আইন-আদালত

রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন নিজামী

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বুধবার সকালে নিজের মৃত্যু পরোয়ানা শোনার পর আইনজীবীর সঙ্গে শলা-পরামর্শ করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ৭৫ বছর বয়স্ক নিজামীর বিশ্বাস, মিথ্যা ও অসত্যের উপর ভিত্তি করে তার বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে নিজামীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। বুধবার সকালে এই পরোয়ানা কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছানোর পর তা পড়ে শোনানো হয় নিজামীকে। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ এর সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, মৃত্যু পরোয়ানা শোনার পর মতিউর রহমান নিজামী স্বাভাবিক ছিলেন। তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করবেন বলে জানিয়েছেন।  এরপর দুপুরে নিজামীর সঙ্গে দেখা করে কারাগার থেকে বেরিয়ে তার আইনজীবী মতিউর রহমান আকন জানান, তাদের রিভিউ আবেদন করতে বলেছেন নিজামী। আকন বলেন, রিভিউ করা হবে কি না সে বিষয়ে মতামত নেয়ার জন্য তার (নিজামী) সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাদের স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে অবশ্যই রিভিউ দায়ের করতে হবে। নিজামী মানসিকভাবে অত্যন্ত দৃঢ় এবং ভালো আছেন বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার আইনজীবী। আইনজীবী মতিউরের সঙ্গে আরেক আইনজীবী মশিউল আলম এবং নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনও ছিলেন।   রিভিউ করার জন্য নিজামী সময় পাবেন ১৫ দিন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনি কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনালের মাহবুবে আলমের ভাষ্য অনুযায়ী, সে সময় শুরু হয়েছে গতকাল মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর থেকেই। নিজামীর আইনজীবী বলেন, ‘তিনি (নিজামী) বলেছেন, পাবনার যে দুটো এলাকার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে, সেই দুটো এলাকায় তিনি ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের আগে কোনো দিনই যাননি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকার আমার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেছে এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি আশা করি রিভিউয়ে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে। আমি বেকসুর খালাস পাবো এবং আমি আবার জনগণের মাঝে ফিরে আসবো।’তবে কবে নাগাদ নিজামী রিভিউ করছেন তা এখনো জানা যায়নি। রিভিউয়েও যদি মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে তবে তার সামনে খোলা থাকবে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ। আর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে যদি না পান তবে সাকা-মুজাহিদ-কাদের মোল্লা-কামারুজ্জামানের মতো তারও দণ্ড কার্যকর করা হবে।উল্লেখ্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন নিজামীকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ২৮ মে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে জামায়াত আমিরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়। সাবেক মন্ত্রী নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর  ৪টিতে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া আরো চারটিতে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ২৩ নভেম্বর আপিল করেন তিনি। ২১ পৃষ্ঠায় মূল আপিল আবেদনের সঙ্গে ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্র দাখিল করা হয়। মূল আপিলে ১৬৮টি গ্রাউন্ড পেশ করে দণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়। তবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে তিনটি অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। ১৫ মার্চ বিকেলের দিকে নিজামীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। সর্বোচ্চ আদালত এ যুদ্ধাপরাধীর মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়া নিজামীর মামলাটি ছিল ষষ্ঠ মামলা। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আরো ৫টি মামলা আপিলে নিষ্পত্তি হয়েছে।মো. আমিনুল ইসলাম/এনএফ/এমএস

Advertisement