প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গুরোগী। রোগীর চাপে রাজধানীর অনেক হাসপাতালেই বিছানা ফাঁকা নেই। আবার বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। ফলে চিকিৎসা নিতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।
Advertisement
রোগীর স্বজনরা বলছেন, রাজধানীতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই শত শত মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হচ্ছে বহু নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার। কারণ একসঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন প্লাটিলেট পরীক্ষা, ডেঙ্গু শনাক্তের টেস্ট, সিভিসিসহ অন্যান্য পরীক্ষায় যাচ্ছে টাকা। অনেক ক্ষেত্রে একই পরিবারের একাধিক সদস্য ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় সবার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার।
আরও পড়ুন>> ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৯৬
শুক্রবার (২১ জুলাই) সরেজমিনে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা যায়, প্রতিটা ওয়ার্ডেই ডেঙ্গুরোগী রয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসক রাউন্ড দিচ্ছেন। বেশির ভাগ রোগীর স্যালাইন চলছে। তবে, রোগীর স্বজনদের অভিযোগ- শিশুদের বেবি স্যালাইনের সাপ্লাই সংকট থাকায় বাইর থেকে কিনতে হচ্ছে।
Advertisement
মুগদা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ১৭ মাস বয়সী আমিন। তার মা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যাত্রাবাড়ী এলাকায় থাকি। কিছুদিন আগে আমার ডেঙ্গু হয়েছিল। সেটা সারিয়ে বাসায় যাওয়ার কয়েকদিনের মাথায় বাচ্চার ডেঙ্গু হলো। তাই ওকে নিয়ে আবার হাসপাতালে এসেছি। ওর বাবা গাড়ির হেলপার। তার সামান্য আয়ে সংসার চালাতেই কষ্ট হয়। এর মাঝে আমার পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছেন। এখন ওর পেছনেও অনেক টাকা খরচ করতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের তো খরচ করার মতো সামর্থ্য নেই।
আরও পড়ুন>> মশা নিধন বরাদ্দে আছে, প্রয়োগে নেই
তিনি অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে বেবি স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। হাসপাতালের আশপাশের দোকানেও এ স্যালাইনের সাপ্লাই সংকট। অন্যদিকে, দূরের একটি ফার্মেসি থেকে এনেছি। হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়রা টাকা দিলে কাজ করেন, না হয় করেন না। তাদের কাছে কোনো সহযোগিতার কথা বললে, তারা খুশি (টাকা) করার কথা বলেন। এছাড়া এখানে নার্স ও বয়দের রোগীকে সেবা দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ কম। তবে, হাসপাতালে চিকিৎসার মান ভালো।
ডেঙ্গু আক্রান্ত দুই বছর বয়সী আমাতুরের বাবা বাপ্পি মিয়া বলেন, তাদের বাসা মুগদা এলাকায়। এই এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের পরিবারের চারজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। একসঙ্গে চারজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়া চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ ডেঙ্গু জ্বর হলে অনেকদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। প্রায় প্রতিদিন প্লাটিলেট পরীক্ষা, ডেঙ্গু শনাক্তের টেস্ট, সিভিসিসহ অন্যান্য পরীক্ষায় করাতে হচ্ছে।
Advertisement
আরও পড়ুন>> ঢাকার দুই মেয়রের পদত্যাগ দাবি তাবিথ-ইশরাকের
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ জুলাই থেকে আমাতুরের জ্বর। দুইদিন পর জ্বর কমে যায়। তবে, শরীর দুর্বল হতে থাকে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। যখন আমাতুরকে হাসপাতাল নিয়ে আসি তখন প্লাটিলেট ছিল ৩ লাখের মতো। এখন মাত্র ৯২ হাজার।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৪ দিন ধরে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ভর্তি রয়েছেন কলি নামে এক নারী। হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) বাইরে তার স্বজনদের সঙ্গে কথা হলে জাগো নিউজকে বলেন, আজ ১৪ দিন ধরে তাদের মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এর মধ্যে গত পাঁচদিন ছিল আইসিইউতে। তার পেছনে এরই মধ্যে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। কলির এক আত্মীয় জানান, কলি গর্ভবতী ছিল। ডেঙ্গুর কারণে তার বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন>> ডেঙ্গুতে একদিনে রেকর্ড ১৯ জনের মৃত্যু
হাসপাতালের নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গুরোগী। তাদের চিকিৎসা দিতে বেহাল অবস্থা। তবে, তারা রোগীর যত্নের ত্রুটি করছে না বলে জানান।
স্যালাইনের সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গুরোগীর চিকিৎসায় হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন মজুত আছে। এ বিষয়ে অন্য কেউ অনিয়ম করছে কি না খতিয়ে দেখা হবে।
এএএম/এমএএইচ/এএসএম