দেশজুড়ে

কৃষকদল নেতা সজিবের মায়ের আহাজারি, ‘তুই আমার ওষুধ আনবি না?’

লক্ষ্মীপুরে হামলায় নিহত কৃষকদল নেতা সজিব হোসেনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কিছুদিনের মধ্যেই তার যাওয়ার কথা ছিল সৌদি আরবে। যেখানে মরুভূমির ধুলা লাগতো তার শরীরে। সেখানে আজ তাকে চিরদিনের জন্য রেখে আসা হয়েছে মাটির ঘরে।

Advertisement

সজিবের শোকে কান্না করতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নাজমা বেগম। অসহায় বাবা আবু তাহের ছেলের শোকে নিস্তব্ধ। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না আশপাশ থেকে আসা লোকজন।

বুধবার (১৯ জুলাই) বাদ জোহর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ধন্যপুর গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সজিবের মরদেহ দাফন করা হয়। এতে বিএনপি নেতাকর্মীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নেন। এর আগে লক্ষ্মীপুর শহরে বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির বাসার সামনে সজিবের গায়েবানা জানাজা হয়।

আরও পড়ুন: কৃষকদল নেতা সজিব হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগ জড়িত: বিএনপি

Advertisement

ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে মা নাজমা বারবার বলছিলেন, সজিব তুই কই? সবাইকে দেখছি, তোকে দেখছি না। সবাই আমার বাড়িতে ভিড় জমিয়েছে। তুই কোথায় গেলি? তুই আমার ওষুধ কিনে আনবি না? আর কি তোকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না? আমি তোকে বুকে জড়িয়ে রাখতে চাই। তুইতো আমার সবচেয়ে আদরের। তোকে ছাড়া আমি কীভাবে বাঁচবো?

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। পরিবারের ছোট হওয়ায় তিনি সবার আদরের ছিলেন। সজিব পেশায় টাইলস মিস্ত্রি ছিলেন। মেজো ভাই সুজনের সঙ্গে তিনি কাজ করতেন। তার বড় ভাই মিজান সৌদি প্রবাসী। কয়েকদিন পর সজিবেরও সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। এলাকার কারও সঙ্গে তিনি কখনো বিরোধে জড়াননি। মিলেমিশে থাকতেন।

আরও পড়ুন: সজিব হত্যাকাণ্ড অরাজনৈতিক: এসপি

বিএনপির পদযাত্রায় যাওয়ার সময় বাড়িতে বলে গিয়েছিলের, তিনি লক্ষ্মীপুর যাচ্ছেন। এরপর বুধবার দুপুরে তার নিথর দেহ বাড়িতে ফিরেছে। আদরের সন্তান হারিয়ে বাবা প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। তিনি কারও সঙ্গে ঠিকমতো কোন কথা বলছেন না।

Advertisement

সজিবের বাবা আবু তাহের বলেন, আমার ছেলে লক্ষ্মীপুরে বিএনপির মিছিলে গিয়েছিল। সেখানে তাকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। যারাই ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের গ্রেফতারে পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।

সজিবের দাদা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. হানিফ মিয়া বলেন, সজিব আমার সঙ্গে মিছিলে এসেছিল। কিন্তু আমার নাতিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি বিচার চাই।

আরও পড়ুন: নিহত সেই যুবক কৃষকদল নেতা, আহত শতাধিক

চরশাহী ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সাফায়ত হোসেন বলেন, সজিব কৃষকদলের সক্রিয় নেতা ছিল। সবসময় কর্মসূচিতে অংশ নিতো। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তাকে অমানবিকভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এটি সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে। দুপুরে সজিবের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) লক্ষ্মীপুরে পুলিশ-বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষের এক পর্যায়ে কৃষক দল নেতা সজিব হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সজিব সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধন্যপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানা কৃষকদলের সদস্য।

কাজল কায়েস/এমআরআর/জেআইএম