আন্তর্জাতিক

তীব্র গরমে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ-জাপান, সহসা নেই স্বস্তির খবর

বিশ্বজুড়ে রেকর্ড তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কয়েক কোটি মানুষ এখন তীব্র তাপপ্রবাহের সঙ্গে লড়াই করছে। একই পরিস্থিতি দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ ও জাপানের। বিজ্ঞানিরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও আবহাওয়ার বিশেষ রূপ ‘এল নিনো’র কারণে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা এমন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

Advertisement

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে টেক্সাস পর্যন্ত অঞ্চলে তাপপ্রবাহ আরও চরম হয়ে উঠতে পারে ও চলতি সপ্তাহের শেষে তা সর্বোচ্চ হতে পারে।

তীব্র গরমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন অঙ্গরাজ্য হলো অ্যারিজোনা। জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) অ্যারিজোনার রাজধানী ফিনিক্সের তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির উপরে ছিল। টানা ১৫ দিন শহরটির তাপমাত্রা একপ্রকার অপরিবর্তত রয়েছে।

আরও পড়ুন: আলাস্কা উপদ্বীপে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প

Advertisement

ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালি বিশ্বের উষ্ণতম জায়গাগুলোর একটি। শনিবার দুপুরে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। রোববার (১৭ জুলাই) সেখানকার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ডেথ ভ্যালির তাপমাত্রার পারদ আজ ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) হতে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় বেশকিছু এলাকায় দাবানল দেখা দিয়েছে। তাই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দিনের বেলায় লোকজনকে বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পানসহ শরীর ঠান্ডা রাখতে করণীয় সব মেনে চলতে বলা হয়েছে।

এদিকে, কানাডিয়ান সরকার বলেছে, দাবানলের কারণে চলতি বছরেই এক কোটি হেক্টর এলাকা পুড়ে গেছে। তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকায় দাবানল দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউজের জলবায়ু নীতি উপদেষ্টা হান্না সাফোর্ড আল জাজিরাকে বলেছেন, নিম্ন আয়ের সম্প্রদায়গুলো তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাদের অনেককেই বাইরে কাজ করতে হয় ও বাড়িতে এসি নেই। তাই আমরা নিম্ন আয়ের এসব সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছি।

Advertisement

ইতালিতে রেড অ্যালার্ট

রোম, বোলোগনা ও ফ্লোরেন্সসহ ১৬টি শহরের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি এও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে, এ সপ্তাহের শেষে ইতালির তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।

দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবারের মধ্যে রোমের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পৌঁছাবে। আর মঙ্গলবার সে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছুতে পারে, যা ২০০৭ সালের আগস্টে সেট করা রেকর্ড ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ভেঙে ফেলবে৷ তাই নাগরিকদের সর্বকালের সবচেয়ে তীব্র তাপপ্রবাহের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফেলে দেওয়া পিৎজার টুকরা থেকে মিললো দুর্ধর্ষ খুনির সন্ধান

এদিকে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি সতর্ক করে বলেছে সিসিলি ও সার্ডিনিয়া দ্বীপপুঞ্জের তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১১৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠেতে পারে। এটি ইউরোপে রেকর্ড করা সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা হতে যাচ্ছে ও এর ফলে ওই অঞ্চলের জলাশয়গুলো ‍শুকিয়ে যেতে পারে।

তীব্র গরমে বন্ধ গ্রিসের অ্যাক্রোপোলিস, খরার ফলে বিপাকে ফরাসি খামারিরা

এদিকে টানা তৃতীয় দিনের মতো তীব্র গরম পড়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে গ্রিসের আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা অ্যাথেনস অ্যাক্রোপোলিস। দেশটির কিছু অংশে শনিবার (১৫ জুলাই) ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করাহয়। আর শুক্রবার (১৪ জুলাই) থিবসের কেন্দ্রীয় শহরের তাপমাত্রা ছিল ৪৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ফ্রান্সে উচ্চ তাপমাত্রা আর খরার কারণে বিপাকে পড়েছেন খামার ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি সামলানোর পদক্ষেপ না নিয়ে বিষয়টিকে গ্রীষ্মকালীন স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলে উল্লেখ ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়েছেন ফরাসি কৃষিমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: মোগল আমলের স্মৃতি ফেরালো ক্রুদ্ধ যমুনা

ফ্রান্সের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা বলছে, গত মঙ্গলবার থেকে ফ্রান্সের কয়েকটি এলাকায় দাবদাহজনিত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশটির ইতিহাসে গত জুন ছিল দ্বিতীয় উষ্ণতম মাস।

শনিবার স্পেনের আবহাওয়া দপ্তর জানায়, রোববার (১৬ জুলাই) থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত নতুন তাপপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। এসময় ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ ও আন্দালুসিয়া অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে।

রোববার ও সোমবার (১৭ জুলাই) জাপানের পূর্বাঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। দেশটির আবহাওয়া সংস্থা বলছে, এবারের তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন: গরমে নাকাল ইউরোপ, মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

আফ্রিকার দেশ মরক্কোতেও সম্প্রতি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি তাপমাত্রা দেখা গেছে। দেশটির কিছু প্রদেশে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া দপ্তর বলছে, চলতি মাসের চেয়ে আগামী মাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এরই মধ্যে দেশটিতে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

দাবদাহের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানের আজলুন জঙ্গলে দাবানল দেখা দেয়। দেশটির সেনাবাহিনী বলেছে, পানিসংকটে থাকা জর্ডানকে ওই দাবানল নেভাতে ২১৪ টন পানি ব্যবহার করতে হয়েছে।

একই অবস্থা ইরাকেও। জ্বলন্ত গ্রীষ্মকালের পাশাপাশি দেশটিতে চরম লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। জানা যায়, দেশটির তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে পৌঁছেছে।

আরও পড়ুন: সাগরের তলদেশে কনসার্ট

উইসাম আবেদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, টাইগ্রিস নদীতে সাঁতার কেটে নৃশংস গরম থেকে বেঁচে থাকছেন। তবে তীব্র গরমে ইরাকের নদীগুলো যেমন শুকিয়ে যাচ্ছে, তেমনি পুরোনো বিনোদনও কমে যাচ্ছে।

 

সূত্র: আল জাজিরা

এসএএইচ