সিলেটের কতিত ‘দানবীর’ শিল্পপতি রাগীব আলী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি জালিয়াতি মামলা ফের সচল হয়েছে। বুধবার সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো মামলা দুটি সচল করার নির্দেশ দেন। বুধবার বিকেলে মামলা দুটি সচলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মফুর আলী।অ্যাডভোকেট মফুর আলী জানান, রাগীব আলীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা জালিয়াতি মামলা অতীতে হাইকোর্টের নির্দেশে বাতিল হয়েছিল। অবৈধ দখলে থাকা তারাপুর চা বাগান উদ্ধারে সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের দেয়া রায়ে রাগীব আলীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি জালিয়াতি মামলা সচলেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের রায়ের নির্দেশনা অনুসারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠিপ্রাপ্ত হয়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে মামলা দুটি চালুর আবেদন জানাই। বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো আবেদন আমলে নিয়ে মামলা দুটি পুনরুজ্জীবিত করে তদন্তের নির্দেশ দেন।মামলা দুটি পুনরুজ্জীবিত করণের আবেদন শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন, জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মফুর আলী, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ও সহকারী পিপি অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন।রাগীব আলীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সিলেট কোতয়ালি থানায় দায়ের করা দুটি জালিয়াতি মামলা দায়ের হয়েছিল। এরমধ্যে ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দায়ের করা মামলা নং-১১৭। যার জি, আর মামলা নম্বর- ৯৭৪/২০০৫ ইং। ধারা- ৪১৯/৪২০/৪০৬/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ দণ্ডবিধি। একই বছরের ২ নভেম্বর একই থানায় দায়ের করা মামলা নম্বর-১২। যার জিআর মামলা নম্বর-১১৪৬/২০০৫ ইং। ধারা- ৪৬৬/৪৬৮/৪৭১/৪২০/৩৪ দণ্ডবিধি। সুপ্রিমকোর্টের সিভিল আপিল মামলা নং- ১৬৩/২০০৯ ইং মামলার রায় দেন গত ১৯ জানুয়ারি। এতে উপরোক্ত মামলা দুটি চালুর নির্দেশনা দেন আপিলেট ডিভিশন।জানা গেছে, তৎকালীন সিলেট সদর ভূমি কমিশনার এসএম আব্দুল কাদের কোতয়ালি থানায় এই দুটি মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলায় উল্লেখ করা হয় রাগীব আলী তার নিজের স্বার্থে পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের নামে জাল আমমোক্তারনামা তৈরি করেছেন। তিনি তারাপুর চা বাগান আত্মসাৎ করার জন্য জাল অনুমতিপত্র এবং সন্দেহজনক আমমোক্তারনামার বলে নিজের লোক দিয়ে আব্দুল হাই’র নামে বিক্রি রেজিস্ট্রেশন করে নিয়েছেন। মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত ৪২২.৯৬ একর জমি সাড়ে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রির চুক্তিতে আবদ্ধ হন। অথচ সেবায়েত ওই দলিলে স্বাক্ষর করেননি। পরবর্তীতে হাইকোর্টের নির্দেশে এই প্রতারণা মামলা স্থগিত করা হয়।তবে গত ১৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের চার বিচারক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ প্রদত্ত রায়ে এই প্রতারণা মামলা পুনরায় চালুর নির্দেশ দেন। এই রায়ে রাগীব আলীর দখল থেকে তারাপুর চা বাগান ৬ মাসের মধ্যে উদ্ধারসহ ১৭টি নির্দেশনা দেয়া হয়।ছামির মাহমুদ/এমএএস/আরআইপি
Advertisement