কৃষি ও প্রকৃতি

ঝালকাঠির বিলাতি গাব যাচ্ছে সারাদেশে

কোনো ধরনের বপন, রোপণ, যত্ন ও পরিচর্যা ছাড়াই বাগানে জন্ম নেয় বিলাতি গাব গাছ। ৫ বছর বয়স হলেই দেওয়া শুরু করে ৩শ গ্রাম ওজনের লাল রঙের ফল। যা স্থানীয় ভাষায় বিলাতি গাব হিসেবেই পরিচিতি। সুস্বাদু ফলটি এখন গ্রামের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গ্রামাঞ্চল থেকে মাইকিং করে সংগ্রহ করছেন পাইকাররা। প্রতি কুড়ি (২০টি) বিলাতি গাব আকারভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কেনেন তারা। এরপর যাত্রীবাহী পরিবহনে করে পৌঁছে দেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট শহরে গাব পাওয়া হয়।

Advertisement

রাজাপুর উপজেলার মোবারককাঠি গ্রামের একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা মাঠে মোকাম তৈরি করেন ব্যবসায়ী খলিল হাওলাদার। তার সঙ্গে আরও ১০-১২ জন সহযোগিতা করেন। তারা সবাই এ মৌসুমে গ্রাম থেকে বিলাতি গাব সংগ্রহ করে প্যাকেট করতে সহযোগিতা করেন।

ব্যবসায়ী খলিল হাওলাদার জানান, পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাইকিং করে গাব সংগ্রহ করা হয়। গাবের আকারভেদে প্রতি পিস ৪-৫ টাকা করে দেওয়া হয়। এরপর মোকামে এনে পাশের পুকুরে নিয়ে ধুয়ে ময়লা পরিষ্কার করা হয়। এতে গাবের উজ্জ্বলতা বাড়ে। এরপর প্ল্যাস্টিকের ক্যারেটের মধ্যে কলাপাতা দিয়ে মুড়িয়ে গাব রাখা হয়।’

আরও পড়ুন: বিদেশি মালবেরি চাষে সফল কালীগঞ্জের মোস্তফা

Advertisement

তিনি জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটসহ দেশের বড় শহরে যাত্রীবাহী পরিবহনে ওইসব শহরের আড়ৎদারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তারা কেজি হিসেবে বিক্রি করে পাওনা টাকা পাঠিয়ে দেন। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে এ ব্যবসা চলে। এছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে অন্য ব্যবসা একই নিয়মে করা হয়।

এলাকাবাসী জানায়, পাকা গাবের মৌসুম আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস। এ সময় জেলার বিভিন্ন বাজারে পাকা গাবের ঘ্রাণে মন মাতোয়ারা হয়ে যায়।

ঝালকাঠি শহরের বড় বাজার, চাঁদকাঠি বাজার, কলেজ মোড়, কাঠপট্টি, রাজাপুরের বাগড়ি বাজার, সদরের বাজার, পুটিয়াখালী, লেবুবুনিয়া বাজার, পাকাপুল বাজার, গালুয়া বাজার, নলবুনিয়া বাজার, ফকিরের হাট, চাড়াখালির হাট, বাদুরতলা হাট, কাচারি বাড়ির হাট, বলারজোর হাট, গাজির হাট, পাড়ের হাট, বাইপাস মোড় বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে এবং বাড়ি বাড়ি থেকে ব্যবসায়ীরা গাব পাইকারি হিসেবে কিনে দেশের বিভিন্ন শহর-বন্দরে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করছেন।

আরও পড়ুন: আতিয়ারের ‘ব্রুনাই কিং’ ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে

Advertisement

কিস্তাকাঠি গ্রামের মজিদ, আলতাফ ও সুলতান জানান, বিলাতি গাব গাছের জন্য বীজ বপন, চারা রোপণ বা কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। গাব গাছ থেকে ফল নিচে পড়ে, পাখির খাবারের জোগানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যায়। প্রাকৃতিকভাবেই এ গাছের জন্ম হয়। বিলাতি গাব সুস্বাদু এবং কেমিক্যালমুক্ত হওয়ায় এর চাহিদাও অনেক। বর্তমানে অতিথি আপ্যায়নেও শোভা পাচ্ছে এ লোভনীয় ফল। পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ভেজাল ও ফরমালিনমুক্ত এ গাব সবাই পছন্দ করেন।

জানা যায়, ঝালকাঠি জেলার প্রায় সব বাড়িতেই কমবেশি গাব গাছ আছে। এ গাছের গোড়ায় কোনো সার বা ওষুধের প্রয়োজন না হলেও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন আছে। তবে পরিচর্যা না থাকায় গাব গাছ দিন দিন কমতে শুরু করেছে। বেশি বেশি গাব গাছ রোপণ ও পরিচর্যা করলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।

রাজাপুরের গালুয়া বাজারের পাইকারি গাব ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম, পাকাপুল বাজারের হারুন সরদার জানান, জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে ১ কুড়ি (২০টি) পাকা গাব আকার অনুযায়ী ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কেনা যায়। পরে ১০০টি গাব আড়তে পাইকারি বিক্রি হয় ৭০০-৮০০ টাকায়। শহরের আড়ৎদাররা প্রতিটি গাব ভোক্তাদের কাছে ১০-১২ টাকা হারে বিক্রি করেন।

আরও পড়ুন: পাহাড়ে মিয়াজাকি আমের কেজি ৯০০ টাকা

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, এ অঞ্চলের মাটি বেশ উর্বর। তাই সব ফলের পাশাপাশি গাব ফলেরও ফলন বেশি। তাছাড়া প্রতি বছরই এ অঞ্চলে গাবের বাম্পার ফলন হচ্ছে। এ গাব স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ হচ্ছে।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেদী হাসান সানি জানান, গাব ফরমালিন ও ভেজালমুক্ত একটি দেশীয় ফল। এটি যেমন মজাদার ঠিক তেমনি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।

মো. আতিকুর রহমান/এসইউ/জেআইএম