চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে একই অফিসের উচ্চমান সহকারী (হিসাব রক্ষক) মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। দাপ্তরিক কাজের পেপার টাইপে ভুল করা নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে।
Advertisement
রোববার (১৬ জুলাই) বিকেলে এ ঘটনা ঘটেছে। তখন সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হোসেনকে অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্ধার করে হারদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের কাছে মৌখিক অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী। একটু সুস্থ হলে ওই উচ্চমান সহকারী বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ দেবেন বলেও জানান তিনি।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার নাজমুল হোসেন বলেন, ডিজি বরাবরে একটি চিঠি টাইপ করার জন্য অফিসের উচ্চমান সহকারী মনিরুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি চিঠিটা টাইপে বার বার ভুল করলে সেটি সংশোধন করতে বললে, সে হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে কিল ঘুষি মারতে মারতে একপর্যায়ে ফেলে দিয়ে রক্তাক্ত করে। যখন সে আমাকে মারধর করছিল, তখন তার ভয়ে অফিসের কেউ ঠেকাতেও আসেননি। আমি খুব বিব্রত হয়েছি। এখন আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
Advertisement
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় দুই প্রতিষ্ঠানে অভিযান, জরিমানা
এ বিষয়ে উচ্চমান সহকারী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বললে, তিনি বাগবিতণ্ডার কথা শিকার করেছেন। তবে মারধরের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি শুধু বলেন, বিষয়টি আপোষ-মীমাংসার চেষ্টা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, কি আর বলবো, দুনিয়াতে জোর যার মুল্লুক তার। মনিরুজ্জামান আজ যে কাজটা করেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তাকে কিছু বলা যায় না, তিনি এখানকার স্থানীয়। আর তার ভাইয়েরা বড় বড় পদে চাকরি করেন। তার অনেক ক্ষমতা। তাই তো সে এই অফিসেই বছরের পর বছর চাকরি করে যাচ্ছে। কোনোভাবে বদলি হয় না।
আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, ইউএনও বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Advertisement
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, রোববার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে নাজমুল হোসেনকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তিনি কিল-ঘুষিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তার পরিহিত শার্টও ছেড়া অবস্থায় পেয়েছি। এছাড়া আঘাতে তার দাঁত নড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এখন শঙ্কাযুক্ত।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস বলেন, উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে লাঞ্ছিতের বিষয়টি শুনেছি। তাকে অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। উচ্চমান সহকারীর বিরুদ্ধে ওই দপ্তর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন: সাত নদীতে অপরিকল্পিত ১২ সেতু নির্মাণ বন্ধের দাবি
এবিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সিদ্দিকা সোহেলী রশিদ বলেন, আমি বিষয়টি শুনে হতবাক হয়েছি। পরে আলমডাঙ্গাতে গিয়েছিলাম এবং আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নাজমুল সাহেবকে দেখে এসেছি। তিনি মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। একটু সুস্থ হলেই লিখিত অভিযোগ দেবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। উচ্চমান সহকারী মনিরুজ্জামানের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হুসাইন মালিক/জেএস/জেআইএম