মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ বেতকা গ্রামের যুবক সাব্বির হোসেন রকি। বাজারে যখন ফরমালিনযুক্ত ফলের ছড়াছড়ি, তখন পরিবারের সদস্যদের ফরমালিনমুক্ত আম খাওয়াতে শখের বসে কিছু আমগাছ লাগিয়ে বাড়ির পাশে তৈরি করেছিলেন বাগান। সে গাছগুলোতে ভালো ফলন হওয়ায় ধীরে ধীরে বাগানের পরিধি বাড়ান। এখন শখের সেই বাগান বিশাল বাণিজ্যিক বাগানে পরিণত হয়েছে।
Advertisement
পাঁচ বছরের মাথায় সাব্বির এলাকায় তিন একর জায়গাজুড়ে গড়ে তুলেছেন বাণিজ্যিক আমবাগান। কয়েকশ দেশি-বিদেশি গাছে ঝুলছে আম। বাজারে বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ভালো দাম। বাগানটি দেখতে ও আম কিনতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের মানুষ।
আরও পড়ুন: জিআই স্বীকৃতি পেলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা
পেশায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন রকি স্থানীয় আব্দুল লতিফ শেখের ছেলে। নারায়ণগঞ্জে রয়েছে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তবে এখন পুরোদস্তর ঝুঁকে পড়েছেন আমচাষে।
Advertisement
সরেজমিনে টঙ্গীবাড়ীর দক্ষিণ বেতকা এলাকায় দেখা যায়, রকির বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে নানা রং ও জাতের আম। বাড়ির আঙিনা থেকে পাশের পুকুর পাড়ে আমগাছের ছড়াছড়ি। কিছু দূরে বিশাল আমবাগান। পুকুরপাড়ে কর্মচারী নিয়ে আমগাছে পরিচর্যা করছেন রকি। বাগানে দেশি জাতের হাড়িভাঙ্গা, সুরমা, ফজলি, আশ্বিনী, আম্রপালি, ল্যাংড়া, নাক ফজলি, গুটি আম যেমন রয়েছে; তেমন চিয়াংমাই, কিউজাই কিং চাকাপাত, আমেরিকান রেড পালমাল, কিউজাই, বারি-৪, বারি-১১, ফোরকেজি, গোরমতি, ব্যানানা, আল ফ্রনচো, ডকমাই, থাই কাঁচামিঠা, কাটিমনসহ ২০-২৫ জাতের আমগাছ রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডে যাচ্ছে দিনাজপুরের আম
বাগানের কর্মচারীরা জানান, চলতি বছর প্রায় সব জাতের গাছেই আমের ফলন এসেছে। ছোট, বড় ও বিভিন্ন রঙের আম রয়েছে। তবে ফোরকেজি জাতের আমের ওজন সবচেয়ে বেশি। একেকটির ওজন সাড়ে ৩ থেকে ৪ কেজি। প্রতিকেজি আম ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ চার কেজি ওজনের একটি আমের মূল্য ১ হাজার ২০০ টাকা।
সাব্বির হোসেন রকি জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেখলাম বাজারে বেশিরভাগ আমই ফরমালিনযুক্ত। তখন মনে হলো বাসায় বাবা-মা, বাচ্চারা আছে। তাদের নিরাপদ আম খাওয়াতে হবে। তাই আমাদের যেহেতু জায়গা আছে সেখানে আমসহ বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করি। তবে আমই ছিল মূল ফোকাস, কারণ আম সবারই প্রিয়, ফলের রাজা।’
Advertisement
তিনি বলেন, বছরের মাথায় দেখলাম ভালো ফলন হচ্ছে। পরের বছর দ্বিগুণ ফলন হয়েছে। তখন মনে হলো বড় বাগান করি রাজশাহী-দিনাজপুরের মতো। প্রথমে ১৫ শতাংশ জায়গায় আমচাষ করি। এখন তিন একর জায়গাজুড়ে আমার বাগান।
আরও পড়ুন: সাপাহারে প্রতিদিন বেচাকেনা ২৫ কোটি টাকার আম
‘গতবছর আমার বাগানে উৎপাদন হয় ১ হাজার ৬০০ কেজি (৪০ মণ) আম। যার অর্ধেক বিক্রি করেছি। বাকি অর্ধেক পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছি। তবে চলতি বছর বাণিজ্যিকভাবে আম বিক্রি শুরু করেছি। আশা করছি এবার ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবো’, যোগ করেন আমচাষি সাব্বির হোসেন রকি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এ বিএম ওয়াহিদুর রহমান বলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলার প্রধান ফসল আলু। তবে জেলায় এখন ছোট-বড় মিলিয়ে আমবাগান গড়ে তুলছেন রকির মতো উদ্যোক্তারা। এটি আশার খবর।
এসআর/জেআইএম