মাওলানা আব্দুল্লাহ সালমান
Advertisement
আরবি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। এটি একটি বরকতময় মাস। আরবি বার মাসের মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চারটি মাসকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম মাস মহররম। পবিত্র কোরআনে সুরায়ে তাওবার ৩৬তম আয়াতে আল্লাহ বলেন-
اِنَّ عِدَّۃَ الشُّهُوۡرِعِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِیۡ کِتٰبِ اللّٰهِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ
‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে নিশ্চয়ই মাসসমূহের সংখ্যা হল বারো মাস। এর মধ্যে চারটি মাস হল নিষিদ্ধ (পবিত্র)।’
Advertisement
আশুরা শব্দের অর্থ দশম। মোবারক এ মাসের দশ তারিখকে আশুরা বলে। আল্লামা নববি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তাসুআ, আশুরা দুটি মদ্দযুক্ত নাম। অভিধানের গ্রন্থাবলিতে এটিই প্রসিদ্ধ। আশুরা হচ্ছে মহররম মাসের দশম দিন। আর তাসুআ সে মাসের নবম দিন। জমহুর ওলামারাও তা-ই বলেছেন। হাদিসের আপাতরূপ ও শব্দের প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক চাহিদাও তাই। ভাষাবিদদের নিকট এটিই প্রসিদ্ধ।
বছরের ফজিলতপূর্ণ দিনগুলোর মধ্য থেকে আশুরা অনন্য। এ দিন রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের কিতাবাদিতে বেশ কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা রাখা সবার জন্যে জরুরি ছিল। এব্যাপারে বুখারির বর্ণনা এমন-
عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَصُومُهُ قُرَيْشٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُهُ، فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ صَامَهُ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ، فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تَرَكَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَمَنْ شَاءَ صَامَهُ، وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ.
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জাহিলিয়াতের যুগে কুরাইশগণ আশুরার রোজা পালন করতো এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এদিন রোজা রাখতেন। যখন তিনি মদিনায় আগমন করেন তখনও এ রোজা পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরার রোজা ছেড়ে দেওয়া হলো, যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না।’
Advertisement
এরপর থেকে এদিন রোজা রাখা যদিও জরুরি নয় কিন্তু অধিক ফজিলতপূর্ণ। এ ব্যাপারে হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ، فَرَأَى الْيَهُودَ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ " مَا هَذَا ". قَالُوا هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ، هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ، فَصَامَهُ مُوسَى. قَالَ " فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ ". فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ.
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইহুদিগণ আশুরার রোজা পালন করে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর কেন?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মুসা (আলাইহিস সালাম) রোজা পালন করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসার বেশি কাছাকাছি। এরপর তিনি এ দিনে রোজা পালন করেন এবং রোজা পালনের নির্দেশ দেন।’ (বুখারি)
আশুরার রোজা দ্বারা পেছনের এক বছরের গুনাহ মাফ হয়। এ ব্যাপারে হজরত কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে-
صيام يوم عاشوراء أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله
‘আশুরার রোজা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফফারাহ হয়ে যাবে।’ (মুসলিম)
যেহেতু এদিনে ইহুদি এবং মুশরিকরাও রোজা রাখে তাই আমাদের জন্য উচিত, তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা এড়িয়ে চলা। সুতরাং আশুরার দিনের সঙ্গে আগের দিন অর্থাৎ মহররমের ৯ তারিখ অথবা পরের দিন অর্থাৎ ১১ তারিখের রোজা রাখা উত্তম।
আশুরার রোজা রাখার পদ্ধতি সম্পর্কে হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে-
عن بن عباس - رضى الله عنهما - يقول حين صام رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم عاشوراء وأمر بصيامه قالوا يا رسول الله إنه يوم تعظمه اليهود والنصارى . فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم " فإذا كان العام المقبل - إن شاء الله - صمنا اليوم التاسع " . قال فلم يأت العام المقبل حتى توفي رسول الله صلى الله عليه وسلم.
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আশুরার দিন রোজা পালন করেন এবং লোকদেরকে রোজা পালনের নির্দেশ দেন। তখন সাহাবিগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইহুদি এবং নাসারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইন শা আল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও রোজা পালন করবো। বর্ণনাকারী বলেন, এখনও আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকাল হয়ে যায়।’ (মুসলিম)
আমাদের সামনে ফজিলতপূর্ণ দিনটি উপস্থিতি হতে যাচ্ছে। আগামি ২৯ জুলাই শনিবার এ বছরের আশুরা। হাদিসের তথ্যমতে মর্যাদাপূর্ণ ১০ই মহররম আমরা আশুরার রোজা পালন করে আমাদের আমলনামায় এ দিনের সওয়াব যুক্ত করার চেষ্টা করব।
পাশাপাশি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইচ্ছানুযায়ী শনিবারের সঙ্গে শুক্রবার অর্থাৎ মুহররামের ৯ তারিখও রোজা রাখবো। আর শুক্রবার সম্ভব না হলে আশুরার পরদিন রোববার অর্থাৎ ১১ তারিখ রোজা পালনে সচেষ্ট থাকবো। যাতে করে ইহুদি ও নাসারাদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আশুরার রোজা পালনের তাওফিক দান করুন। আমাদের এ রোজাকে কবুল করে সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করুন। আমিন।
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া মাহমুদিয়া ইসলামিয়া, সোবহানীঘাট, সিলেট।
এমএমএস/এএসএম