স্বাস্থ্য

প্রতি তিনজনে দুজন ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি

বারো ঘণ্টায় রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যতজন রোগী ভর্তি হয়েছেন— এরমধ্যে প্রতি তিনজনে দুজনই এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। বাকি একজনের উপসর্গ অন্য রোগের। ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া দুজনের মধ্যে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত— সেটাও এসময়ের মধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্তের রিপোর্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে আসা সবাই জ্বরে আক্রান্ত।

Advertisement

সোমবার (২৪ জুলাই) সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার পর্যন্ত হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সরেজমিনের চিত্র এটি।

আরও পড়ুন>> ডেঙ্গুর চিকিৎসা খরচ জোগাতে নাভিশ্বাস নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে

এসময়ে ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ১০৭ জন রোগী ভর্তি হন। তাদের ৭৭ জন ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে ২২ জনের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডেঙ্গু আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকিরা ভর্তি হয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাচ্ছেন।

Advertisement

এসময়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক আবুল হাসেম জাগো নিউজকে বলেন, যা ভর্তি করেছি, এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি ডেঙ্গু সাসপেকটেড। আর সম্পূর্ণ ভর্তির মধ্যে অর্ধেক কনফার্ম ডেঙ্গু।

আরও পড়ুন>> ডেঙ্গুতে একদিনে ১৬ মৃত্যু, ২০০ ছাড়ালো প্রাণহানি

তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই ডেঙ্গুরোগী বাড়ছে। আমাদের হাসপাতালে এখন বেড দিতে সমস্যা হচ্ছে। ডেঙ্গু ওয়ার্ড অনেক আগেই রোগীতে পরিপূর্ণ হয়েছে। এখন কেবিন ও অন্যান্য ওয়ার্ডেও ডেঙ্গুরোগী রয়েছেন।

তবে, ঠিক সন্ধ্যার সময় পর্যন্ত হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে মোট কতজন ডেঙ্গুরোগী ছিল এর সঠিক হিসাব জানা যায়নি। সোমবার ভোর পর্যন্ত ওই হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ছিল ২০৬ জন। সারাদিনে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের সংখ্যা যুক্ত করলে প্রায় ৩০০ কাছাকাছি হবে। আর ওই সময়ে হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৪০ জন।

Advertisement

আরও পড়ুন>> ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়: মন্ত্রী

সরেজমিনে দেখা যায়, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ডেঙ্গু বিশেষায়িত ওয়ার্ডের প্রতিটি বেডে রোগী রয়েছে। একটি ওয়ার্ডে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের সবখানে রয়েছে ডেঙ্গুরোগী। কেবিনগুলোর অধিকাংশ ডেঙ্গুর রোগীর দখলে।

ডেঙ্গু বিশেষায়িত ওয়ার্ডের নার্সদের রুমের সামনে রোগী ও স্বজনদের ভিড় দেখা যায়। দায়িত্বরত নার্সরা তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ ছুটছেন জ্বর মাপার মেশিন নিয়ে, কেউবা ব্লাড দেওয়া অথবা বন্ধ করা নিয়ে ব্যস্ত। এখানে বেশকিছু মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরাও দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুন>> মশা নিধন বরাদ্দে আছে, প্রয়োগে নেই

নামপ্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বরত একজন নার্স বলেন, এ ওয়ার্ডে (ডেঙ্গু বিশেষায়িত ওয়ার্ড) বেড সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তাই রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা। সবাই অতিরিক্ত সময় ডিউটি করছেন। সবকিছু মিলিয়ে কঠিন সময় যাচ্ছে।

হাসপাতালে কথা হয় মুন্সিগঞ্জ থেকে ডেঙ্গু চিকিৎসা নিতে আসা মিজান হোসেনের স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় আসা-যাওয়ার মধ্যে তার (স্বামীর) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। শনিবার (২২ জুলাই) রাতে জ্বর বাড়লে তাকে হলি ফ্যামিলিতে নিয়ে আসি। আজ তার অবস্থা কিছুটা ভালো।

আরও পড়ুন>> ঢাকার দুই মেয়রের পদত্যাগ দাবি তাবিথ-ইশরাকের

তিনি বলেন, এলাকার হাসপাতালে ভরসা না পেয়ে ঢাকায় আসা। এ হাসপাতালে অনেকে রোগীই ঢাকার বাইর থেকে এসেছেন।অন্যদিকে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সোমবার (২৪ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০১ জনে। এছাড়া একই সময়ে নতুন করে দুই হাজার ৪১৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা একদিনে এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগের দিন সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হন দুই হাজার ২৯৩ জন।

এনএইচ/এমএএইচ/এমএস