দেশজুড়ে

টাউন বাসে কমবে যানজট, হবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়

ক্রমেই যানজটের নগরীতে পরিণত হচ্ছে ময়মনসিংহ। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও যত্রতত্র পার্কিং যানজটের কারণ। এসব অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করে টাউন বাস সার্ভিস চালু হলে যানজট ও মানুষের ভোগান্তি কমবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ শহরে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে কিছুসংখ্যক পালকি গাড়ি (ইঞ্জিনচালিত চার চাকার গাড়ি) চলাচল করতো। তবে যাত্রীদের কাছে তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি পরিবহনটি। যে কারণে মালিকরা শহর থেকে পালকি গাড়ি উঠিয়ে নেন। পরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল শুরু হয় শহরে। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অটোরিকশা। ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল ময়মনসিংহ শহরকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বাড়তে থাকে।

বর্তমানে সিটি করপোরেশন এলাকায় অনুমোদিত অটোরিকশা রয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৬টি। ব্যাটারিচালিত রিকশা ১২ হাজার, যার মধ্যে চার ব্যাটারির মোটা চাকার রিকশা পাঁচ হাজার ৬০০। বাকিগুলো ৩০ অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির চিকন চাকার রিকশা ও ভ্যান।

সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন তিন হাজার অটোরিকশা নগরীতে চলাচল করতে পারে। মোটা চাকার রিকশা চলে দুই হাজার ৮০০টি। তবে নগরীতে ব্যাটারিচালিত এসব যানের সংখ্যা সিটি করপোরেশনের হিসাবের কয়েকগুণ বেশি।

Advertisement

আরও পড়ুন: অটোরিকশায় আটকা টাউন সার্ভিস

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একটি অটোরিকশায় পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি থাকে। সাধারণ হিসেবে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারিতে ১ দশমিক ৭৫ কিলোওয়াট থেকে ২ কিলোওয়াট ক্ষমতা থাকে। গড়ে ১ দশমিক ৫ কিলোওয়াট ধরে দিনে ৮ ঘণ্টা চার্জ দিলে বিদ্যুৎ খরচ হয় ১৪ ইউনিট। অর্থাৎ নগরীতে দৈনিক তিন হাজার অটোরিকশা বিদ্যুৎ গিলছে ৪২ হাজার ইউনিট।

চারটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারিযুক্ত একটি মোটা চাকার রিকশায় ৮ ঘণ্টা চার্জ দিতে দিনে ১১ দশমিক ২ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। দৈনিক নগরীতে চলা দুই হাজার ৮০০ মোটা চাকার রিকশায় বিদ্যুৎ খরচ হয় ৩১ হাজার ৩৬০ ইউনিট। এভাবে নগরীতে প্রতিদিন পৌনে এক লাখ ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে ব্যাটারিচালিত এসব যানের কারণে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে নগরীতে বাস সার্ভিস চালু হলে কমবে যানজট। বিদ্যুতও সাশ্রয় হবে।

Advertisement

জেলার জনউদ্যোগ কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, পালকি নামের এক ধরনের গাড়ি শহরে চলাচল করতো। গাড়িটিতে ২৫-৩০ জন যাত্রী বসতে পারতেন। তবে ভাড়া, নির্দিষ্ট সময়ে চলা, গাদাগাদি করে বসাসহ বিভিন্ন কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, বর্তমানে অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জে যে বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে, তা কিন্তু অপ্রচলিত খাত। এ বিদ্যুৎ যদি অটোরিকশা চার্জে না লাগতো, তাহলে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হতো।

জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন কালাম বলেন, বাস সার্ভিস চালু হলে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে অটোরিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাস চালুর বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে বলা হয়েছে। কিন্তু, চালু হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: পড়ে আছে কোটি টাকার বাস টার্মিনাল, সড়কে ভোগান্তি

ময়মনসিংহ শহরে বাস সার্ভিস চালু সময়ের দাবি উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ জাগো নিউজেক বলেন, একটি বাস অন্তত ৪০ জন যাত্রী নিতে পারে। কিন্তু, অটোরিকশায় ৫-৭ জন যাত্রী বসতে পারে। সে হিসেবে ছয়টি অটোরিকশার জায়গায় একটি বাস চলতে পারবে। তাহলে হিসেবে অনুযায়ী অবশ্যই যানজট কমে আসার কথা।

জেলা মোটরযান কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোসেন বলেন, যানজটের কারণে শহরের যে অবস্থা তাতে বাস ছাড়া চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, লোডশেডিং কমাতে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত অবৈধ যানের বিরুদ্ধে প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশন যদি ব্যবস্থা নেয় তাহলে সাধারণ গ্রাহক বিদ্যুতের সুফল পুরোপুরিভাবে ভোগ করতে পারবেন।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, টাউন বাস সার্ভিস চালু বড় একটি বিষয়। অতীতেও শহরে এ সার্ভিস চালু ছিল। কিন্তু, বিভিন্ন কারণে পরে বন্ধ হয়ে যায়। টাউন সার্ভিস চালু করতে হলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাছাড়া শহরের রাস্তাঘাটে টাউন সার্ভিস চলাচলের উপযোগী কি না, তাও দেখতে হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, টাউন সার্ভিস চালু বড় একটি বিষয়। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এসআর/জেআইএম