রাজনীতি

বিএনপির সমাবেশের দিনই কোনো না কোনো লীগ কর্মসূচি দেয়: রিজভী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তব্যে বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

Advertisement

তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ‘বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তবে কর্মসূচির নামে রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনদুর্ভোগ করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য উসকানিমূলক ও নিজ দলের সন্ত্রাসীদের আশকারা দেওয়ার শামিল। এর মাধ্যমে বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির কর্মসূচির দিনেই কেন আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করে? বিএনপি যেদিন কর্মসূচি দেয়, সেদিন কোনো না কোনো লীগও কর্মসূচি ঘোষণা করে। আর কোনো লীগ যদি না থাকে, তখন পুলিশ লীগ তো আছেই। তারা বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালায়।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অপরিণামদর্শী। তার বক্তব্য দিনকে দিন সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। জনগণের ভোগান্তির জন্য দায়ী ভোটারবিহীন শেখ হাসিনার সরকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কখনোই দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও নির্বাচনের মাঠ শান্তিপূর্ণ থাকে না।

আরও পড়ুন: মহাসমাবেশের জন্য নয়াপল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চায় বিএনপি 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, একাত্তরের শান্তি কমিটির মতো আওয়ামী লীগ কেন শান্তি সমাবেশ করে, এটা তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জনগণের প্রশ্ন। আমরা মন্ত্রীকে বলতে চাই, বিএনপির কর্মসূচি ছিল পূর্বঘোষিত। ওই সময় আলীগের কর্মসূচি ছিল না। বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই ওই একই দিন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ বা শান্তি মিছিল ঘোষণা করে। তখন কি জনদুর্ভোগ হয় না, এটা স্বরাষ্টমন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন।

বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালাতেই আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ ডাকে অভিযোগ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের উদ্দেশ্যই হলো বিএনপির কর্মসূচিতে আসা নেতাকর্মী ও জনগণের ওপর হামলা করা, জখম করা, খুন করা। এ উদ্দেশ্যেই তারা এটা করে। যাতে বিএনপি কর্মসূচি করতে ভয় পায়। কিন্তু যতবার তারা আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে, তার পরের কর্মসূচিতে আরও বেশি জনগণ সম্পৃক্ত হয়েছে। অপরাধকারীরা যখন আঘাত করে, তখন ন্যায়ের পক্ষের শক্তি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বিএনপির ওপর নিপীড়িন-নির্যাতনের পরও আন্দোলনে বিপুল মানুষের উপস্থিতি তারই প্রমাণ।

Advertisement

যুবলীগের শান্তি সমাবেশ অশুভ উদ্দেশ্যে ২৪ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৭ জুলাই নির্ধারণ করা হয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ২২ জুলাই তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিএনপি ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। যুবলীগের কর্মসূচি ছিল ২৪ জুলাই। বিএনপির সমাবেশ ঘোষণার পর কেন তারাও ২৭ জুলাই কর্মসূচি পিছিয়ে আনলো, সেই প্রশ্নের উত্তর অমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চাই। ওদের (যুবলীগ) ছিল ২৪ জুলাই, যেই বিএনপি ২৭ জুলাই ঘোষণা দিলো, ওরাও তখন ২৭ জুলাই দিলো। সহিংসতা উসকে দেওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

পুলিশের সহায়তায় সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, দেশের জেলা সদর ও মহানগর, হাট-হাজার, গ্রাম-গঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।

‘সম্প্রতি দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যৌথ প্রযোজনায় হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কেউ নিহত হয়েছেন, কেউ চোখ হারিয়েছেন, কেউ হাত-পা হারিয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।’ এসময় সারাদেশে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, খুন, বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট ও হয়রানিমূলক মামলা দেওয়ার কিছু ঘটনা তুলে ধরেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি জানান, ১৮-১৯ জুলাইয়ের পদযাত্রা ও ২২ জুলাইয়ে ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশকে কেন্দ্র করে চার হাজার ১০০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন দুজন। এসময়ে হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে ৩১৫টি এবং গ্রেফতার করা হয়েছে এক হাজার ৩৫০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এএএইচ/এমএইচআর/জিকেএস