ফিচার

মহানায়ক উত্তম কুমারের প্রয়াণ দিবস

উত্তম কুমার ছিলেন একজন ভারতীয়-বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা, চিত্রপ্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সংগীত পরিচালক ও গায়ক। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে তাকে ‘মহানায়ক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। উত্তম কুমারকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জাত অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

Advertisement

আসল নাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় ভবানীপুরে ৫১ আহিড়ীটোলা স্ট্রীটে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে চক্রবেড়ীয়া হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং পরে সাউথ সাবার্বান স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পাঁচ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা মুকুট নাটকে অভিনয় করে তুমুল প্রশংসিত হন এবং একটি সোনার পদক যেতেন।

১৪ বছর বয়সে গয়াসুর নাটকে অভিনয় করেও পুরস্কৃত হন। ১৯৪৫ সালে কলকাতার গোয়েঙ্কা কলেজে অব কমার্সে ভর্তি হন। পারিবারিক আর্থিক অনটনের জন্য কলকাতার পোর্টে চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারেননি। ছেলেবেলা থেকেই খেলাধুলা ও অভিনয় পাগল ছিলেন। বাড়ির বড়োদের থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে সিনেমা দেখা নাটক দেখা ছিল তার নেশা।

কলকাতা বন্দরে কেরানির চাকরিতে মাসিক ২৭৫ টাকা মাইনে দিয়ে কর্মজীবন শুরু হয় তাঁর। তবে চাকরি করলেও অভিনয় থেকে বিরত থাকতে পারেননি। রীতিমতো থিয়েটার করতেন এবং টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় ঘোরাফেরা করতেন সিনেমায় সুযোগের জন্য। সেকারণে অনেকবার তাকে চাকরি কামাই করতে হয়েছে।

Advertisement

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার বছরে উত্তম কুমার তার এক বন্ধুর সহযোগিতায় প্রথম মায়াডোর নামে একটি হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য জীবনের প্রথম ছবিই মুক্তিলাভ করেনি তার। উত্তম কুমারের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল তার ঠিক পরের বছর ১৯৪৮ সালের দৃষ্টিদান ছবি।

তবে সাফল্য আসে নির্মল দের পরিচালনায় বসু পরিবার চলচ্চিত্রে। এরপর অসংখ্য ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্যারিয়ার জুড়ে অসংখ্য বাণিজ্যিক সাফল্যের পাশাপাশি সমালোচকদেরও তুমুল প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।

তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা-দৃষ্টিদান, সাড়ে চুয়াত্তর, চিড়িয়াখানা, এন্টনী ফিরিঙ্গী, নায়ক, অগ্নিপরীক্ষা, হারানো সুর, স্ত্রী, অমানুষ, অগ্নীশ্বর, সন্ন্যাসী রাজা, গৃহপ্রবেশ, কামনা, মর্যাদা, সহযাত্রী, ওরে যাত্রী, সঞ্জীবনী, শাপ মোচন, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, তাসের ঘর, যাত্রা হল শুরু, হারজিৎ, সুরের পরশে, পুনর্মিলন, পৃথিবী আমারে চায়, বড়দিদি, পথে হল দেরি, দেবদাস, দুই পুরুষ, গৃহদাহ ইত্যাদি।

তিনি পাঁচবার জাতীয় পুরস্কার, আটবার বিএফজেএ পুরস্কার ও তিনবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, প্রসাদ পত্রিকা পুরস্কার, সাংস্কৃতিক সাংবাদিক সংস্থা পুরস্কার, চলচ্চিত্র প্রসার সমিতি পুরস্কার লাভ করেন। ভারত সরকার ১৯৭৫ সালে তাকে মহানায়ক উপাধি দেয়। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Advertisement

কেএসকে/জেআইএম