দেশজুড়ে

ক্যাকটাসের কাঁটার প্রেমে হিরা

সেই ছোট্ট বেলা থেকেই ক্যাকটাস ভীষণ প্রিয় হিরার। যখন যেখানে গিয়েছেন সেখান থেকেই ক্যাকটাস গাছ সংগ্রহ করেছেন। বর্তমানে তার সংগ্রহে আছে প্রায় ৩৫ ধরনের ক্যাকটাস। সঙ্গে রয়েছে নানা ধরনের ফুল ও ফলের গাছ। চাকরির পাশাপাশি সংসার সামলে গাছের যত্ন নেন এই ক্যাকটাসপ্রেমী সুবর্ণা হাই হিরা।

Advertisement

মাদারীপুর শহরের কুকরাইল এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. হাই হাওলাদার ও মাদারীপুর জেলা শিশু একাডেমীর নৃত্য প্রশিক্ষক তাসলিমা হাইয়ের বড় মেয়ে সুবর্ণা হাই হিরা। বর্তমানে মাদারীপুর নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডাব্লিউতে চাকরি করছেন হিরা। এছাড়াও তিনি মাদারীপুরের আবৃত্তি সংগঠন উদ্ভাসের সহ-সভাপতি, উদীচি মাদারীপুর জেলা শাখার আবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদকসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন। তিনি তার মনোমুগ্ধকর কণ্ঠের জাদুকরি আবৃত্তিতে সহজেই মানুষের মন জয় করে নেন। ২০০৩ সালে মাদারীপুর সদর উপজেলার কলাবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী এমএম ফিরোজের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হ্যাভেন নামে এক ছেলে রয়েছে তাদের।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনার সময় থেকেই গাছের প্রতি ভীষণ দুর্বলতা ছিল হিরার। তখন থেকেই কোনো ফুলের গাছ দেখলেই বাড়িতে নিয়ে আসতেন। এরপর ১৯৯৫ সালে অস্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ক্যাকটাস দেখে তার প্রেমে পড়ে যান হিরা। এরপর থেকে শুরু হয় তার ক্যাকটাস সংগ্রহ। বিভিন্ন সময় বাবার কাজের জন্য, চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে তাদের। তখন ট্রাকে করে তার গাছ আনা-নেওয়া করতে হয়েছে। এতে করে অনেক গাছ মারা গেছে আবার অনেক গাছ হারিয়েও গেছে।

বর্তমানে তার সংগ্রহে আছে ক্যাকটাস প্রায় ৩৫ ধরনের, কাটামুকুট ২৬ ধরনের, বাগান বিলাশ ২৬ ধরনের, কাঠগোলাপ ৫ ধরনের, টগর ৫ ধরনের, বেশ কিছু বনসাই, এডুনিয়াম, সেনসিভিয়া, মাধবীলতা, জুইসহ নানা ধরনের ফুলের গাছ। পাশাপাশি কালো রঙসহ ৫ ধরনের পেয়ারা, নানাজাতের আম গাছসহ সবজির বাগান। আরও আছে বেশ কয়েক ধরনের কবুতর।

Advertisement

সুবর্ণা হাই হিরা বলেন, ছোটবেলা থেকেই গাছকে ভালোবেসেছি। তাই শখের বসেই এই গাছগুলো সংগ্রহ করেছি। আরও অনেক গাছ ছিল কিন্তু চাকরি ও সংসার সামলে হিমশিম খেতে হয়। গাছগুলোকে সন্তানের মতোই যত্ন করতে হয়। বাড়িটা বেশ বড় হওয়ায় ছাদ বাগানের পাশাপাশি ঘরের চারপাশে খোলা জায়গাতেও বাগান করেছি। অনেকেই আমার বাগান দেখতে আসেন।

যখন বাগান শুরু করি, তখন তেমন একটা নার্সারি ছিল না। মাথায় ডালিতে করে ঘুরে ঘুরে গাছ বিক্রি করা হতো। তখন আমার আব্বু রাস্তায় কোনো গাছ বিক্রির ফেরিওয়ালা দেখলেই আমার জন্য বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসতেন। আমার পছন্দমতো গাছ কিনে দিতেন। আব্বু নিজেও গাছের যত্ন নিতেন আর আমাকেও অনেক সহযোগিতা করতেন।

তিনি আরও বলেন, আমার পছন্দের তালিকায় রয়েছে ক্যাকটাস গাছ। অনেকেই বলেন সবাইতো সাধারণ ফুলগাছ পছন্দ করেন। আপনি কেন ক্যাকটাস পছন্দ করেন। আসলে কাটাযুক্ত নানা ধরনের গাছে ফুল ফুটলে আমার কাছে মনে হয়, যেন পাথরের গাছে ফুল ফুটেছে।

স্থানীয় পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ফ্রেন্ডস অব নেচারের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রাজন মাহমুদ বলেন, আমি কয়েকদিন আগে হিরার গাছ দেখতে গিয়েছিলাম। তার কাছে বেশ কিছু ক্যাকটাসসহ নানাজাতের গাছ আছে। যা দেখে ভালো লেগেছে। আসলে বর্তমানে যেভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে তাতে করে আমাদের সবার উচিত ছাদবাগানসহ যার যতটুকু খালি জায়গা আছে, সেখানে গাছ লাগানো।

Advertisement

মাদারীপুরের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, সাধারণত বাগান করতে পুরুষদের বেশি দেখা দেয়। কারণ গাছ কেনা, লাগানো, তার যত্ন করতে সময় ও কষ্টের ব্যাপার। সেখানে সুবর্ণা হাই হিরা নিজ উদ্যোগে এত গাছ সংগ্রহ করেছেন, এটা অবশ্যই প্রসংশীয়।

এফএ/এএসএম