আন্তর্জাতিক

‘পাকিস্তানি ভাবিকে’ নিয়ে বিপাকে ভারত

‘প্রেমের টানে’ পাকিস্তান থেকে চলে আসা আলোচিত সীমা হায়দারকে নিয়ে বেশ ধন্দের মধ্যে পড়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে টানা জেরা করেছে উত্তর প্রদেশের সন্ত্রাস দমন ইউনিট (এটিএস)। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সীমার ভারতীয় স্বামী এবং শ্বশুরকেও।

Advertisement

মঙ্গলবার গভীর রাতে তাদের একটি ‘সেফ হাউজ’-এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের দায়ে পুলিশ সীমা ও তার ভারতীয় স্বামী সচিন মীনাকে গ্রেফতার করে। যদিও পরে আদালত তাদের জামিন দেন।

সোমবার তাদের তুলে নিয়ে যায় এটিএস। প্রায় ছয় ঘণ্টা জেরা করার পরে মঙ্গলবার সকালে আবারও সীমা, সচিন ও তার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান সন্ত্রাস দমন ইউনিটের কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন>> প্রেমের টানে ভারতে পাকিস্তানি নারী, ফিরিয়ে না দিলে হামলার হুমকি!

Advertisement

সীমার সঙ্গে পাকিস্তানি গুপ্তচর বাহিনীর কোনো যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র। সীমার পাকিস্তানি পরিচয়পত্র সে দেশে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে যাচাই করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।

সচিন মীনা ও সীমা হায়দার। ছবি সংগৃহীত

পাবজি খেলতে গিয়ে প্রেম ও বিয়ে

পাকিস্তানে থাকাকালে মোবাইলে পাবজি গেম খেলতে গিয়ে দিল্লির নিকটবর্তী নয়ডার বাসিন্দা সচিন মীনার সঙ্গে আলাপ হয় বিবাহিত সীমা হায়দারের। সেই পরিচিতি গড়ায় প্রেমে। শেষ পর্যন্ত সচিনকে বিয়ে করার জন্য নেপাল হয়ে ভারতে চলে আসেন সীমা। সঙ্গে নিয়ে আসেন চার সন্তানকেও। সীমার পাকিস্তানি স্বামী বর্তমানে সৌদি আরবে থাকেন।

Advertisement

সীমা জানিয়েছেন, তারা নেপালে বিয়ে করেছেন এবং তিনি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি পাকিস্তানি গুপ্তচর কি না এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ার পর থেকে বারবারেই সেই অভিযোগ অসত্য বলে উল্লেখ করেন সীমা। তার দাবি, একমাত্র সচিনের প্রেমের টানেই ভারতে এসেছেন তিনি।

আরও পড়ুন>> প্রেমের টানে ভারতে গিয়ে ‘প্রতারণার শিকার’ বাংলাদেশি তরুণী

তবে ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করছেন, সীমা হায়দারের বক্তব্যে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। তাতেই সন্দেহ বাড়ছে।

উঠছে নানা প্রশ্ন

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দিন সীমা হায়দারকে করাচি থেকে দুবাই এবং সেখান থেকে নেপালে যাওয়া নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছে।

সেখানে কার কার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, কারা তার ভ্রমণের নথিপত্র বানিয়ে দিলো, কোন নম্বর থেকে পাবজি গেমের অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন>> কারাগারে প্রেম: প্যারোলে বেরিয়ে বিয়ে করলেন দুই কয়েদি

তাছাড়া, সীমার বক্তব্য অনুসারে মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেও তিনি কীভাবে ভালো হিন্দি ও ইংরেজি বলেন, এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। তার পরিবারের কেউ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে কর্মরত কি না সেটিও জানতে চেয়েছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, কীভাবে একজন পাকিস্তানি নাগরিক ভারত-নেপাল সীমান্ত পেরিয়ে চলে এলো, পুলিশ কেন ধরতে পারলো না এবং দীর্ঘদিন ধরে কীভাবে এমন একজন নারী উত্তর প্রদেশ পুলিশের এলাকায় বসবাস করছেন, এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে এসএসবি এবং উত্তর প্রদেশ পুলিশের কাছে।

নেপাল ও ভারতের মধ্যে চলাচল করতে দুই দেশের নাগরিকদের কোনো ভিসা-পাসপোর্ট লাগে না। কিন্তু সীমা হায়দার পাকিস্তানি নাগরিক হয়েও কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকলেন, প্রশ্ন উঠছে সেটি নিয়েই।

করাচিতে ফেলে আসা জিনিসপত্রের মধ্যে থাকা সীমার ছবি দেখাচ্ছেন বাড়ির মালিক। ছবি সংগৃহীত

যেভাবে করাচি থেকে ভারতে

সীমা হায়দার জানিয়েছেন, তিনি এক ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে প্রথমে করাচি থেকে দুবাই যান। সেখান থেকে নেপাল হয়ে ভারতে পৌঁছান।

সীমা বলেন, পাবজি খেলতে গিয়ে বন্ধুত্ব হয় আমাদের। তারপর কথাবার্তা শুরু। সারাদিন, সারারাত কথা হতো আমাদের। তারপরে আমি ঠিক করি, ভারতে চলে আসবো। ইউটিউবে কিছু ভিডিও দেখে আমি বোঝার চেষ্টা করি, কীভাবে ভারতে আসা যেতে পারে। সেই অনুযায়ী এক ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে দুবাই, সেখান থেকে নেপালে আসি। সেখানেই বিয়ে হয় আমাদের। তারপর বাসে ভারতে আসি।

আরও পড়ুন>> প্রেমিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলায় বাধা, বাবার নামে থানায় অভিযোগ মেয়ের

সীমা দাবি করেন, পাকিস্তানি স্বামীর সঙ্গে তার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। তবে তার স্বামী গুলাম হায়দার বলেছেন, সীমা মিথ্যা বলছেন, তাদের বিচ্ছেদ হয়নি।

তার কথায়, ঈদের পরে বাচ্চারা আমার কাছে আসতে চেয়েছিল। তাই আমি অনলাইনে আবেদন করে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দেই। আমাদের যদি বিয়ে বিচ্ছেদই হয়েই থাকবে, তাহলে কেন আমি ২০২৩ সালে ওদের হয়ে পরিচয়পত্রের আবেদন করতে যাবো?

গুলাম হায়দার চাইলেও তার পরিবার চায় না, সীমা পাকিস্তানে ফিরে যাক। অবশ্য এই ‘ভারতীয় ভাবি’ বিবিসিকে বলেছেন, আমি নিজের গলা কেটে ফেলবো, বিষ খাবো, কিন্তু ফিরে যাবো না।

সূত্র: বিবিসি বাংলাকেএএ/