আন্তর্জাতিক

মণিপুরে দুই নারীকে নগ্ন হাঁটানোর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

ভারতের মণিপুর রাজ্যে দুই কুকি নারীকে নগ্ন করে হাঁটানোর ঘটনায় উদ্বেগপ্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ঘটনাটি প্রায় তিন মাস আগে ঘটলেও এ সপ্তাহে তার ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর পরপরই সমালোচনার ঝড় ওঠে বিশ্বজুড়ে। ওই দুই নারীর একজন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন মুখপাত্র মণিপুরের ওই ঘটনাকে ‘বর্বরোচিত’ এবং ‘ভয়ংকর’ বলে উল্লেখ করেছেন।

এ বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে এক মার্কিন কর্মকর্তা মণিপুর সংকট সমাধানে ‘যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত’ বলার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ভারত।

আরও পড়ুন>> মণিপুরে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনায় উত্তাল ভারত

Advertisement

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছিলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটির মন্তব্য দেখেননি। কিন্তু বিদেশি কূটনীতিকরা সাধারণত ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ নিয়ে মন্তব্য করেন না।

গত মে মাস থেকে মণিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতি জনগোষ্ঠী এবং সংখ্যালঘু কুকি উপজাতির মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষে অন্তত ১৩০ জন নিহত হয়েছেন। ঘরছাড়া হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ।

মণিপুরে সেদিন কী ঘটেছিল?সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মণিপুরের রাস্তায় কুকি-জোমি সম্প্রদায়ের দু’জন নারীকে নগ্ন করে একদল লোক রাস্তায় হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের ক্রমাগত যৌন হেনস্তা করা হচ্ছে।

দুই নারীর একজনের বয়স ছিল ২০-২২ বছর, অন্যজনের চল্লিশের আশপাশে।

Advertisement

আরও পড়ুন>> মণিপুরের পর পশ্চিমবঙ্গেও ২ নারীকে বিবস্ত্র করে মারধর

ভিডিওতে দেখা যায়, জনতার মধ্যে অনেকেই ওই নারীদের শরীরের বিভিন্ন অংশ খামচে ধরছে। এরপর তাদের জোর করে একটি ক্ষেতের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনাটি গত ৪ মে ঘটলেও এ বিষয়ে এফআইআর দায়ের করা হয় গত ১৮ মে। এফআইআরে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, কম বয়সী মেয়েটিকে প্রকাশ্য দিবালোকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে গণধর্ষণ করা হয়েছিল।

মণিপুরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বহু ঘরবাড়ি। ছবি সংগৃহীত

অভিযোগে আরও বলা হয়, ঘটনার দিন কাংপোকপি জেলায় তাদের গ্রাম যখন জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখন প্রাণে বাঁচতে তারা পরিবারের কয়েকজন মিলে কাছের জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

আরও পড়ুন>> মণিপুর ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ, মিজোরামে শরণার্থীর ঢল

পথে থৌবাল জেলার একটি পুলিশ ভ্যান তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে নেয়। তবে পুলিশ যখন তাদের থানায় নিয়ে যাচ্ছিল, তখন থানা থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে একদল উত্তেজিত জনতা তাদের ঘিরে ধরে।

এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই ক্ষুব্ধ জনতা তাদের পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

কিন্তু ভুক্তভোগী দুই নারীর একজন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, পুলিশ আসলে হামলাকারীদের সঙ্গেই ছিল। ওরা বাড়ির বেশ কাছেই প্রথমে আমাদের গাড়িতে তুলে নেয়, তারপর গ্রামের একটু বাইরে গিয়েই রাস্তায় ছেড়ে দেয়। পুলিশই ওই জনতার হাতে আমাদের তুলে দিয়েছিল।

অর্থাৎ ওই ভুক্তভোগীর দাবি, পুলিশের কাছ থেকে তাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়নি। পুলিশই তাদের ওই হামলাকারীদের হাতে তুলে দিয়েছিল।

আরও পড়ুন>> ‌‌‌থমথমে মণিপুর, রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি কংগ্রেসের

এরপর ওই লোকগুলো জোর করে নারীদের সব জামাকাপড় খুলতে বাধ্য করে। তাদের রাস্তা দিয়ে নগ্ন করে হাঁটানো হয়, এরপর পাশের ধানক্ষেতে নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতন চালানো হয়।

অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, তিনজন নারী ও দুজন পুরুষ-সহ তারা দলে মোট পাঁচজন ছিলেন, যারা গ্রাম থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। বছর পঞ্চাশের যে তৃতীয় নারী ছিলেন, তাকেও নগ্ন করে ঘোরানো হয়েছিল।

দলের দু’জন পুরুষ ছিলেন সবচেয়ে কমবয়সী নারীটির বাবা ও ভাই। ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় তাদের দুজনকেই হামলাকারীরা হত্যা করেছে বলেও এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন>> ‌‌‌‘মণিপুর যেন এখন সিরিয়া-লেবানন’

গত ৩ মে থেকে মণিপুরে মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে যে রক্তাক্ত জাতিগত সংঘাত এবং অবাধ হত্যা-লুণ্ঠন-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ শুরু হয়েছে, এই ঘটনা ছিল ঠিক তার দ্বিতীয় দিনেরই।

তবে এই ঘটনার বীভৎসতা ও নৃশংসতা ঠিক কতখানি ছিল, তা সারা বিশ্ব জানতে পারলো ঘটনা ঘটে যাওয়ার আড়াই মাস পর।

সূত্র: বিবিসিকেএএ/