দেশজুড়ে

এক যুগ ধরেই শুধু তৎপরতা, বাস্তবায়নে নেই অগ্রগতি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রস্তাবিত প্রাগপুর স্থলবন্দর বাস্তবায়নে প্রায় এক যুগ ধরে শুধু তৎপরতা চললেও বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ সরকার নতুন করে যে ছয়টি স্থলবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে তার মধ্যে কুষ্টিয়ার প্রাগপুরের নাম রয়েছে সবার প্রথমে।

Advertisement

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুষ্টিয়া সীমান্তের প্রাগপুরে স্থলবন্দর হলে সড়কপথে পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে কলকাতার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে। ফলে পরিবহন ব্যয় ও সময় লাগবে কম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এপারে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর, ওপারে ভারতের নদীয়া জেলার শিকারপুর। মাঝখানে সরু ফিতার মতো বয়ে চলেছে মাথাভাঙ্গা নদী। প্রাগপুর থেকে লালনশাহ সেতু হয়ে জাতীয় মহাসড়ক মাত্র ২০ কিলোমিটার। ওপারে পশ্চিমবঙ্গের শিকারপুরে ভারতের জাতীয় মহাসড়ক।

ব্রিটিশ আমলে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর একটি সেতু ছিল। সেসময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের যাতায়াতের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহার হতো সেতুটি। কালক্রমে ওই সেতু বিলীন হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করতে ফের পথটি চালু করা দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

আরও পড়ুন: ঘোষণায় সীমাবদ্ধ ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর

অর্থনেতিক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত হওয়ায় ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। সে অনুযায়ী তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান কুষ্টিয়া সফরে এসে প্রাগপুর সীমান্তে স্থলবন্দর স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর প্রাগপুর সীমান্তে সরেজমিনে স্থলবন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল। ভূমি জরিপসহ অন্যান্য কাজও হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও প্রাগপুরে স্থলবন্দর স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার স্থলবন্দর নির্ধারিত এলাকা পরিদর্শন করেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাগপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়নে অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রেও দু’দেশের সরকারের বড় বাজেটের অর্থ বরাদ্দের দরকার হবে না। মহাসড়ক কাছাকাছি হওয়ায় অনায়াসে পণ্য আমদানি-রপ্তানির মতো অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। শুধু মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর ছোট্ট একটি সেতু নির্মাণ করা দরকার।

আরও পড়ুন: পাথর আমদানিতে টিকে আছে নাকুগাঁও স্থলবন্দর

Advertisement

দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আতিয়ার রহমান আতিক বলেন, ভারতের শিকারপুর, জমশেদপুর, করিমপুরসহ আশপাশের অনেক স্থানের সঙ্গে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিজড়িত। এখানে স্থলবন্দর হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে জানার সুযোগ পাবেন।

প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুকুল বিশ্বাস বলেন, প্রাগপুর থেকে লালনশাহ ও বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকা-কলকাতার সঙ্গে খুব কম খরচে ও দ্রুততম সময়ে যোগাযোগ করা যাবে। অন্যান্য জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কম খরচে পণ্য আনা-নেওয়া সহজ হবে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, স্থলবন্দরটি বাস্তবায়ন হলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে পদ্মা নদীর ভাঙনে প্রায় নিঃস্ব একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে এ স্থলবন্দর।

আরও পড়ুন: তলানিতে ঠেকেছে আখাউড়ার আমদানি-রপ্তানি

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, বর্তমান সরকার ভারতের সঙ্গে নতুন করে যে ছয়টি স্থলবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে তার মধ্যে প্রাগপুর প্রথমে। এটি বাস্তবায়ন হলে শুধু দৌলতপুরের অর্থনীতি নয়, জাতীয় অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করবে। তবে স্থলবন্দর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

কুষ্টিয়া চেম্বারের পরিচালক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এস এম কাদেরী শাকিল জাগো নিউজকে বলেন, এটি দ্রুত বাস্তবায়নে কুষ্টিয়া চেম্বারের পক্ষ থেকে আমরা ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দু’দেশের সরকারের কাছে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের জোর দাবি, দ্রুত প্রাগপুর স্থলবন্দর বাস্তবায়ন করা হোক।

এসআর/এএইচ/এএসএম