মতামত

একটি চিঠি ও বাঙালির মুক্তির বার্তা

একটি ছবি যেমন হাজারও শব্দের প্রতিচ্ছবি, তেমনি বার্তাও জনগণের মুক্তির দূত হিসেবে আর্বিভূত হয়। একাত্তরের ২৫ মার্চের মধ্যরাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পাঠানো তারবার্তাটি বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তেমনি ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেপ্তারের পূর্বমুহূর্তে বঙ্গবন্ধু তনয়া একটি চিঠি লিখে যান, যা জনগণকে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নির্দেশনা দেন। অগ্রজ সাংবাদিক দুলাল আচার্যের ‘‘ইতিহাসের সেই চিঠি ’’ লেখায় সেটা ফুটে উঠেছে। শেখ হাসিনার লেখা চিঠিটি ১৬ জুলাই গ্রেপ্তারের পরের দিন অধিকাংশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ছাপানো হয়।

Advertisement

সেসময়ে দৈনিক প্রথম আলোর ১৭ জুলাই এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চিঠিতে শেখ হাসিনা লিখেছেন- ‘আমাকে সরকার গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় জানি না। আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেই সারা জীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোনো অন্যায় করিনি। তারপরও মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।’

তিনি লিখেছেন- ‘দেশবাসী, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছে আবেদন, কখনো মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সাথে, আমৃত্যু থাকব। আমার ভাগ্যে যাহাই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চালিয়ে যান।’

বাংলাদেশ ও বাঙালির ভাগ্যাকাশে দেদীপ্যমান সূর্যের মত কিরণ দেওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর চিঠিতে স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়- নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে দেশের গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। জনগণের নৈতিক ও ন্যায্য অধিকার আদায়ের পাশাপাশি গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টার কথা। জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের নির্দেশনাও দেন তিনি।

Advertisement

প্রেক্ষাপট১/১১ এর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মিথ্যা হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সোমবার বৃষ্টিস্নাত সকালে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ধানমন্ডির বাসভবন সুধাসদন থেকে গ্রেপ্তার করেন শেখ হাসিনাকে। গ্রেপ্তারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু তনয়া ফজরের নামাজ আদায় করেন এবং জাতির ক্লান্তিকাল থেকে উত্তোরণের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক একটি চিঠি লিখে যান। যে চিঠির অনুপ্রেরণায় পরবর্তীতে স্বোচ্চার হয় দেশবাসী।

দৈনিক প্রথম আলোর ১৬ ও ১৭ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে দেখা য়ায় গ্রেপ্তারের জন্য ১৫ জুলাই রাত থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন যৌথবাহিনীর সদস্যরা। এ কারণে সংবাদকর্মীরা সুধা সদনের সামনে ভিড় করতে থাকে সন্ধ্যা থেকেই। এর আগে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাতে সন্ধ্যা সাতটার পর ছয় শতাধিক পুলিশ সদস্যকে শাহবাগের পুলিশ নিয়ন্ত্রণকক্ষে জড়ো করা হয়। রাত নয়টার পর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁদের অভিযানের বিষয়টি বুঝিয়ে দেন। ভোর পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক পুলিশের সদস্যরা শাহবাগে অবস্থান করেন এবং ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে একসঙ্গে ধানমন্ডির চার ও পাঁচ নম্বর সড়ক দিয়ে প্রায় ৫০টি গাড়ি সুধা সদনের দুই দিক থেকে অবস্থান নেয়। এতে র‌্যাব ,পুলিশ,মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় দেড় হাজার সদস্য অংশ নেন। তারা সুধা সদনের চারিদিকে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার ঘিরে ফেলেন। এর আগে পাঁচ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় পুলিশ আসার পরপরই একটি ব্যারিকেড দেওয়া হয়। এই ব্যারিকেডের পর নিরাপত্তাকর্মীরা সুধা সদনের কাছে এসে আরও দুটি ব্যারিকেড দিয়ে ভেতরে যাওয়া আসার সব পথ বন্ধ করে দেন। এরপরই একটি প্রিজন ভ্যান ও একটি অ্যাম্বুলেন্স সুধা সদনের গেটে আনা হয়। অ্যাম্বুলেন্সে একজন মহিলা চিকিৎসকও আসেন।

ভোর পাঁচটার দিকে র‌্যাবের শতাধিক সদস্যের একটি দল এবং মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মিলি বিশ্বাসের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা সুধা সদনে প্রবেশ করেন। শেখ হাসিনাকে ভোরে গ্রেপ্তার করা হলেও সকাল ৭ টা ৩২ মিনিটে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে সুধাসদন থেকে বের করে নিয়ে আসে। এসময় সুধাসদনের চর্তুদিক যৌথ বাহিনীর দুই সহস্রাধিক সদস্য ঘিরে রাখে। গ্রেফতারের সময় সাদা শাড়ি পরিহিত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যৌথবাহিনীর কাছে জানতে চান, কেন তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। দেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে চুপ ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা।

গ্রেপ্তারের পরেই পুলিশের একটি গাড়িতে তাঁকে মেট্টোপলিটন আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত তাঁর জামিন না মঞ্জুর করে কারগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে কারগারে না রেখে সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ কারাগারে রাখেন। সেদিন আদালতের সামনে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রায় ৩৬ মিনিট বক্তৃতা করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ হয়।

Advertisement

এদিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মিছিল বের করে। এতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী অংশ নেন। মিছিলটি মল চত্বর ও উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে সূর্যসেন হলের সামনে শেষ হয়। (সূত্র- প্রথম আলো-১৭ জুলাই ২০০৭)

শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের সংবাদে সকালেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশি বাঁধায় করতে না পেরে আদালতের সামনের সড়কে অবস্থান করে। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকলে পুলিশ লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা একটি বাস ভাংচুর করেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। (সূত্র- প্রথম আলো-১৭ জুলাই ২০০৭)

 

একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ষোষণা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে সম্মোহনী শক্তি জুগিয়েছিল। ঠিক তেমনি ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তাঁর কন্যার লেখা একটি চিঠিটিও এদেশের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির নিউক্লিয়াস( পাওয়ার হাউস) হিসেবে কাজ করেছিল। নতুবা দেশ হয়তো আজও জিয়া-এরশাদের মতো কোন স্বৈরশাসনের বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে পিছিয়ে যেতো শত বছর।

 

এছাড়া শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,মহানগর,জেলা ও উপজেলাতে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগসহ ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহ বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ জানায়।

দৈনিক প্রথম আলোর ১৮ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়,শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের পরের দিন ১৭ জুলাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি ককটেল বিস্ফোরেণের ঘটনা ঘটে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ক্লাস হয়নি। কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও বেশিরভাগ ক্লাস হয়নি। রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরেও বিক্ষোভ হয়েছে।

গ্রেপ্তারের সময় শেখ হাসিনা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিক সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে যান। দায়িত্ব পেয়ে জিল্লুর রহমান নেতা-কর্মীদের শেখ হাসিনার মুক্তি ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে দলকে সংগঠিত করতে থাকেন। কারগারে অন্তরীণ থাকার সময় শেখ হাসিনা নিজেও বারবার দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জনান এবং আইনজীবী ও চিকিৎসকরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন নির্দেশনাও দিতেন।

গ্রেপ্তারের পরে সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ কারাগারে শেখ হাসিনাকে রাখার পর তাঁর খাবারে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এসব কারণে ক্রমাগত শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর। দেশে-বিদেশে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবি জোরালো হয়ে উঠে। এসময় ঢাকা শহরের প্রায় ২৫ লাখসহ সারাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর করে।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনে তাঁর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়,যেখানে নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। শেখ হাসিনার সম্মোহনী শক্তি ও ব্যক্তিত্বের নিকট হার মেনে নিয়ে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে ৩৩১ দিন কারাগারে রাখার পর ২০০৮ সালের ১১ জুন মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

উল্লেখ্য ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি, লুটপাট, সারাদেশে একযোগে বোমা বিস্ফোরণ, দশ ট্রাক অস্ত্র, বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বারবার হত্যাচেষ্টা করে। তারপরও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার না করে গণতন্ত্র রক্ষায় স্বোচ্চার, গণমানুষের মুক্তির নেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জনগণের অব্যাহত চাপে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের প্রায় দুই মাস বা ৫৮ দিন পরে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মোদ্দাকথা জামায়াত-বিএনপি জোটের ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নীলনকশার নির্বাচন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর সংবিধান লঙ্ঘন করে নিজেকে তত্ত্বাবধায় সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। ফলে সৃষ্টি হয় সাংবিধানিক সংকট। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি কিছু সেনা কর্মকর্তারা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে রাষ্ট্রপতি রেখে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ফখরুদ্দিন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণার মাধ্যমে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়। সেখানে ব্যর্থ হয়ে শেখ হাসিনাকে দেশের বাহিরে পাঠানোর চক্রান্ত করা হয় ।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনার কান ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘমেয়াদী নিজের চিকিৎসা এবং সন্তানসম্ভবা পুত্রবধূকে দেখতে ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে যান। চিকিৎসা শেষে ২৩ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা ছিল তাঁর। দেশের ভেতরে ক্ষমতালোভী-উচ্চভিলাষী একটি চক্র শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে না দেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করে।

২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। এরপর জামায়াত-শিবিরের দায়ের করা অপর একটি হত্যা মামলায় এজাহারে নাম না থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার নামে চার্জশিট দেওয়া হয়।তিনি আইনী প্রক্রিয়ায় মামলা মোকাবেলার উদ্দেশ্যে সফর সংক্ষিপ্ত করে ১৪ এপ্রিল দেশে ফেরার প্রস্তুতি নেন। এসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুল মতিন শেখ হাসিনাকে তড়িঘড়ি করে দেশে না ফিরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে ফিরতে বলেন। এরপর ২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনোটে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়্। প্রেসনোট জারির পরে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসমূহে সাক্ষাৎকার দিলে, তাৎক্ষণিকভাবে ঐদিন রাতেই বাংলাদেশের গনমাধ্যমসমূহে তাঁর বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিভিন্ন সংস্থা, বিমান ও স্থল বন্দরসমূহের কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। ২০০৭ সালের ২২ এপ্রিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসমূহ শেখ হাসিনার দেশে ফিরতে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রেসনোট প্রকাশ করে। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ এর লিখিত নোটিশের কারনে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ২৫ এপ্রিল শেখ হাসিনাকে বোডিং পাস দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘আউট লুক ’ ২০০৭ সালের তিন মে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারে নিলে বলেন, অসাংবিধানিক সরকার তাঁর ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে দেশে প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করছে। যেখানে তত্ত্ববধায়ক সরকারের দায়িত্ব হলো ৯০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু,অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা , যা সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদে বর্ণিত।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ২০০৭ সালের সাত মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। দেশে ফিরে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলেন। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ও ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা রুখতে ২০০৭ সালের আজকে দিন অর্থাৎ ১৬ জুলাই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি সাজানো মামলায় গ্রেফতার করে।

প্রায় দুই বছর দেশ শাসনের পরে জনগণের অব্যাহত চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৬৭টি আসনে একচেটিয়া জয় পায়। যার মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ২৩০ টি আসন। ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করে। টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় থেকে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে চলেছেন বঙ্গবন্ধু তনয়া।

একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ষোষণা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে সম্মোহনী শক্তি জুগিয়েছিল। ঠিক তেমনি ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তাঁর কন্যার লেখা একটি চিঠিটিও এদেশের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির নিউক্লিয়াস( পাওয়ার হাউস) হিসেবে কাজ করেছিল। নতুবা দেশ হয়তো আজও জিয়া-এরশাদের মতো কোন স্বৈরশাসনের বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে পিছিয়ে যেতো শত বছর। তাঁর দূরদর্শী চিন্তা ও নেতৃত্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পরেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মার মত খরস্রোত নদীতে সেতু নির্মাণ, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন, দেশে শতভাগ বিদ্যুৎতায়নের জন্য রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র,পায়রা সমুদ্র বন্দর, মেট্টোরেল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর,বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। আজকের দিনে তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি।

লেখক: প্রতিবেদক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)।

এইচআর/জিকেএস