির একটা খসড়া পরিকল্পনা নিজেই করে ফেলতে পারেন। তাই আপনার লিখিত সিলেবাস হাতে নিন।

লক্ষ্য করুন১. মোট ১৪টি অধ্যায় রয়েছে লিখিত সিলেবাসে, যার মধ্যে অধ্যায় ৩, অধ্যায় ৯ (আন্তর্জাতিকে এ চ্যাপ্টার পাবেন) ও অধ্যায় ১৪ (আন্তর্জাতিকে এ চ্যাপ্টার পাবেন) না পড়লেও হবে।

২. অধ্যায় ৫, অধ্যায় ১২ ও অধ্যায় ১৫ এর জন্য ০৩টি রচনা রেডি করুন: ক. জলবায়ু পরিবর্তন (অধ্যায় ৫)খ. ডিজিটাল বাংলাদেশ (অধ্যায় ১২) ওগ. নারীর ক্ষমতায়ন (অধ্যায় ১৫)রচনাগুলো এমনভাবে পড়ুন, যেন ০৩টি অধ্যায় থেকে পূর্বের বিসিএসে যা যা প্রশ্ন এসেছে, তার উত্তর কাভার হয়ে যায়।

Advertisement

৩. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো হচ্ছে ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নং অধ্যায়, যেখানে আপনার বেশি সময় দিতে হবে।বাংলাদেশের অর্থনীতি (৪ অধ্যায়) ডাটা নির্ভর অধ্যায়, তাই এটি যথাযথভাবে নোট করলে আপনি ব্যাংক ফোকাস রাইটিংসহ যে কোনো লিখিততে কাজে লাগাতে পারবেন। পুরো বিসিএসের লিখিততে আপনি ডাটার জন্য নির্ভর করতে পারেন শুধু এ অধ্যায়ের ওপর।প্রাকৃতিক সম্পদ (৬ নং অধ্যায়) চ্যাপ্টারে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের উপখাতভিত্তিক সম্ভাবনা, সাফল্য, সরকারের পদক্ষেপ ও চ্যালেঞ্জসমূহ নোট করুন।সংবিধান (৭ নং অধ্যায়) এর জন্য বিগত প্রশ্নই যথেষ্ট। তবে, আপনি যদি সংবিধান (১ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদ) ভালোভাবে পড়তে পারেন, তাহলে বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক ও বাংলা-ইংরেজি রচনা সবকিছুতেই যে কোনো টপিকে সংবিধানের উল্লেখ করতে পারবেন এবং উত্তরের কোয়ালিটি এতে বেড়ে যাবে।সরকারের অঙ্গসমূহ (৮ নং অধ্যায়) থেকে বিগত প্রশ্ন ভালোভাবে পড়ুন, যাতে সংবিধানের অনুচ্ছেদ উল্লেখপূর্বক উত্তর করতে পারেন।মুক্তিযুদ্ধ (১৬ নং অধ্যায়) নিয়ে আপনি অলরেডি প্রিলিমিনারিতে বিস্তৃত আকারে পড়েছেন এবং আপনি যা জানেন, তা কখনোই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর করতে পারবেন না। তাই সঠিকভাবে জানুন ও পরিকল্পনা করে রাখুন পরীক্ষার হলে ৫ মার্কের জন্য বরাদ্দকৃত ৬ মিনিটে কতটুকু সুনির্দিষ্টভাবে লিখবেন এবং ১০ মার্কের জন্য বরাদ্দকৃত ১২ মিনিটে কোন কোন কোটেশন বা মূল কথাগুলো লিখবেন।

৪. বাকি আছে ১, ২, ৩, ১০, ১১, ১৩- এ ০৬টি অধ্যায়। এ অধ্যায়গুলোতে পড়া কম, কনসেপ্ট থেকে লিখতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কোটেশনসহ সংজ্ঞা ব্যবহার করবেন। বিগত প্রশ্ন চোখ বোলালেই এতে আপনার প্রিপারেশন হয়ে যাবে।

পরিশিষ্ট১. বাংলাদেশ বিষয়াবলি পরীক্ষায় আপনার প্রেজেন্টেশন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সময় কম, অল্প সময়ের মধ্যে তথ্য দিতে হবে। এমনভাবে আপনার তথ্য উপস্থাপন করুন, যেন Key points-গুলো পরীক্ষকের নজরে পড়ে। তাই মূল কথার নিচে দাগ দিয়ে দিতে পারেন।

২. কোনো প্যারা না দিয়ে শুধু টানা লিখে গেলে সেটি পরীক্ষকের খাতা মূল্যায়নেরর ক্ষেত্রে একঘেয়েমি তৈরি করতে পারে। তাই প্যারা দিন, পয়েন্ট করে লিখুন।

Advertisement

৩. ডাটা দিলে সেটি ব্যাখ্যা করুন। মনে রাখবেন, ডাটা আপনার প্রশ্নের যৌক্তিকতা বৃদ্ধি করে, কিন্তু ডাটা ব্যাখ্যা না করা হলে তাতে উত্তরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। লেখায় ডাটা ও ব্যাখ্যার মিশেল লেখার গুণগত মান বৃদ্ধি করে। ডাটা অবশ্যই সূত্রসহ উল্লেখ করুন। টেবিল আকারে চার্ট বা গ্রাফ দিলে অবশ্যই ক্যাপশন দিতে ভুলবেন না যেন।

ডাটা ও গ্রাফের ব্যাপারে আমার নিজস্ব মতামত হচ্ছে, ডাটাগুলো নিজের মতো সহজ করে পড়ুন। যেমন, ২৮২৪ মিলিয়ন ডলারকে আপনি ২.৮ বিলিয়ন পড়ুন, এতে করে গত ৫ বছরের ডাটা আপনি সহজেই মনে রাখতে পারবেন। পরিমিত ডাটা + যুক্তিসঙ্গত লেখা লিখবেন আপনি। পেপার নিয়মিত পড়লে আপনি সহজেই বিশেষজ্ঞদের কোটেশন প্রয়োগ করতে পারবেন।

৪. একটি খাতায় শুধু এ টপিক বা ডাটাগুলো লিখে ফেলুন ও আয়ত্ত করে ফেলুন: রূপকল্প ২০৪১ এর অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক ডাটা, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সমীক্ষা, এসডিজি ২০৩০ ও বাংলাদেশের অর্জন, মেগাপ্রজেক্ট (খরচ ও কমপ্লিট হওয়ার সম্ভাব্য সাল), বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০, সমুদ্র অর্থনীতি, বাজেট। আমার বিশ্বাস, কোনো লেখা বা রচনা এ টপিকগুলোর একটি দিয়ে শুরু করলে তা পরীক্ষককে মুগ্ধ করবে।

৫. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুটি (০২) করে চারটি (০৪) ইংরেজি কোটেশন মুখস্থ করে ফেলুন এবং যে কোনো একটি দিয়ে আপনি যে কোনো রচনা বা প্রশ্নের উত্তর শুরু করতে পারেন। একটু বুঝিয়ে দিলে হয়তো বুঝতে পারবেন। ধরুন, পরীক্ষায় এসেছে ‘ঋণ খেলাপি’ বিষয়ক প্রশ্ন বা রচনা। আপনি শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রীর কোটেশনটি দিয়ে: ‘Let’s forget all our differences and work shoulder to shoulder to transform Bangladesh into a hunger-free, poverty-free, golden Sonar Bangla being inspired by the spirit of Liberation War.’

দেখুন, বাহ্যিকভাবে মনে হতে পারে, ঋণ খেলাপির সাথে এই কোটেশনের সম্পর্কটা কী? কিন্তু চিন্তা করলে দেখতে পাবেন যে,এখানে ঋণ খেলাপি না হওয়ার সাথে প্রধানমন্ত্রীর সোনার বাংলা গড়ার যে পজিটিভ সম্পর্ক, এর মধ্য দিয়েই আপনার কোটেশনের প্রাসঙ্গিকতা ফুটে উঠবে এবং দারুণভাবে আপনি উত্তর শুরু করতে পারবেন। আমি বলতে চাচ্ছি, আপনি প্রিপারেশন নেবেন সহজ, কিন্তু পরীক্ষায় যা-ই আসুক না কেন, আপনার দুই-চারটা জানা জিনিসকে বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রয়োগ করবেন।

৬. অবশ্যই প্রতিদিন বাংলা ও পুরো সপ্তাহে অন্তত একটি ইংরেজি পত্রিকার ১৪-১৫টি কলাম পড়বেন। এতে আপনার বাংলা ও ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের প্রয়োগ উন্নত হবে। আমি মনে করি, পরীক্ষকরা যখন দেখতে পান কোনো প্রার্থী প্রচলিত ধারণার বাইরে কোনো বিষয়কে বিভিন্ন আঙ্গিকে সাহিত্যসমৃদ্ধ লেখা লিখতে পারছেন, সেটিকে তারা পজিটিভলি মার্কিং করে থাকেন। তাই দৈনিক পত্রিকা পড়ুন, পত্রিকার লেখাকে আপনার স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে মাপুন।

৭. খাতায় উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পয়েন্ট দিয়ে ও প্যারা আকারে লিখতে পারেন, তাহলে সহজেই তা পরীক্ষকের নজরে আসবে।

৮. খাতায় বিভিন্ন রঙের কলম অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। আমার ধারণা, এতে অনেক সময় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আগের পর্ব> বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি: বাংলা> বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি: ইংরেজি> বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি: গণিত

এসইউ/এএসএম