ফিচার

ক্যানভাসে জীবনের গল্প আঁকেন দৃষ্টি

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

Advertisement

ফুল, লতাপাতা প্রকৃতির নানা জিনিসের ছবি তার ক্যানভাসে ধরা দেয়। ছোট ক্যানভাস হয়ে ওঠে জীবনের এক অনবদ্য গল্প। শিল্পপ্রেমীরা এই গল্প দারুণভাবে উপভোগ করেন। জানান তাদের প্রশংসার কথা। ছবি এঁকে মানুষকে মুগ্ধ করা এই শিল্পীর নাম সুমাইয়া খান দৃষ্টি। দৃষ্টি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিক থেকে ব্যাচেলর ইন আর্কিটেকচার করেছেন। দুই সন্তান, স্বামীকে নিয়ে তার পরিবার। ছোটবেলা থেকেই তার ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ।

সংসার ,সন্তান লালন পালনেই যখন অনেকে হাঁপিয়ে ওঠেন। নিজের ভালোলাগা, শখ পূরণ করা আর হয়ে ওঠে না। দৃষ্টি তাদের দলে নয়। ছবি আঁকার প্রতি ছোটবেলায় যে আগ্রহ ছিল তা দিন দিন আরও তীব্র হয়েছে। ঘরের সব কাজ করার পাশাপাশি ছবি আঁকেন। ছবির মধ্যে সুখ, শান্তি, তৃপ্তি খুঁজে পান।

কেন ছবি আঁকেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছবি আঁকতে বসলে নিজের জগতে হারিয়ে যাই। যত চিন্তা, টেনশন থাক। সব থেকে মুক্ত হয়ে একদম সতেজ হয়ে যাই। নিজের যেটা ভালো লাগে সেটাই তিনি রং তুলিয়ে ফুটিয়ে তোলেন। সাদা ক্যানভাস হয়ে ওঠে বর্নিল। আবার গ্রাহক যেমনটা চান। কখনো কখনো তেমনটাও এঁকে দেন। ধানমন্ডিতে তার বাসা যেন এক ছবির মেলা। নানা ধরনের ছবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নিজের আঁকা ছব ছবিই তার প্রিয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: মশার তৈরি কেক-স্যুপ তাদের প্রিয় খাবার

একেকটি ছবি যেন একেকটি জীবনের গল্প বলে। প্রতিটি ছবি ভালোবাসা, ভালোলাগার জিনিস মন্দ হয় কি করে। প্রতিটি ছবির প্রতি তার অসম্ভব মায়া জড়িয়ে আছে বলে জানান।

ছবি আঁকা তার পেশা না হলেও আয়ের বেশ ভালোই উৎস হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে পেজ আছে দৃষ্টির। সেখানে তিনি আঁকা ছবিগুলো বিক্রি করেন। ছবি বিক্রির টাকায় প্রিয় মানুষদের উপহার দেন। বর্তমানে কিছু টাকা সঞ্চয় ও করছেন বলে জানান তিনি।

সংসার সামলে ছবি আঁকার সময় বের করা তার জন্য বেশ বড় চ্যালেঞ্জ। কষ্ট হলেও সময় ঠিকই তিনি বের করে নেন। এজন্য পরিবারের মানুষদের প্রতি তার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। স্বামীসহ অন্যরা সবসময় পাশে থাকেন। ছবি আঁকতে উৎসাহ দেন। ভালো মন্দ মতামত জানান। এটা দৃষ্টি তার অন্যতম প্রাপ্তি বলে মনে করেন। পরিবার কেবল উৎসাহই দেয় না, বরং প্রয়োজনে সহযোগিতাও করেন তারা।

Advertisement

ছবি আঁকায় দৃষ্টির প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। এজন্য ইউটিউব, গুগলের সাহায্য নেন তিনি। নিয়মিত ছবির এক্সিবিশনে যান। নিজে চর্চা করে নানা কৌশল রপ্ত করেছেন। কোথাও আটকে গেলে নিয়েছেন অভিজ্ঞদের পরামর্শ। এভাবেই তিনি ছবি আঁকায় দক্ষ হয়ে উঠেছেন।

ভালো ছবি আঁকলে তার মূল্যায়ন তো হবেই। দৃষ্টির বেলায়ও তাই হয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ৫টি এক্সিবিশনে অংশ নিয়েছেন। পুরস্কারও পেয়েছেন নানা প্রতিষ্ঠান থেকে। এক্রেলিক কালার তার ছবি আঁকার মাধ্যম হলেও তিনি ছবিতে কিছুটা ভিন্নতা দিতে চেস্টা করেন।

দৃষ্টির আঁকা ছবি যারা কিনতে চান। অথবা তাকে দিয়ে ছবি আঁকিয়ে নিতে চান। তারা দৃষ্টির ফেসবুক পেজ ওয়ার্ক সাইতে ভিজিট করতে পারেন। প্রায় ছয় হাজার ফলোয়ার রয়েছে দৃষ্টির এই পেইজটিতে। এখানে যেমন তার আঁকা ছবি দেখা যাবে। আবার অর্ডার ও দেওয়া যাবে। সব সুযোগই রেখেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: ১৪ তলার এই ভবনে বাস করে পুরো শহরের মানুষ

নানা রকম জুয়েলারি ডিজাইনও করেন তিনি। কাঠের জুয়েলারিতে রং ছড়িয়ে রাঙিয়ে তোলেন। করোনাকালীন তিনি নিজে ডিজাইন করে মাস্ক তৈরি করে বিক্রি করেছেন। আবার পাটের ব্যাগের উপর তার আঁকা ছবি সবাই খুব পছন্দ করেছে।

নিজে আঁকার পাশাপাশি নতুনদের শেখার জন্য ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরি করতে চান দৃষ্টি। সৃজনশীল মাধ্যমে নিজেকে তুলে ধরবেন। এমনটাই ইচ্ছা তার। এছাড়াও তিনি সবাইকে পরামর্শ দেন নিজেদের সৃজনশীলতাকে মেলে ধরার। বিশেষ করে যারা গৃহিনী। এক সময় শখে ছবি আঁকতেন। তারা চাইলে দৃষ্টির মতো শখটাকে বাঁচিয়ে তুলতে পারেন। অলস সময় না কাটিয়ে ক্যানভাস হয়ে উঠতে পারে আনন্দের উৎস। নিজেকে মেলে ধরার উত্তম মাধ্যম। এমনটাই দৃষ্টি মনে করেন। তিনি বলেন, কাজকে ভালোবেসে সময় দিতে হবে।

কেএসকে/জেআইএম