ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে বহুল আলোচিত ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ ছাত্রীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের বিষয়টি হাইকোর্টকে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
তবে রিটকারী আইনজীবী আদালতকে বলছেন- বহিষ্কার আদেশে আইনগত ত্রুটি আছে।
এটি উপস্থাপনের পর বুধবার (১৯ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ পরবর্তী আদেশের জন্য ২৬ জুলাই দিন রেখেছেন।
রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন জাগো নিউজকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী বলেছেন- যথোপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন। আমি বলেছি যথাযথ হয়নি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা আছে, ভিসি প্রথম শাস্তি দেবেন, ৫০০ টাকা জরিমানা এবং ১২ মাসের জন্য বহিষ্কার। এরপর ভিসি যদি মনে করেন শাস্তি অপরাধের তুলনায় কম হয়েছে তাহলে তিনি এটা ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠাবেন। কিন্তু ভিসি নিজে শাস্তি না দিয়ে সরাসরি ডিসিপ্লানারি কমিটিতে পাঠিয়ে কমিটির মাধ্যমে শাস্তি দেওয়ার কারণে এটা ডিফেক্ট অব ল’ হয়েছে। এটা ভিসি ও কর্তৃপক্ষ দলীয় বিবেচনায় এবং ইচ্ছা করে করেছেন যেন, এ ছাত্রীরা এ বহিষ্কার আদেশের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিলে আদেশটা যেন অকার্যকর হয়। আদালত বলেছেন- এগুলো লিখিত আকারে দিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীকে বলেছেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে। এরপর ২৬ জুলাই দিন রেখেছেন।
Advertisement
আরও পড়ুন>>> অন্তরাসহ ৫ ছাত্রী এক বছরের জন্য বহিষ্কার
গত ১৫ জুলাই বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার চার সহযোগীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের ২০২ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মিটিং শেষে প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ওইদিন শাহাদৎ হোসেন জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি এবং হাইকোর্টের যে প্রতিবেদন আমাদের কাছে ছিল তার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কোড অব কন্ডাক্টের আলোকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্তরাসহ অভিযুক্ত পাঁচজনের প্রত্যেককে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট-১৯৮৭ এর পার্ট-২ ধারা-৮ মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি এক (১) বছরের জন্য ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়।
ওইদিন বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে শৃঙ্খলা কমিটির সভা হয়। এ সভায় উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ছাত্রী মোসা. ফুলপরী খাতুন নির্যাতনের ঘটনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
Advertisement
অন্তরাসহ বহিষ্কার আদেশ পাওয়া চার শিক্ষার্থী হলেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও চারুকলা বিভাগের হালিমা খাতুন ঊর্মি। চারজন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অন্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এর আগে ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে দুই দফায় ফুলপরী নামের এক ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাচ্ছুম ও মোয়াবিয়া, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীর বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ এবং হাইকোর্ট কর্তৃক পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট হয়। ফলে হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।
পরে তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা উঠে এলে অভিযুক্তদের হল এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাদের উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এফএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম