যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নওয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৭৮ সালে ২৩ শতক জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলের ১৬১ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ৬ জন শিক্ষক। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে নেই কোনো খেলার মাঠ।
Advertisement
এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন জানান, জমি না থাকায় আমাদের এখানে খেলার মাঠ নেই। তবে যতটুকু খালি জায়গা রয়েছে সেখানে স্লিপার ও দোলনা বসিয়ে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হয়। আর পাশে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্বল্প পরিসরে খেলার মাঠ আছে। সেখানেও আমাদের শিক্ষার্থীরা খেলতে যায়।
যশোরের বেজপাড়া আজিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত ১৯৫২ সালে। মাত্র ১১ শতক জমির ওপর প্রথমে টিন শেডের ঘরে শুরু করা হয় পাঠ কার্যক্রম। এরপর ২০১৮ সালে এলজিইডির অর্থায়নে দ্বিতল ভবন করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে মাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষ। ১৯০ জন শিক্ষার্থী দুটি শিফটে ক্লাস হয় এখানে। প্রধন শিক্ষকসহ ৬ জন শিক্ষক রয়েছেন স্কুলটিতে। কিন্তু বিদ্যালয়টিতেও কোনো খেলার মাঠ নেই। যে কারণে ক্লাস শেষে কেউ খেলাধুলা করতে পারে না।
আরও পড়ুন: ১০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হবে খেলার মাঠ
Advertisement
আবদুল হালিম নামের এক অভিভাবক বলেন, জমি স্বল্পতার কারণে স্কুলে খেলার মাঠ নেই। রয়েছে ক্লাস রুমের সংকট। যে কারণে আমাদের সন্তানরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকলিমা আক্তার জানান, বিদ্যালয়টি যখন প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন হয়তো জমি পাওয়া যায়নি। মাত্র ১১ শতক জমিতে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভবনের পাশে যে সামন্য জমি রয়েছে সেখানে কিছু শিক্ষার্থী খেলাধুলা করে থাকে। তবে সেটা অপর্যাপ্ত।
শুধু ওই দুটি বিদ্যালয় নয়। যশোরে খেলার মাঠ নেই ২২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যদিও জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক হাজার ২৯০টি। এরমধ্যে স্বল্প পরিসরে মাঠ রয়েছে ২৪৮টি বিদ্যালয়ে। সবচেয়ে বেশি খেলার মাঠ নেই শার্শা উপজেলায়। এখানে ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। এছাড়া সদর উপজেলায় ৪৫টি, চৌগাছায় ৮টি, অভয়নগরে ১৪টি, মণিরামপুরে ৪৪টি, বাঘারপাড়ায় ৩৩টি, ঝিকরগাছায় ৯টি ও কেশবপুরে ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো খেলার মাঠ নেই। সূত্র জানায়, দেশের প্রাথমিক শিক্ষার নানা দিক নিয়ে প্রতি বছর ‘অ্যানুয়াল প্রাইমারি স্কুল সেন্সাস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সংখ্যা, শ্রেণিকক্ষ, স্যানিটেশন, খেলার মাঠসহ বিভিন্ন সেবা ও সুযোগ-সুবিধার তথ্যাদি তুলে ধরা হয়। ২০২১ শিক্ষাবর্ষের তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এরমধ্যে খেলার মাঠ রয়েছে ৫৪ হাজার ৮২৬টিতে। সে হিসেবে দেশের ১০ হাজার ৭৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, খেলার মাঠ ছাড়া একটি বিদ্যালয় কোনোভাবেই পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না। তাই খেলার মাঠ ছাড়া কোনো বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সমীচীন নয়। আর যেসব অনুমোদিত বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় খেলার মাঠ স্থাপন করা প্রয়োজন।
Advertisement
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব বলেন, লেখপড়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো খেলাধুলা। যে বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই, ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটবে না যদি তারা বিকল্প উপায়ে খেলাধুলা না করায়। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অবশ্যই খেলার মাঠ থাকতে হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, জেলায় এক হাজার ২৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে নতুন ভবন সম্প্রসারণ, স্কুল স্থানান্তরসহ নানা কারণে জমি স্বল্পতায় ২২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে খেলার মাঠ নেই। এসব বিদ্যালয়ে মাঠ করার সুযোগও নেই। ইতোমধ্যে যেসব স্কুলে খেলার মাঠ নেই, সেসব স্কুলের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, যেসব স্কুলে মাঠ নেই সেসব স্কুলের পাশের খাসজমি বা পরিত্যক্ত জায়গার তথ্য নিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। সেখানেই স্কুলগুলোর খেলার জায়গা করার পরিকল্পনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
মিলন রহমান/আরএইচ/এমএস