ফিচার

কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজীর প্রয়াণ দিবস

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ছিলেন একজন বাঙালি লেখক ও কবি। তিনি ১৯ ও ২০ শতকে বাঙালি মুসলিম পুনর্জাগরণের প্রবক্তাদের একজন। তিনি মুসলিমদের জন্যে বিজ্ঞানসাধনা, মাতৃভাষাচর্চা, নারীদের শিক্ষা এসবের পক্ষে লেখালেখি করেন।

Advertisement

১৮৮০ সালের ১৩ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থানের সম্মানে নামের শেষের 'সিরাজী' পদবী যুক্ত করেন। সৈয়দ শব্দটি তার আরব বংশকে বোঝায় যার পূর্বপুরুষ খলিফা আলী। শৈশবে তিনি স্থানীয় পাঠশালা ও জ্ঞানদায়িনী মাইনর ইংরেজি স্কুলে পড়েন। এরপর সিরাজগঞ্জ বনোয়ারীলাল হাই স্কুলে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। সিরাজী পাঠশালায় ফার্সি এবং বাড়িতে সংস্কৃত ভাষা শিখেছিলেন আর সংস্কৃত ব্যাকরণ ও সাহিত্যের সঙ্গে হিন্দুশাস্ত্র যেমন-বেদ, মনুস্মৃতি ও উপনিষদ প্রভৃতি অধ্যয়ন করেছিলেন।

ইসমাইল হোসেন সিরাজী বক্তা হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন। তৎকালীন বাঙালি মুসলিমদের পুনর্জাগরণ ও রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি বক্তৃতা করতেন। তিনি হিন্দু-মুসলিম সাম্যে বিশ্বাসী ছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সমিতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন, যেমন, কংগ্রেস, পরবর্তীতে মুসলিম লীগ, জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ, স্বরাজ পার্টি, কৃষক সমিতি ইত্যাদি।

ইসমাইল হোসেন সিরাজী আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকের মুসলমান লেখকদের অন্যতম। তার রাজনৈতিক আদর্শ সাহিত্যকর্মেও দৃশ্যমান। তার রচনাসমূহকে ইসলামি সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: অনল-প্রবাহ, আকাঙ্ক্ষা, উছ্বাস, উদ্বোধন, নব উদ্দীপনা, স্পেন বিজয় কাব্য, মহাশিক্ষা মহাকাব্য (১ম খণ্ড, ২য় খণ্ড)।

Advertisement

উপন্যাস: রায়নন্দিনী, তারাবাঈ, ফিরোজা বেগম, নূরউদ্দীন, জাহানারা, বঙ্গ ও বিহার বিজয়, বঙ্কিম দুহিতা। প্রবন্ধ: স্ত্রীশিক্ষা, স্বজাতি প্রেম, আদব কায়দা শিক্ষা, স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা, সুচিন্তা, মহানগরী কর্ডোভা, আত্মবিশ্বাস ও জাতীয় প্রতিষ্ঠা, তুর্কী নারী জীবন।

ছাত্রাবস্থায়ই সিরাজী কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং ধর্মবক্তা মুনশী মেহের উল্লাহের এক জনসভায় তার অনল-প্রবাহ কবিতাটি পাঠ করেন। মুনশী মেহেরউল্লাহ কবিতা শুনে মুগ্ধ হন এবং নিজ ব্যয়ে ১৯০০ সালে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেন।

১৯০৮ সালের শেষদিকে বইটির বর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয় যা তৎকালীন বাংলা সরকার বাজেয়াপ্ত করে আর তার প্রতি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সিরাজী তখন ফরাসী-অধিকৃত চন্দননগরে গিয়ে ৮ মাস আত্মগোপন করে থাকেন। পরে আত্মসমর্পণ করলে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচারের অভিযোগে তাকে দু'বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

ব্রিটিশ সরকার তার জীবদ্দশায় ৮২ বার তার বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। ১৯৩১ সালের ১৭ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Advertisement

কেএসকে/জেআইএম