দেশে যখন নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেয় ঠিক তখনই ভারত থেকেও আসে পণ্য রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা। আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সরবরাহ কমে গেলে দেশের খোলা বাজারে পণ্যের দাম থাকে আকাশছোঁয়া। অস্থিরতা দেখা দেয় বাজারে। তবে ভারতের সঙ্গে কোটাচুক্তিতে খাদ্যদ্রব্য আমদানি ও নতুন করে রুপিতে পণ্যের ঋণপত্র বাস্তবায়ন হলে এ সংকট কাটবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
এদিকে নতুন করে চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় ভারতের স্থানীয় বাজারে লাফিয়ে বেড়েছে দাম। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে বাসমতী বাদে সব চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। ২০ জুলাই ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক পত্রে এ কথা জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে চালের দামে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
তবে সেই আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়। চাল রপ্তানি বন্ধে ভারতের সিদ্ধান্তে আপাতত কোনো সমস্যা তৈরি হবে বলে মনে করে না তারা। বর্তমানে সরকারি গুদামে প্রায় ২০ লাখ টন চাল ও গম মজুত আছে। ফলে অতিরিক্ত চাল আমদানির দরকার হবে না। সরকারিভাবে পাঁচ লাখ টন চাল ও সাত লাখ টন গম কেনার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু দেশে চালের উৎপাদন ভালো হওয়ায় সেই লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ টনে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর গমের ক্ষেত্রেও পরিমাণ কমিয়ে পাঁচ লাখ টন করা হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহম্মদ ইসমাইল জাগো নিউজকে বলেন, বোরো ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। আমনেও ভালো ফলন হতে পারে। দেশে যা চাল আছে, তাতে সারা বছরের চাহিদা মিটে যাবে। ফলে ভারত চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও বাংলাদেশের সমস্যা হবে না। গমের ক্ষেত্রে রাশিয়া ও ইউক্রেনের বাইরে বিকল্প বাজার খোঁজা হচ্ছে। ওই দুই দেশ থেকে কীভাবে আমদানি অব্যাহত রাখা যায়, সেই চেষ্টাও চলছে।
Advertisement
জানা গেছে, বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৬ লাখ ১৯ হাজার ১৯৩ টন বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য আমদানি হয়েছে। আমদানি করা পণ্যের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, চিনি, গম, ভুট্টা, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ ও মাছসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। তবে আরও বেশি চাহিদা থাকলেও নানা সংকটে ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় ও দাম বৃদ্ধিতে দেশের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে যে পরিমাণ খাদ্যদ্রবের চাহিদা আছে, তার বিপরীতে উৎপাদন কম হওয়ায় বছরের প্রায় অধিকাংশ সময় আমদানি করে প্রয়োজন মেটাতে হয়। আর এ আমদানির বড় একটি অংশ আসে ভারত থেকে। গেল ২০২২-২৩ অর্থবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে ৬০ হাজার কোটি টাকার প্রায় ২৫ লাখ টন পণ্যের আমদানি-রপ্তানি হয়েছে।
এর মধ্যে ৬ লাখ ১৯ হাজার ১৯৩ টন ছিল খাদ্যদ্রব্য। তবে দেশে যখন নিত্যপণ্যের সংকট দেখা যায় ঠিক তখনই ভারত থেকেও আসে রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা। এতে আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সরবরাহ কমে খোলা বাজারে দাম বাড়ে আকাশছোঁয়া।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার ভারতের সঙ্গে নিত্যপণ্যের কোটা চুক্তি করে। এ চুক্তিতে গম ৪৫ লাখ টন, চাল ২০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৭ লাখ টন, চিনি ১৫ লাখ টন, আদা দেড় লাখ টন, ডাল ৩০ হাজার ও রসুনের ১০ হাজার টন কোটা রাখার অনুরোধ করা হয় ভারতের কাছে। এটি বাস্তবায়ন হলে যখন-তখন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আসবে না। এ ছাড়া ডলার সংকট মেটাতে রুপিতে পণ্যের ঋণপত্র খোলা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
Advertisement
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, নয়াদিল্লিতে গত বছরের ২২-২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে কোটা চুক্তিতে পণ্য আমদানির দাবি তোলা হয়। তবে বেশ আগে থেকেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভুটান ও মালদ্বীপকে খাদ্যদ্রব্য রপ্তানিতে কোটা-সুবিধা দিয়ে আসছে ভারত।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভালো থাকায় বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও গেলো বছর প্রচুর পরিমাণে খাদ্যদ্রব্য জাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে। তবে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় খাদ্যদ্রব্যের আমদানি কিছুটা কমে। আমদানি স্বাভাবিক থাকলে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সহজে বাড়বে না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ভারত থেকে খাদ্য পণ্য রপ্তানি শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে দেশের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। কোটা চুক্তি বাস্তবায়ন হলে খাদ্য আমদানিতে ঘাটতি কমবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বড় অংকের বাণিজ্য হয় ভারতের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অধিকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দ্রুত কোটাচুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে খাদ্যদ্রব্য রপ্তানিতে হঠাৎ হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে হবে।
এসজে/জেআইএম