আইন-আদালত

দানকরের ১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা পরিশোধ করলেন ড. ইউনূস

উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে দান করা অর্থের বিপরীতে তিন করবর্ষে আয়কর কর্তৃপক্ষ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আরোপিত ‘দানকর’ এর ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকা পরিশোধ করেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Advertisement

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের প্রিন্সিপাল শাখার পে-অর্ডারের মাধ্যমে এ টাকা পরিশোধ করেন তিনি। ড. ইউনূসের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মো. রুহুল আমীন সরকার আয়কর অধ্যাদেশ ১৭৪ (২) ধারানুযায়ী উপকর কমিশনার সার্কেল ২৮৭ কর অঞ্চল-১৪ বিজয়নগর বরাবর এ অর্থ পরিশোধ করেন।

পরে বকেয়া দানকর পরিশোধ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) প্রাপ্তি স্বীকারের জন্য চিঠি লিখে অনুরোধ জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার পক্ষে চিঠিতে সই করেছেন রুহুল আমিন সরকার।

এতে বলা হয়, বকেয়া দানকর পরিশোধের জন্য যে নোটিশ দিয়েছিলেন পরবর্তীতে ওই বকেয়া দানকর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে করদাতা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ওই দানকর মামলাটি হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন, যা করদাতা সংবাদমাধ্যমে অবহিত হয়েছে।

Advertisement

এতে আরও বলা হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগের রায় অনুযায়ী গত ১৮ জুন বকেয়া ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকা দেওয়ার নোটিশ ইস্যু করা হয়। এ অবস্থায় বকেয়া দানকর ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকা সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের প্রিন্সিপাল শাখার পে-অর্ডারের (নম্বর-পিও ৩৬২০১৭০) মাধ্যমে পরিশোধ করা হলো।

এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আরোপিত দানকর বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গত রোববার (২৩ জুলাই) আবেদনটি খারিজ করে দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে, ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সরদার জিন্নাত আলী। গত ২১ জুন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করা হয়। এরপর চেম্বার আদালত বিষয়টি আপিলের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালের দানকর আইন অনুযায়ী ২০১১-২০১২ করবর্ষে ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দানের বিপরীতে প্রায় ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, ২০১২-২০১৩ করবর্ষে আট কোটি ১৫ লাখ টাকা দানের বিপরীতে এক কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার টাকা এবং ২০১৩-২০১৪ করবর্ষে সাত কোটি ৬৫ হাজার টাকা দানের বিপরীতে এক কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ দেয় এনবিআর।

Advertisement

দানের বিপরীতে কর দাবি করে এনবিআরের এসব নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ড. ইউনূস। তার দাবি, আইন অনুযায়ী দানের বিপরীতে এনবিআর এ কর দাবি করতে পারে না।

২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর ড. ইউনূসের আবেদন খারিজ করেন আদালত। পরে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা করেন তিনি। মামলাগুলোর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দানকর দাবির নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে ২০১৫ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

পরে রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মৃত্যু ও পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ চিন্তা করে ড. ইউনূস নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে যে টাকা দান করেছেন, সেই দানের বিপরীতে এনবিআরের আরোপ করা দানকর বৈধ ঘোষণা করে গত ৩১ মে রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন ড. ইউনূস। তবে, ড. ইউনূসের আবেদনটি খারিজ করে দেন আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে এখন তিনি বকেয়া দানকর পরিশোধ করলেন।

এফএইচ/এমএএস/এমএএইচ/এএসএম