পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলে নির্বিচারে শিয়াল শিকার করছেন স্থানীয়রা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এ বন্যপ্রাণী। স্থানীয়দের দাবি, শিয়ালের মাংস খেলে বাত-ব্যথার উপশম হয়। তবে বিষয়টি কুসংস্কার বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement
সম্প্রতি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী এলাকায় দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে আশপাশের বনাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় লোকালয়ে আশ্রয় নেওয়া চারটি শিয়াল শিকার করে তা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত করছেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় একটি সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারকে দুটি এবং এলাকার সিনিয়র-জুনিয়র ব্যাচের ছেলেরা ভাগ করে দুটি শিয়াল নিয়েছেন। সড়কের পাশে গাছে ঝুলিয়ে শিয়ালের চামড়া ছাড়ানো হচ্ছে। এ মাংস তারা ভাগ করে নেবেন।
আরও পড়ুন: যেসব পশু-পাখির গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ
Advertisement
এ অঞ্চলের মানুষের ধারণা, শিয়ালের মাংস খেলে বাত-ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগের উপশম পাওয়া যায়। সেই ধারণা থেকেই শিয়াল শিকারের মতো বন্যপ্রাণী হত্যা করা হচ্ছে। পরে মাংস ভাগ করে নেন সবাই। আনন্দ করে ভূরিভোজও করা হচ্ছে একসঙ্গে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন যুবক জাগো নিউজকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই তারা দেখে আসছেন তাদের এলাকার মুরুব্বিরা বিভিন্ন সময় শিয়াল ধরে তার মাংস সবাই ভাগ করে নিতেন। বিশেষ করে বাড়ির মুরুব্বিদের বাত-ব্যথায় এটি অনেক কার্যকর বলে এলাকায় প্রচলন রয়েছে। সে ধারণা থেকে তারাও মাঝে মধ্যে শিয়াল শিকার করেন।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিয়াল জবাই করে বিক্রি-ভাগবাটোয়ারা
তবে চিকিৎসকরা বলছেন, শিয়ালের মাংসে এমন কোনো উপাদন নেই যাতে মানুষের ব্যথা উপশম করতে পারে। পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসান বলেন, ‘এটি পুরোপুরি একটি ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার। শিয়ালের মাংসে এমন কোনো বিশেষ উপাদান নেই যাতে মানুষের জন্য কোনো রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করবে। উল্টো এর মাংস খেলে নতুন কোনো রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
Advertisement
ধর্মীয় নেতারাও বলছেন, ইসলাম ধর্মে শিয়াল পুরোপুরি একটি নিষিদ্ধ প্রাণী। এর মাংস খাওয়া কোনো অবস্থাতেই হালাল নয়।
আরও পড়ুন: গোপনে বিক্রির সময় উদ্ধার হলো শিয়াল
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা আবু সাইদ বলেন, ‘কোন প্রাণী খাওয়া যাবে আর কোন প্রাণী খাওয়া যাবে না, সে বিষয়ে কোরআন-হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। কোনো অবস্থাতেই হিংস্র প্রাণী শিকার করা কিংবা এর মাংস খাওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। এটি পুরোপুরি একটি হারাম খাবার।’
পটুয়াখালী উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, শিয়াল শিকার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অনেকেই হয়তো না জেনে এমন কাজ করছেন। এ বিষয়ে ওই এলাকার মানুষকে সচেতন করতে আমরা উদ্যোগ নেবো।’
এসআর/জেআইএম