খেলাধুলা

স্মৃতির মণিকোঠায় ভারতের বিপক্ষে সেই জয়টি

শুরুটা হয়েছিল মাশরাফির একটি সাক্ষাৎকার থেকে, সেখানে তিনি বলেছিলেন ‘যদি উইকেটে কিছু থাকে আর আমরা টসে জিতে ওদেরকে (ভারতকে) ব্যাটে পাঠাতে পারি, তাহলে ভারতকে ধরে দিবানি’। সেই ‘ধরে দিবানি’ শব্দটার এতটাই জোর ছিল যে সারা বাংলাদেশের দর্শকরা ২০০৭ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতকে ধরার জন্য যেন মুখিয়ে ছিল। ততদিনে কোচ ডেভ হোয়াটমোরের ছত্রছায়ায়, আর ক্যাপ্টেন হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিজেদের দিনে বেশ ভয়ংকর দল। এরপর ম্যাচ শুরুর আগের দিন একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় যখন জাতীয় দলের ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানা নিহত হন, তখন খেলোয়াররা ম্যাচটি জিতে তাকে উৎসর্গ করার সংকল্প করেন। এভাবেই রচিত হয়েছিল ২০০৭ বিশ্বকাপের ভারত বধ কাব্যের পটভূমি।২০০৭ সালের ১৭ মার্চ মাশরাফির কথামত টসটা বাংলাদেশ না জিতলেও, টসে জিতে ভারত কিন্তু ব্যাটিং নিয়েছিল। উইকেটে তেমন ময়েশ্চার না থাকা এবং ভালো ব্যাটিং পিচ হওয়াতেই এই সিদ্ধান্ত। ম্যাচে তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে সেই মাশরাফিই ভেঙ্গে দিলেন শেবাগের স্ট্যাম্প। তারপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পরতে থাকলে ১৫ ওভার পরে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৪০, ততক্ষণে লিটল মাস্টার শচীনও ফিরে গেছেন সাজঘরে। মাঝে সৌরভ ও যুবরাজ কিছুটা হাল ধরলেও রানের গতি বাড়াতে পারেননি বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে। মাশরাফি ও সৈয়দ রাসেলের পাশাপাশি রফিক-রাজ্জাক-সাকিব এই তিন ‘স্পিন-ত্রয়ী’র ঘূর্ণিতে ভারত অল-আউট হয় মাত্র ১৯১ রানে।শিরোপা প্রত্যাশি ভারতের বিপক্ষে এই রান তাড়া করে জেতাটাও সহজ মনে হচ্ছিল না তখনকার বাংলাদেশের কাছে। কিন্তু জবাব দিতে নেমে তখনকার ১৭ বছর বয়সী তামিম ইকবালের ৫৩ বলে ৫১ রানের ইনিংসে ম্যাচটি হাতে চলে আসে বাংলাদেশের। জহির খানকে ড্যান্সিং ডাউন দ্য উইকেটে এসে তামিমের দর্শনীয় ছক্কাটি এখনও ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে ভাসে। পাশাপাশি তখন নতুন দলে জায়গা পাওয়া মুশফিক ও সাকিব হাফ সেঞ্চুরী করে দলকে সহজেই এনে দেন ৫ উইকেটের জয়।বিশ্বকাপে সেবারই প্রথম বাংলাদেশের সাথে খেলা হয়েছিল ভারতের, আর প্রথম দর্শনেই বাংলাদেশের কাছে হেরে সেবার বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল ভারতকে। বাংলাদেশ জেতার পর সেদিন রাতে দেশে হয়েছিল বিজয় মিছিল। হবেই না কেন, জয়টি ছিল শচীন, সৌরভ, দ্রাবিড়, শেবাগ, যুবরাজের মত স্টারে ঠাসা ভারতের বিপক্ষে এক উদীয়মান দলের জয়। ৩৮ রান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন মাশরাফি।আজ প্রায় নয় বছর পেরিয়ে গেছে। সেদিনের সেই উদীয়মান বাংলাদেশের পালকে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য জয় ও অর্জন, এখন দলটি অনেকটাই পরিণত। তবুও সেদিনের সেই জয়টি আজও বাংলাদেশের অজস্র দর্শককে নাড়া দিয়ে যায়, মনে করিয়ে দেয় পুরোনো দিনের সংগ্রামের গল্প। যে গল্পটি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের স্বপ্নময় উত্থানের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে আছে, এদেশের অসংখ্য ক্রিকেট অনুরাগীর ভালবাসায়!লেখক পরিচিতি : কম্পিউটার প্রকৌশলীআরএস/আরআইপি

Advertisement