দেশজুড়ে

একই ওয়ার্ডে ডায়রিয়া-ডেঙ্গু রোগী, নেই সুপেয় পানি

ব্যস্ততম ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুত্ব অনেক। কিন্তু হাসপাতালটিতে আছে জনবল সংকট। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও কর্মচারীর অভাবে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

Advertisement

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উপজেলার চার ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কয়েক লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল। অথচ যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে রোগীদের যেতে হয় বেসরকারি ক্লিনিক কিংবা সদর অথবা পার্শ্ববর্তী জেলা ফরিদপুরে। একটু জটিল ও কঠিন রোগী হলেই অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়।

অভিযোগ আছে, হাসপাতালের অভ্যন্তরের সবকটি টিউবওয়েল নষ্ট থাকায় হাসপাতালের বাইরে থেকে খাবার পানি আনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। টয়লেটের পানির লাইনের সমস্যা ও অপরিচ্ছন্ন। ওয়ার্ডে দিনে চিকিৎসকের দেখা মেলে একবার আর নার্সদের ডেকেও পাওয়া যায় না। ওয়ার্ডে একই সঙ্গে রাখা হচ্ছে ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ সব ধরনের রোগী। ফলে অস্বস্তিতে থাকেন রোগীরা।

অপরদিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনা। এতে আশঙ্কাজনকসহ সামান্য ক্ষত নিয়ে এ হাসপাতালে আসেন অনেকেই। এছাড়া উপজেলার বিভিন্নস্থান থেকে নানা সমস্যায় চিকিৎসা নিতে আসেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু চিকিৎসক ও লোকবলের অভাবে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় অন্য হাসপাতালে যেতে হয় এসব রোগীদের। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ রোগী এবং তার স্বজনরা পড়েন বিপাকে। এ সময় যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় সঙ্কটাপন্ন রোগীদের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা দিয়ে রেফার করা ফরিদপুর বা ঢাকায়। এতে অনেক সময় গন্তব্যস্থানে আগেই ঘটে মৃত্যু। জানা যায়, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ ২৫টি পদের ১০টি শূন্য। জুনিয়র বিশেষজ্ঞের ১০টি পদের ছয়টি পদ শূন্য। এছাড়া হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের পদও আছে শূন্য। চিকিৎসক না থাকায় বহির্বিভাগে শিশু বিভাগসহ অন্য বিভাগে রোগী দেখছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তারা।

Advertisement

অন্যদিকে নার্সিং সুপারভাইজারসহ ৪৪ জন স্টাফ নার্সের মধ্যে আছেন মাত্র ৩৪ জন। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ৫৪ জনের মধ্যে আছেন ৩৪ জন ও চতুর্থ শ্রেণির ২৫ জন কর্মচারীর মধ্যে আছেন মাত্র ১০ জন।

স্থানীয় হাসান মোল্লা বলেন, মহাসড়কের পাশের এ হাসপাতালে ভালো কোনো চিকিৎসক নেই। জরুরি রোগী এলেই ফরিদপুরে পাঠানো হয়। হাসপাতালের ভেতরের সবগুলো টিউবওয়েল নষ্ট। রোগীদের খাবার পানির জন্য হাসপাতালের বাইরের টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে হয় স্বজনদের। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই। ভেতরে ময়লা-আবর্জনা আছে।

বালাম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, জ্বরসহ আমার ছেলেকে ভর্তি করার পর ডাক্তার মাত্র একবার দেখেছেন। এমনকি ডাক্তার দেখার পর নার্সরাও তেমন ওয়ার্ডে আসেন না। ফলে এক রাত রেখেই বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। সফিকুল ইসলাম বলেন, চর্ম রোগের ডাক্তার দেখানোর জন্য এসেছিলাম। এখন ডাক্তার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি। আমার মতো এরকম অনেকেই এসে ফিরে যাচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালে সবাই আসে একটু সুবিধার জন্য। কিন্তু এখানে তো অনেক ডাক্তার নাই। সব ধরনের রোগের ডাক্তার থাকলে গরীব অসহায় মানুষের জন্য ভালো হবে।

রোগীর স্বজন সোমা আক্তার বলেন, জ্বর নিয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু ওয়ার্ডে আসার পর দেখি আমার পাশের বেডে ডায়রিয়া রোগী, অন্যপাশে শ্বাসকষ্ট, ডেঙ্গুসহ অন্য রোগী। পাশের বেডের ডায়রিয়ার ওই রোগী সারারাত পায়খানা করেছে। দুর্গন্ধে আমার বাচ্চাকে নিয়ে সারারাত ওয়ার্ডের বাইরে থেকেছি। একসঙ্গে সব ধরনের রোগী, এভাবে কী থাকা যায়? এরওপর টয়লেটের অবস্থাও ভালো না। ডাক্তার শুধু সকালে একবার আসেন।

Advertisement

বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম বলেন, খাবার পানি সব সময় লাগে। কিন্তু হাসপাতালের টিউবওয়েল একটাও ভালো না। ফলে রোগী রেখেই অনেক কষ্ট করে হাসপাতালের বাইরে থেকে খাবার পানি আনতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাতে পানি আনতে খুব ভয় লাগে। হাসপাতালের টিউবওয়েল গুলো ভালো থাকলে সুবিধা হতো। এছাড়া টয়লেটেও সমস্যা আছে।

এ বিসয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) মো. শরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এখানে গড়ে প্রতিদিন আউট ডোর ও ইনডোর মিলে ৪-৫০০ রোগী সেবা নেন। দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া না থাকায় প্রয়োজনের তুলনায় কিছুটা জনবল সংকট তৈরি হয়েছে। তবে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে না। এ জনবলেই রোগীরা সব সময় সেবা পাচ্ছে। শুধু আশঙ্কাজনক রোগীদের অন্য জায়গায় রেফার করা হয়। এছাড়া ডেঙ্গুসহ সব ধরনের রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিচ্ছি।

আরএমও আরও বলেন, কয়েকদিন ধরে হাসপাতালের টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছে না। বিষয়টি পৌরসভাকে জানিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো ঠিক করা হবে। পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে জনবল বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যে পরিচ্ছন্নকর্মী আছে, তাদের মাধ্যমে হাসপাতালের ওয়ার্ডসহ অন্য স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছি। তবে ল্যাব ও এক্স-রে মেশিন এখনো ডিজিটাল হয় নাই।

এসজে/এএসএম