চলতি অর্থবছর থেকে জমি কেনার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সবক্ষেত্রেই উৎসে কর বাড়ানো হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করহার বাড়ানোর ঘোষণার পর গত ১৭ জুলাই ‘উৎসে কর বিধিমালা, ২০২৩’ এর সংশোধনের গেজেট প্রকাশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
Advertisement
সংশোধিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, ‘রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৯০৮’ অনুযায়ী দলিল নিবন্ধনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নিবন্ধন কর্মকর্তা নির্ধারিত করহার পরিশোধ ছাড়া কোনো দলিল-দস্তাবেজ নিবন্ধন করবেন না।
এখন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ওপর উৎসে কর ৪ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ের পৌরসভার অন্য এলাকায় এ হার ৩ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের পৌরসভায় ৪ শতাংশ এবং অন্য এলাকা ১ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ উৎসে করা নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: অর্থবছর অনুযায়ী দিতে হবে ভূমি কর, সংসদে বিল
Advertisement
বর্তমানে জমি রেজিস্ট্রেশন খরচের মধ্যে রয়েছে ১ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন ফি, ১.৫ শতাংশ স্ট্যাম্প শুল্ক। স্থানীয় সরকার কর দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ৩ শতাংশ। তবে সিটি করপোরেশন এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের (উপজেলাধীন নয়) অধীন সম্পত্তি হলে হস্তান্তরিত সম্পত্তির দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ২ শতাংশ হবে স্থানীয় সরকার কর।
এছাড়া জমি কেনার সময় নিবন্ধনে ই ফিস ১০০ টাকা, এন ফি ৩০০ টাকা, এনএন ফি (নকলনবিশদের পারিশ্রমিক), ২০০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা, ১০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি দিতে হয়। নকলনবিশদের ফি প্রতি ৩০০ শব্দবিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা এর অংশ বিশেষের জন্য ৩৬ টাকা।
বাণিজ্যিক এলাকায় করহার
সংশোধিত উৎসে কর বিধিমালায় বলা হয়েছে, ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থ-সাউথ রোড, মতিঝিল সম্প্রসারিত এলাকা ও মহাখালী এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ২০ লাখ টাকার মধ্যে যেটা সর্বোচ্চ, সেই হারে কর দিতে হবে।
Advertisement
ঢাকার কারওয়ান বাজারের ক্ষেত্রে করহার দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১২ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বড় সেটি। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ও সিডিএ এভিনিউতে দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৮ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেটি করা হিসেবে গণ্য হবে।
আরও পড়ুন: আগামী বছর ২০০০ কোটি টাকার ভূমি কর আদায়ের আশা মন্ত্রীর
নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা এবং গেন্ডারিয়া এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৮ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বড় তা কর দিতে হবে।
ঢাকার উত্তরা, সোনারগাঁ, জনপথ, শাহবাগ, পান্থপথ, বাংলামোটর এবং কাকরাইল এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১২ লাখ টাকার মধ্যে যা সর্বোচ্চ তা উৎসে কর হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।
ঢাকার নবাবপুর ও ফুলবাড়িয়া এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৬ লাখ টাকার মধ্যে যেটা সর্বোচ্চ কর হিসেবে সেই মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
আবাসিক এলাকার করহার
বাণিজ্যিক এলাকার বাইরে ঢাকার আবাসিকের মধ্যে উত্তরা (সেক্টর ১-৯), খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকা (১০০ ফিট রাস্তার পাশে), আজিমপুর, রাজারবাগ পুনর্বাসন এলাকা (বিশ্বরোডের পাশে) এবং চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাঁচলাইশ, নাসিরাবাদ, মেহেদিবাগ এলাকা দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি তিন লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি তা কর হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।
ঢাকার গুলশান, বনানী, বনানী ডিওএইচএস, ধানমন্ডি, বারিধারা ডিওএইচএস, মহাখালী ডিওএইচএস, বসুন্ধরা (ব্লক এ-জে), নিকেতন, বারিধারা এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ তা কর হিসেবে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রবাসীরা বিদেশ থেকেই নিতে পারছেন ভূমিসেবা
ঢাকার রাজউক পূর্বাচল আবাসিক মডেল টাউন, বসুন্ধরা (ব্লক কে-পি) এবং ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৩ লাখ টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ তা কর হিসেবে ধরা হবে।
ঢাকার কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর, ইস্কাটন, গ্রিনরোড, এলিফ্যান্ট রোড, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মগবাজার (মূল রাস্তার ১০০ ফুটের মধ্যে) তেজগাঁও শিল্প এলাকা, শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকা, আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকা, লালমাটিয়া, ক্যান্টনমেন্ট এবং চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি তা কর হিসেবে দিতে হবে।
ঢাকার কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর, ইস্কাটন, গ্রিনরোড, এলিফ্যান্ট রোড (মূল রাস্তার ১০০ ফুটের বাইরে) এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি আড়াই লাখ টাকার মধ্যে যেটি বড় তা কর হিসেবে ধার্য হবে।
গ্রিনরোড (ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার রোড নম্বর ৩ থেকে রোড নম্বর ৮ পর্যন্ত) এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৫ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বড় তা কর হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।
ঢাকার উত্তরা (সেক্টর ১০-১৪), নিকুঞ্জ (দক্ষিণ), নিকুঞ্জ (উত্তর), বাড্ডা পুনর্বাসন এলাকা, গেন্ডারিয়া পুনর্বাসন এলাকা, শ্যামপুর পুনর্বাসন এলাকা, আইজি বাগান পুনর্বাসন এলাকা ও টঙ্গী শিল্প এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বড় তা কর হিসেবে বিবেচিত হবে।
আরও পড়ুন: অনলাইনে নির্বিঘ্নে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে কর্মকর্তাদের ৯ নির্দেশনা
ঢাকার শ্যামপুর শিল্প এলাকা, পোস্তগোলা শিল্প এলাকা, জুরাইন শিল্প এলাকায় কর হবে দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি এক লাখ টাকার মধ্যে যেটি বড় তা।
ঢাকার খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকা (১০০ ফিটের কম প্রশস্ত রাস্তার পাশে), রাজারবাগ পুনর্বাসন এলাকা (৪০ ফিট ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ রাস্তার পাশে) দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি দেড় লাখ টাকার মধ্যে যেটি বড় সেটি কর হিসেবে দিতে হবে।
ঢাকার গোড়ান (৪০ ফিট রাস্তার পাশে) হাজরীবাগ ট্যানারি এলাকায় জমি কেনায় উৎসে কর হবে দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৬০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বড় সেটি।
অন্যান্য এলাকায় যে হারে কর দিতে হবে
এছাড়া সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী, ওপরে উল্লেখ করা হয়নি এমন এলাকা যা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকায় করহার হবে দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ।
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ছাড়া) এবং যে কোনো সিটি করপোরেশন (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ছাড়া) এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় দলিল মূল্যের ৬ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
এছাড়া জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভায় দলিল মূল্যের ৬ শতাংশ, অন্য যে কোনো পৌরসভায় দলিল মূল্যের ৪ শতাংশ এবং এর বাইরের যে কোনো এলাকায় দলিল মূল্যের ২ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হবে বলে সংশোধিত বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরএমএম/বিএ/এমএস