দেশজুড়ে

নিহত সেই যুবক কৃষকদল নেতা, আহত শতাধিক

লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত যুবকের পরিচয় মিলেছে। তার নাম মো. সজিব হোসেন (৩০)। তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানা কৃষকদলের সদস্য।

Advertisement

চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে আমাদের কৃষকদল নেতা সজিবকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি চরশাহী ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, যুবদলকর্মী নিহতের দাবি বিএনপির

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর শহরের মজুপুর, চকবাজারসহ কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে এ সংঘর্ষ হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের মদিন উল্যাহ হাউজিংয়ের একটি বাসার দোতলার সিঁড়ি থেকে সজিবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

এ ঘটনার পর থেকে পুরো শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।

জেলা বিএনপির ভাষ্যমতে, বিনা উসকানিতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় হামলা চালানো হয়। এতে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিমসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত ও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ফেনীতে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ আহত অর্ধশত

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির আয়োজনে বিকেলে চকবাজার ব্রিজের দক্ষিণপাড়ে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন।

Advertisement

একই সময় শহরের উত্তর তেমুহনী থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শান্তি শোভাযাত্রা নিয়ে চকবাজার ব্রিজের উত্তরপাড়ে আসেন। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু নেতৃত্ব দেন। এমন অবস্থায় পুলিশ উভয়পক্ষকে মাঝ দিয়ে বাধা দেয়। তবে একপর্যায়ে দুপক্ষের নেতাকর্মীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মজুপুর ডিবি রোড, ঝুমুর ও মাদাম এলাকায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে উভয় দলের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মৃত অবস্থায় রক্তাক্ত এক যুবককে হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া ১৬ পুলিশ এবং দুই দলের ৫০ নেতাকর্মী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান বলেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের লোকজনের ওপর বিভিন্ন পয়েন্টে হামলা করেছে। পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একজনকে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রথমে হামলা, ভাঙচুর করেছে। তারা বৃষ্টির মতো ইট মেরেছে, ফাঁকাগুলিও করেছে। এতে আমাদের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়। তাদের একজন কীভাবে মারা গেছে তা আমরা বলতে পারবো না।

আরও পড়ুন: বগুড়ায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, স্কুলছাত্রীসহ আহত ৮০

লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, বিএনপির উত্তেজিত নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তারা হাইওয়ের দিকে ওঠার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। তাদের হামলায় পুলিশের ২৫-৩০ সদস্য আহত হয়। একজন কীভাবে মারা গেছে তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

কাজল কায়েস/এমআরআর