ধর্ম

ফজরের পর গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ ‘এশরাক’

এশরাক একটি নফল নামাজ। ফজরের নামাজের পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে এশরাকের নামাজ পড়তে হয়। এ নফল নামাজ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে পড়তেন এবং অন্যদেরকেও পড়তে বলতেন। এশরাকের নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা অন্য নফল নামাজের তুলনায় বেশি। কিন্তু এশরাকের নামাজ পড়ার সময় কখন এবং তা পড়ার নিয়মই বা কী?

Advertisement

এশরাক নামাজ পড়ার সময় হচ্ছে, সূর্য উদিত হওয়ার পর থেকে এক বর্শা পরিমাণ উদিত মধ্যাকাশে আসার আগ পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে আদায় করলে এশরাকের নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই নামাজ আদায় করতেন না। তিনি এক বর্শা পরিমাণ সূর্য ওঠার অপেক্ষা করতেন।

ইসলামিক স্কলারদের একদল বলেছেন, বর্শা মানে দেড় মিটারের মতো, আবার কেউ কেউ বলেছেন, এক মিটারের মতো। এটি সময়ের সঙ্গে পরিমাপ করলে দাঁড়ায়, সূর্য উদিত হওয়ার ১০ থেকে ১২ মিনিট পর শুরু হয়। এশরাক নামাজ পড়া প্রসঙ্গে হাদিসের একাধিক বর্ণনা রয়েছে। তাহলো-

১. হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজর নামাজ জামাতে আদায় করার পর সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত ওখানে বসে বসেই আল্লাহর জিকির করে। তারপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। তার জন্য পূর্ণাঙ্গ হজ ও ওমরার সমান সাওয়াব রয়েছে।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

Advertisement

২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়লো। এরপর সূর্য উঠা পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর জিকির করলো; অতপর দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়লো; সে একটি হজ ও ওমরাহ করার সওয়াব নিয়ে ফিরে গেল।’ (তাবারানি, আত-তারগিব)

৩. অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সূর্য উঠার আগে আল্লাহর জিকির, তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা আমার কাছে ইসমাঈল বংশের দুইজন গোলাম আজাদ করার চেয়েও অধিক প্রিয়।’ (মুসনাদে আহামদ)

হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুসারে ফজর নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সূর্য উঠার পর এ নামাজ আদায় করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ইসলামিক স্কলারদের কেউ কেউ বলেছেন সূর্য উঠার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর; আবার কেউ কেউ বলেছেন ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর এ নামাজ পড়তে হয়। আর সূর্য এক বর্শা পরিমাণ (দেড় মিটারের মতো) মধ্যাকাশের দিকে উঠা পর্যন্ত এ নামাজের ওয়াক্ত থাকে।

এশরাক নামাজের নিয়ম

Advertisement

এশরাক অন্যান্য নামাজের মতোই দুই রাকাত করে আদায় করতে হয়। এশরাকের নামাজের জন্য সুস্পষ্ট আলাদা কোনো নিয়ম ও নিয়ত নেই। শুধু ‘আল্লাহু আকবার’ বলে শুরু করা। আর দুই দুই রাকাত করে ৪ রাকাত নামাজ পড়া।

এশরাকের নামাজের সুনির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যারও উল্লেখ না থাকলেও কেউ কেউ দুই রাকাত থেকে শুরু করে আট রাকাত পর্যন্ত পড়ে থাকেন। আবার ইসলামিক স্কলারদের কেউ কেউ বলেছেন, এশরাকের নামাজ দুই রাকাত করে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়।

তবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাত করে ৪ রাকাত এশরাক পড়তেন। এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ফজরের নামাজের পর সূর্য উঠার ১৫ থেকে ২৫ মিনিট পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দুই দুই রাকাত করে ৪ রাকাত নামাজ আদায় করা। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নির্ধারিত সময়ে সুন্নাত নিয়মে নিয়মিত এশরাক নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম