দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়সসীমা ২০ থেকে ৪০ বছর বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। একই সঙ্গে তিনি বলেন, এই বয়সের বেশিরভাগই কর্মজীবী মানুষ এবং পুরুষ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ শতাংশ নারী।
Advertisement
শনিবার (২২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, আজকে আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি হাসপাতাল এবং মুগদা হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। এখানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। আমাদের দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশ বাড়তির দিকে। বর্তমানে ১৪০টা দেশে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের আশেপাশের দেশগুলোতে ৫০ হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে আমাদের দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে এখনো ডেঙ্গু রোগীর পরিমাণ সেভাবে বাড়েনি। তবে ডেঙ্গু রোগী বারুক সেটা আমরা চাই না।
তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু মোকাবিলায় যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি দুই সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা শহরসহ সারাদেশে সাড়ে ২৮ হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সাড়ে ১৭ হাজার। ঢাকার বাইরে অন্য জেলাগুলোতে সাড়ে ১০ হাজারের একটু বেশি। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৫৬ জনের। যার মধ্যে ঢাকাতেই ১২২ জন। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা যেমন বেশি সে তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। আমাদের দেশে বর্তমানে ৬০টি জেলায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
Advertisement
আরও পড়ুন> ডেঙ্গু এখনো নিয়ন্ত্রণে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের সবকটি হাসপাতালে প্রায় ৬ হাজারের একটু বেশি ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। যার মধ্যে ঢাকাতেই আছে ৩ হাজার রোগী এবং ঢাকার বাইরে আছে আড়াই হাজার। ঢাকা শহরে বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর পরিমাণ স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। কিন্তু ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা বিভিন্ন হাসপাতালের রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, তারা কর্মস্থল থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি রোগীরা বলছে, বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় অলিগলিতে সিটি করপোরেশন মশার স্প্রে কম করছে, সেটা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। পাশাপাশি বিভিন্ন অফিস এবং মিল কারখানাগুলোতে মশার স্প্রে তেমন ভাবে হচ্ছে না, যে কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মন্ত্রী বলেন, এসবের ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন তাদের বলবো আপনারা এ বিষয়ে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেন। সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব না আপনার বাসা বা অফিসে গিয়ে স্প্রে করা। তাই এ বিষয়ে আমাদেরও সচেতন হতে হবে।
মুগদা হাসপাতাল পরিদর্শন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় মুগদা হাসপাতাল যথেষ্ট কাজ করছে। এখানে রোগীর সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি। বর্তমানে প্রায় ৫০০ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। প্রতিদিন প্রায় ১০০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। হাসপাতালটিতে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ডেঙ্গু রোগীকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার রোগকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪৩ জন রোগী মারা গেছেন। হাসপাতালে ওষুধ থেকে শুরু করে কোনো কিছুরই কোনো কমতি নেই। প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার স্যালাইন প্রয়োজন হয় এই হাসপাতালে। এই হাসপাতালে বর্তমানে আইসিওর সংখ্যা ৫২টি। প্রতিদিন প্রায় হাজারের বেশি ডেঙ্গু টেস্ট করা হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন> ডেঙ্গু রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার দাবি
আগে ডেঙ্গুর টেস্টের মূল্য নিয়ে মন্ত্রী বলেন আগে ছিল ১০০ টাকা। সেই জায়গায় এ বছর আমরা ৫০ টাকা করেছি। পাশাপাশি প্রাইভেট হাসপাতালেও টেস্টের একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। প্রাইভেটে ডেঙ্গু টেস্টের মূল্য প্রায় ৩০০ টাকা করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা এবিএম খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান প্রমুখ।
এএএম/এসএনআর/জেআইএম