জাগো জবস

যেভাবে শিক্ষা ক্যাডার হলেন হামিদুল্লাহ

মো. হামিদুল্লাহ ৪০তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে (হিসাববিজ্ঞান) উত্তীর্ণ হন। তার শৈশব এবং বেড়ে ওঠা জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার আদিপৈত গ্রামে। তিনি মেলান্দহ উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে বিবিএ এবং এমবিএ সম্পন্ন করেন।

Advertisement

বর্তমানে তিনি সরকারি মুজিব কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। তার ক্যাডার হওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাগো নিউজকে।

ক্যাডার পাওয়ার অনুভূতিক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করতে পারার অনুভূতি অসাধারণ। বাবা-মা, ভাইয়েরা এবং স্ত্রীসহ পরিবারের ইচ্ছা, আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণির ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্তি, এসএসসি এবং এইচএসসিতে এ প্লাস অর্জনের মতো অনুভূতি থাকলেও এ অর্জনের অনুভূতি আলাদা।

স্বপ্ন দেখার শুরুকাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিষয়ে পড়তে না পারার আক্ষেপ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এরপর থেকে একটাই ইচ্ছা ছিল, বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণ করা। তাই বিসিএসের স্বপ্ন দেখাটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই শুরু হয়। সেই স্বপ্নপূরণের অভিপ্রায় থেকেই অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের শুরু থেকেই চাকরির প্রস্তুতি শুরু করি।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাবার অনুপ্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার মানস

যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিঅনার্স ২য় সেমিস্টারে ইংরেজি ভোকাব্যুলারি বই কেনার মাধ্যমে চাকরির প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রতি সেমিস্টারে বিষয়ভিত্তিক একটি করে বই কিনি এবং পড়ে শেষ করতাম। পাশাপাশি সহায়ক হিসেবে অন্য বই পড়েছি। বিভাগের পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনিও করেছি অনেক। যা আমার প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়তা করেছে। বিশেষ করে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা, বিজ্ঞান এবং ইংরেজির প্রস্তুতি গ্রহণে টিউশনি করানো সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। খুব কাছের সিনিয়র এক ভাইয়ের সঙ্গে কিছুদিন লাইব্রেরিতে গেছি। যিনি আমাকে বিসিএসের সিলেবাস এবং প্রস্তুতির জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। তার প্রতিও আমি সব সময় কৃতজ্ঞ। এভাবেই অনার্স সম্পন্ন করার মধ্যেই চাকরির জন্য মোটামুটি প্রস্তুতি সম্পন্ন করি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে নিজে নিজে মডেল টেস্ট দিয়েছি এবং যা পড়েছি, তা রিভিশন করার চেষ্টা করেছি।

যাদের অনুপ্রেরণা পেয়েছিসব সময় বাবা-মাই ছিলেন আমার একমাত্র অনুপ্রেরণা। নিম্নবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও বাবা-মা কখনো বুঝতে দিতেন না। ইন্টারমিডিয়েট পড়া পর্যন্ত আম্মা ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত পুরোটা সময় আমার জন্য ব্যয় করতেন। এসএসসি পর্যন্ত যখন গ্রামে ছিলাম, তার বেশিরভাগ সময় বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। গরমের সময় যখন আমি পড়তাম, মা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাশে বসে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতেন। ঘুমের মধ্যে জেগে উঠলে দেখতাম, মা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। পড়াশোনার জন্য আমাকে নিজের কোনো কাজও মা করতে দিতেন না। সবকিছু মা করে দিতেন। বাবা সব সময় লক্ষ্য রাখতেন, আমি ঠিকমতো পড়াশোনা করছি কি না। পাশাপাশি স্কুল ও প্রাইভেট পড়তে নিয়মিত যাচ্ছি কি না। বাবার স্বল্প বেতনের প্রায় পুরোটাই আমার পড়াশোনার পেছনে ব্যয় হয়ে যেত। ফলে বড় দুই ভাইয়াকেও পড়াশোনা করা এবং অন্য ক্ষেত্রে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তাই আমার সব ভালো ফলাফল অর্জনে আমার চেয়ে বাবা-মা ও ভাইয়াদের অবদান বেশি। আমার ভালো কিছু অর্জনেও তারা সবচেয়ে বেশি খুশি হন। পরিবারের পাশাপাশি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের শিক্ষা এবং দিকনির্দেশনায় আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।

আরও পড়ুন: এমবিবিএস পাস করে পুলিশ ক্যাডার হলেন শামসুল আলম

Advertisement

প্রিলিমিনারি প্রস্তুতিআমি চারটি বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়েছি। বিসিএসের তিনটি ধাপ প্রিলি, রিটেন এবং ভাইবার মধ্যে প্রিলিতে উত্তীর্ণ হওয়াটাই তুলনামূলক বেশি কঠিন। এখানে অনেকে ভালো প্রস্তুতি নিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেন না। তাই প্রিলির জন্য পরিকল্পিত এবং টপিক ধরে ধরে পড়ার বিকল্প নেই। শেষ সময়ে রিভিশন দিতে পারা এবং পরীক্ষার আগে ও পরীক্ষাকালীন বেশি টেনশন না করা।

লিখিত ও ভাইবা গুরুত্বপূর্ণপছন্দের ক্যাডার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে লিখিত ও ভাইবা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পত্রিকা পড়া, সম্পাদকীয় কলাম পড়া, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু ও টার্ম সম্পর্কে জানা, ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং অনুশীলন করা রিটেনে ভালো করতে সহযোগিতা করবে। আর ভাইবার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী থাকা, বিনয়ের সাথে উত্তর করা, গুছিয়ে বলতে পারাটাকে আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। সবাই সব বিষয়ে ভালো করেন না বা ভালো নাম্বার পান না। তাই প্রত্যেকের নিজের সবল এবং দুর্বল দিক চিহ্নিত করে প্রস্তুতি নেওয়াই উত্তম।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাআমার পাঠদান ছাত্রছাত্রীরা যেন আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখি। ছাত্রদের সৎ, আদর্শবান সর্বোপরি ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

এসইউ/এএসএম