শিগগির শুরু হতে যাচ্ছে ৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি। এ নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে ভালো করার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ৪০তম বিসিএসের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউল হাসান সৌরভ—
Advertisement
বাংলাবিসিএস লিখিত বাংলা ১ম ও ২য় পত্রে মোট ২০০ মার্কসের পরীক্ষা। আপনি যদি সিলেবাস ও ৩৫-৪৩তম বিসিএসের বিগত প্রশ্নের ধাচ পর্যালোচনা করে পড়াশোনা করেন, আশা করা যায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপনার প্রস্তুতি গুছিয়ে আনতে পারবেন।
পুরো সিলেবাসকে আপনি তিনটি ভাগে ভাগ করে ফেলুন। প্রথম ভাগে (১ থেকে ৫ নাম্বার প্রশ্ন) রয়েছে ৩০ মার্কস। এই অংশে মার্ক তোলাও সহজ। টপিকগুলো আপনি এরই মধ্যে জানেন। যেহেতু আপনার প্রিলিমিনারি সিলেবাসের সঙ্গে অনেকাংশেই মিল আছে অংশটুকুর। একটি গাইডবই থেকে বানানের নিয়ম, শব্দের শ্রেণিবিভাগ, বাক্য, পদ ইত্যাদির মৌলিক বিষয়াবলি উদাহরণসহ পড়ে আত্মস্থ করুন। বাগধারা, বাক্যশুদ্ধি, বানানশুদ্ধি প্রিলিমিনারিতে পঠিত বই থেকে রিভিশন দিয়ে ফেলুন। তবে তিনটি টপিক অন্তত দুটি সোর্স থেকে পড়তে পারলে ভালো। যাতে প্রশ্ন গতানুগতিক বা সহজ না হলেও আপনি উত্তর করে আসতে পারেন।
দ্বিতীয় ভাগে আছে ওইসব টপিক, যেগুলো পুরোপুরি আপনার বানিয়ে লেখার দক্ষতার ওপর নির্ভর করছে। ৮৫ মার্কসের এ অংশে আছে ভাবসম্প্রসারণ (২০ মার্কস), সারমর্ম (২০ মার্কস) অনুবাদ (১৫ মার্কস), সংলাপ (১৫ মার্কস) ও চিঠি বা দরখাস্ত (১৫ মার্কস)।
Advertisement
এ অংশে ভালো করতে কিছু পরামর্শ১. চিঠি বা প্রতিবেদন বা দরখাস্তের ফরম্যাট শিখে রাখুন। প্রতিবেদন লিখতে হলে সেখানে প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট সমস্যার পরিসংখ্যান, সমস্যার সমাধানে আপনার বিশেষ পরামর্শ উল্লেখ করুন।২. কাল্পনিক সংলাপ আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তার মতো না হওয়াই ভালো। তাতে বাক্যের গভীরতা নষ্ট হয়। তবে সেমিফরমাল ভাব ধরে রেখে চরিত্রের মাধ্যমে বেশি বেশি তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করুন। খেয়াল রাখুন, কথোপকথন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়। অর্থাৎ একটি চরিত্রই শুধু উত্তর দিচ্ছে এমন যেন না হয়।৩. ভাবসম্প্রসারণ তিনটি প্যারায় লিখুন। প্রথম প্যারায় কয়েকটি লাইনে টপিকটির মূলভাব লিখুন। দ্বিতীয় প্যারায় টপিকটি বিশ্লেষণ করুন, উদাহরণ দিন ও তৃতীয় প্যারায় পরামর্শমূলক কথা বা রিকমেন্ডেশন দিয়ে শেষ করুন।৪. সারমর্ম বা সারাংশ আপনার নিজের মতো করে সাহিত্যসমৃদ্ধ ৪টি লাইন লিখুন।
তৃতীয় ভাগের ৮৫ মার্কসে আপনাকে সবচেয়ে বেশি ইফোর্ট দিতে হবে। কারণ এখানে যথেষ্ট গোছানো প্রস্তুতি না থাকলে আপনি দৌড়ে পিছিয়ে যাবেন। এর মধ্যে রয়েছে রচনা (৪০ মার্কস), গ্রন্থ সমালোচনা (১৫ মার্কস) ও বাংলা সাহিত্য (৩০ মার্কস)।
এ অংশে ভালো করতে কিছু পরামর্শ১. রচনার জন্য বিগত প্রশ্ন ও দেশের ট্রেন্ডিং টপিকগুলো খেয়াল রাখলে কমন পাবেন। ডাটা ও কোটেশন দিয়ে খাতা পূর্ণ করার ধারণা থেকে বেরিয়ে আসাই উত্তম। সাহিত্যসমৃদ্ধ লেখা, সঠিক বানান, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ডাটা ও কোটেশন, ডাটার সূত্র ইত্যাদি আপনাকে ভালো মার্কস পেতে সাহায্য করবে।২. গ্রন্থ সমালোচনার ক্ষেত্রে বিগত প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করে ৫-৬টি বই সম্পর্কে ভালোভাবে পড়ুন। এমনভাবে বই নির্বাচন করুন, যেন একটি বই দিয়ে ২-৩টি টপিক কাভার হয়ে যায়। কম গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো কমপক্ষে একবার রিডিং দিয়ে যাবেন, যাতে প্রশ্ন কঠিন হলে আইডিয়া থেকে লিখে আসতে পারেন। গ্রন্থ সমালোচনার ক্ষেত্রে অনেক ক্যান্ডিডেট শুধু ঘটনার উল্লেখ করেন, যা যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু, ভাষা, ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা, বিশেষজ্ঞের মতামত ইত্যাদিসহ সমালোচনা আপনাকে এগিয়ে রাখবে।৩. বাংলা সাহিত্যের প্রস্তুতিটা বেশ টেকনিক্যাল। পরীক্ষার হলে এর জন্য আপনি সময় পাবেন অল্প, তবে সাহিত্যসমৃদ্ধ ও তথ্যভিত্তিক অল্প লেখাও আপনাকে কাঙ্ক্ষিত মার্কস এনে দেবে এই অংশে। বিগত প্রশ্ন, প্রাচীন ও মধ্যযুগ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিখ্যাত গ্রন্থ, পিএসসির ১১ জন সাহিত্যিক, পঞ্চপাণ্ডব কবি, সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ লেখক; বিশেষ করে যারা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থ লিখে খ্যাতিমান এমন টপিকগুলো অবশ্যই পড়ে যাবেন। বিগত প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে কোটেশন বা কবিতার লাইন মুখস্থ ও নোট করে রাখুন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করুন।
সিলেবাসের কঠিন ও সহজ অংশের ভিত্তিতে আমি সিলেবাসটি তিনটি ভাগে ভাগ করে দেখিয়েছি। যাতে আপনি কঠিন অংশটুকুর প্রস্তুতিতে বেশি সময় দিতে পারেন।
Advertisement
এসইউ/এএসএম